Writing

পালিয়ে বেড়ানো জীবন

এক.
আমার ফ্রেন্ড সার্কেল এবং ভাই ব্রাদার্সদের মাঝে এমন কিছু পাবলিক আছে যারা উপর থেকে দেখায় তারা অনেক ভালো কিছু। প্রেম ভালোবাসা এগুলোর ধারের কাছে ও যায় না। কিন্তু তারা গোপনে ঠিক এসব করে বেড়ায়। যখন সামনাসামনি পড়ে যায় তখন প্রেমিক প্রেমিকা দুজন দুদিকে চলে যায়, যেনো কেউ কাউকে চিনে না। তাদের ব্যবহার এমন যে লোকজন দেখে ফেললে তাদের সম্মান চলে যাবে, বাট আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এর কাছে যে সম্মান চলে যাচ্ছে সেটা তারা বুঝে না। আল্লাহর নাফরমানি করাতে তারা দুনিয়ার মানুষকে ভয় পায় কিন্তু আল্লাহকে ভয় পায় না। তারা মনে করে দুনিয়ার মানুষ তাদের দেখছে বাট ভুলে যায় আল্লাহ তাদের দেখছেন।

একদল আছে যারা বলে, ‘তারা কি তাদের থেকে উত্তম নয় যারা প্রেম করে ওপেনলি সবকিছু করে বেড়ায়? আমরা ত আর ওপেনলি সবকিছু করি না?’
তাদের জন্য আমার উত্তর — ‘যেটা হারাম যেটা সর্বাবস্থায় হারাম। হোক সেটা গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে। হারামের সাথে কোন তুলনা চলে না। যেটা প্রকাশ্যে করলে বেশি হারাম আর গোপনে করলে অল্প হারাম, এমন মূলনীতি ইসলামে নেই।’

দুই.
আরেকদল আছে যারা বলে — ‘কুরআনে ত প্রেম করা হারাম এটা বলা হয় নাই বরং যিনার ধারের কাছে যেতে না করা হয়েছে, আমরা ত আর যিনা করছি না?’ তাদের জন্য নিচের হাদিসটি আশা করি যথেষ্ট হবে — “চোখের যিনা হলো দেখা, জিহ্বার যিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা, হাতের যিনা স্পর্শ করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।”

হাদিসের মূল বক্তব্য আমাদের ছানিপড়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা যেই কাজগুলো হরহামেশাই করে যাচ্ছি তা যিনা ছাড়া অন্য কিছু নয়! আল্লামা খাত্তাবী রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন— “দেখা ও কথা বলাকে যিনা বলার কারণ এই যে, দুটোই হচ্ছে প্রকৃত যিনার ভূমিকা; যিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহ্বা হচ্ছে বাণীবাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার, সত্য প্রমাণকারী।”
এবার আপনার কাছে আমার প্রশ্ন —‘প্রেম করার সময় এগুলোর কোনটা কি বাকী থাকে? সবকিছু কি হয়ে যায় না।’

তিন.
এখন আবার আপনি বলতে পারেন, — ‘এমন ওতো হতে পারে আমরা বিয়ে করে ফেলেছি, না জেনে কারো সম্পর্কে মন্তব্য করা কি ঠিক?’ আপনি যদি বিয়ে করেই থাকেন তাহলে আপনার ফ্রেন্ডদের সামনে পড়লে দুজন দুদিকে দৌড় মারেন কেন? বিষয়টা এমন যে — ‘আজ দুজনের দুটি পথ দুদিকে চলে গেছে।’ ভাই আপনি বিয়ে করলে সরাসরি বলবেন যে এটা আমার বিয়ে করা বউ, আর এটাই প্রকৃত পুরুষের উদাহরণ। একদিকে আপনি বলবেন যে এর সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই, বলতে গেলে এমন একটা ভাব নেন যে আমি ওকে কোনদিনই দেখি নাই। আবার কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে বলেন কারো সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করবে না। এটা সম্পূর্ণ হাস্যকর!

আপনি যার সাথে প্রেম করছেন সে বোরখা, হিজাবে আবৃত এক মহামানবী। আপনার কাছে মনে হয় সে দ্বীনের অনেক বড় কান্ডারি। বাট আমি বলব সে হতভাগা এক নারী। তার মাঝে তাকওয়া নেই। কেননা তাকওয়া সম্পূর্ণ কোন নারী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়াবে না। যে নারী ভয় পায় তার ফ্রেন্ডরা তাকে দেখে ফেলবে বাট আল্লাহ যে তাকে দেখছেন সেটা ভুলে যায় সে কি করে তাকওয়াবান হতে পারে? এটা কি কোন জীবন যে আপনি সবসময় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, এই কেউ আবার দেখে ফেলত না ত? ফ্রেন্ডদের ভয় সবসময় আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আর কতো এবার এই ইঁদুর-দৌড়ের জীবন থেকে বেরিয়ে আসুন।

সর্বশেষ বলব মানুষকে ভয় না পেয়ে আল্লাহকে ভয় পান, এটাই প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়। আর আল্লাহর ভয়ই পারে সব ধরনের পাপাচার থেকে মুক্তির পথ দেখাতে। পালিয়ে বেড়ানো জীবনই কি মর্যাদার জীবন? বরং গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা কিংবা গুনাহ থেকে পালিয়ে বেড়ানোই প্রকৃত জীবন!

লিখেছেন

নেওয়াজ আরিফ

আমি এক মুসাফির, অল্প কিছু দিনের ভ্রমণে এসেছি এই ধরায়, সময় ফুরিয়ে গেলে চলে যাবো আপন ঠিকানায়…
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture