Writing

নিরানব্বই ভাগ দয়া

‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাকে নিজ হাতে গড়ে কিভাবে তাদেরকে আগুনে ফেলবেন? আল্লাহর দয়া হবে না?’
হঠাৎ এমন কথায় তিন্নি বিস্মিত হলো। আড়চোখে একবার সাত বছরের মেয়ে আতিকার দিকে তাকিয়ে আবারও রান্নায় মনোনিবেশ করলেন। এদিকে আতিকা প্রশ্নের উত্তরের বিনিময়ে মায়ের বিরক্তিকর চাহনি দেখে নিজের রুমে চলে গেলো।

তিন্নি রান্নার কাজ শেষ করে মেয়ের রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো আতিকা আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে কিছু ভাবছে। তিন্নি মাঝে মাঝে তার ছোট্ট মেয়েটাকে দেখে নির্বাক হয়ে যায়। এত ছোট একটি মেয়ে কি করে এত গভীরভাবে ভাবতে পারে!

তিন্নি আতিকার পাশে এসে দাঁড়াতেই আতিকা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আম্মু, আমি আগুনে জ্বলতে চাই না।’

তিন্নি হেসে বলল, ‘কী হয়েছে আমার আম্মুটার?’

‘আম্মু আজ ওস্তাদজী ক্লাসে বলেছে যারা দুনিয়াতে পাপকাজ করবে তাদেরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে জ্বালানো হবে। এজন্য আমি তখনই ভেবে নিয়েছিলাম আমি দুনিয়ার সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকব, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন বারবার উঁকি দিচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নাকি আমাদের ভালোবেসে সবচেয়ে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে তিঁনি কি করে তাঁর বান্দাকে আগুনে ফেলবেন? তাঁর দয়া হবে না একটুও?’

পিচ্চি মেয়ের মুখে এত বড় কথা শুনে তিন্নি একটু হাসল। আতিকাকে টেনে কোলে বসিয়ে বলল, ‘আতিকা, তোমার ছোট বোন যদি প্রথমদিন কেনো ভুল করে তখন তুমি তাকে মাফ করে দিবে। একই ভুল বারবার করতে থাকলে তুমি তাকে অবশ্যই শাস্তি দিবে। রক্তের বোন বলে তাকে মাফ করে দিবে না। এটাই নিয়ম।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টির শুরু থেকেই তাঁর বান্দাদের জন্য একজন করে পথপ্রদর্শক পাঠাতেন। যাতে তাঁর বান্দারা তাঁকে ভুলে না যায়। এই একজন পথপ্রদর্শক সকলকে দাওয়াহ দিতেন। কিন্তু সকলে ঐ লোককে তিরস্কার করত, বিভিন্নভাবে আঘাত করার চেষ্টা করত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কথা সবাইকে বললে সবাই ঐ লোককে গাগল বলে অবজ্ঞা করত। এখনও অনেক মানুষ আছে যারা দায়ী ইল্লাল্লাহদেরকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। ইসলামকে সেকেলে মনে করে। এত কিছুর পরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবাইকে পুনঃপুন পরিবর্তনের সময় দেন। দ্বীনকে আকড়ে ধরার সুযোগ দেন। কিন্তু তারপরেও আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নাফরমান বান্দা দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই। তাঁরই দুনিয়ায় থেকে প্রতিনিয়ত তাঁরই অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকি। এজন্য কি পাপী বান্দাদের শাস্তি হওয়া উচিত না আতিকা?’

আতিকা মায়ের দিয়ে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। অতঃপর বলল, ‘আম্মু, আমি ভালো মানুষ হতে চাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যাতে আমার প্রতি দয়া হয়।’

তিন্নি হেসে মেয়েকে বলল, ‘হাদিসে এসেছে,

‘আল্লাহ তাঁর দয়াকে একশ ভাগ করেছেন, তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।’ আর পৃথিবীতে একভাগ নাযিল করেছেন। এই এক ভাগের কারনেই তাঁর সৃষ্টিগুলো একে অন্যের উপর দয়া করে।

“বুখারী:৬০০০, মুসলিম:২৭৫২”

আতিকা, আমাদের অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়ার আশা করতে হবে। দোয়া করতে হবে যে, ইয়া রব! তোমার দয়া থেকে আমাকে বঞ্চিত করোনা। বঞ্চিত করলে আমি অসহায় হয়ে পড়ব।’

তিন্নির কথা শেষ হতে না হতেই আতিকা জোরে আমিন বলে উঠল। আর বলল, ‘আম্মু, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট এই বলে দোয়া করব তিঁনি যেনো তাঁর নিবানব্বই ভাগ দয়া থেকে একটু দয়া আমাকে দেন।’ বলেই দাঁত বের করে হাসল।

তিন্নি তার এক টুকরো জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। মুচকি হাসি!

লিখেছেন

আমাতুল্লাহ সিহিন্তা

প্রত্যেক মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করা আমার ইমানি দায়িত্ব। এজন্যই ইসলামিক গল্প টুকটাক লিখালিখি করি।
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture