Writing

আপনি আমি দাইয়্যুস নইতো

এক ভয়ংকর আগুনের কুন্ডলীতে দাঁড়িয়ে আছে আমার বাবা। হ্যাঁ তিনি আমারই বাবা। আমি সামান্য এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু নাহ। এগিয়ে যেতে পারলাম না। কি প্রচন্ড তাপ! হায় এ আগুনের তাপ যে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তুর গুন বেশি। এ অসহ্য তাপ কি করে সহ্য করছে আমার বাবা! আমি আবারও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এবারেও ব্যর্থ হলাম। এ অসহ্য তাপের আশেপাশে যাওয়াও যে দুষ্কর।

আমি আমার বাবার গগনবিদারী চিৎকার শুনতে পেলাম। কি অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে আমার বাবা। হায় এ চিৎকার যে আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
আমি নিজেও আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কতো দূরে দাঁড়িয়ে আছি তবুও এই উত্তপ্ত হাওয়া আর সহ্য করতে পারছি না। হঠাৎ দেখলাম আমার বাবা আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে যাচ্ছে এক ছায়ার দিকে। একটুখানি দাঁড়িয়ে গেলাম। তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু এ যে এক গভীর ধোয়া। এ ধোয়ার ছায়ায় যে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার কোনো উপায় নেই।

বাবা ফিরে এলেন। সেই উত্তপ্ত আগুনে গলে গলে পড়ছে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তিনি জ্ঞান হারানোর আগে পানি পানি করে চিৎকার করতে লাগলেন। তাকে দেয়া হলো টগবগে ফুটন্ত পানি। যে পানির নাম হামীম। তিনি জ্ঞান হারালেন। আমি চারিদিকে সম্মিলিত ধ্বনি শুনতে পেলাম – দাইয়্যুস দাইয়্যুস দাইয়্যুস।
এ ধ্বনিতে আমার কান ফেটে যেতে চাচ্ছিলো। আমি কান চেপে বসে পড়লাম। কিন্তু তবুও সেই আওয়াজ কানে আসছে। দাইয়্যুস দাইয়্যুস দাইয়্যুস।

তারপর হঠাৎ আওয়াজটা ধিরে ধিরে ক্ষীণ হয়ে আসলো এবং আমার ঘুম ভেঙে গেলো। ভয়ে থরথর করে কাপছি আমি। এ কেমন স্বপ্ন দেখলাম! এ কেমন ভয়ংকর স্বপ্ন। দরদর করে ঘামছি এখনো।
দাইয়্যুস!
কি এই শব্দ? কিই বা এর মানে?

এক মূহুর্ত দেরি না করে গুগল সার্চ করলাম।
দেখলাম, দাইয়্যুস অই ব্যক্তিকে বলা হয়, যার স্ত্রী, কন্যা বেপর্দায় চলাফেরা করে অথচ সে এ ব্যাপারে কিছুই বলে না। উদাসীন থাকে। দেখেও না দেখার ভান করে।
তবে কি আমার বাবা দাইয়্যুস? হ্যাঁ তাই তো। আমি সহ আমার পুরো পরিবার বেপর্দায় চললেও আমার বাবা তো আমাদের এসব থেকে বিরত থাকতে বলে না। উলটো দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। বরং আমাদের পরিবারের মেয়েদের স্বাধীনতা দিয়েছে বলে সে গর্বিত।

আরও একটা হাদিস দেখলাম,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্যে আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন- নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়্যুস।
(মুসনাদে আহমাদ- ৫৮৩৯)

তার মানে তো আমার বাবা জাহান্নামির কাতারে নিজের নাম লিখিয়েছেন। আর সেটাই আমি স্বপ্নে দেখেছি। ইস কি ভয়ংকর স্বপ্ন! এখনো ভয়ে থরথর করে কাঁপছি আমি।
স্বপ্নটা চোখের সামনে ভাসছে আমার। নিজের বাবার যে করুণ পরিনতির কিঞ্চিৎ ছায়া আমি দেখেছি তা দেখেই ভয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। তাহলে আল্লাহ না করুক সত্যিই যদি আমার বাবা জাহান্নামি হয় তাহলে কি কঠিন আজাব সহ্য করতে হবে আমার বাবাকে। আর তার কারণ হবো আমি।

কি ভয়ানক কথা। আমি হবো আমার বাবার জাহান্নামের কারণ?
অথচ এই বাবাকে আমি কতইনা ভালবাসি। কেউ আমার বাবাকে এতোটুকু অপমানিত করলে তার কলিজা ছিড়ে নিতে চাই। বাবার সামান্য কষ্টও যেখানে সহ্য করতে পারিনা। সেই আমি কিনা হবো আমার বাবার চিরস্থায়ী কষ্টের কারণ!

না না। এ কখনোই হতে পারে না। এ স্বপ্ন নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য সতর্কবার্তা। নিশ্চয়ই আমার রব চেয়েছেন আমি দ্বীনের পথে চলি। তাই তো তিনি আমাকে এ স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

স্বপ্নটা দেখার পর এতোক্ষণ ভয়ে আর কষ্টে কাঁদছিলাম ডুকরে ডুকরে। এখনো কাঁদছি। কিন্তু এখন কাঁদছি সুখে। আমার রব তার এই অধম বান্দাকে বেছে নিয়েছেন তার পথে। এতো সৌভাগ্য আমার? সত্যিই কি এর যোগ্য আমি? কৃতজ্ঞতায় বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ।

তাই প্রতিজ্ঞা করলাম, আর নয় অশ্লীলতা, আর নয় বেপর্দায় চলা। পর্দা মেনে দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা শুরু হোক আজ থেকেই ইং শা আল্লহ।
জানি অনেক ঝড়-ঝাপটা সহ্য করতে হবে। পরিবার থেকেও হয়তো সাপোর্ট পাব না। কিন্তু আমাকে যে পারতেই হবে। এগিয়ে যেতেই হবে ইং শা আল্লহ। আমি যে আমার পরিবারকে বড্ড ভালবাসি।
আমি যে আমার বাবাকে বড্ড ভালবাসি।

নিজের অপকর্মের জন্য বাবাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে দেখি কি করে?

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button