Writing

নাপিত পেশায় মুসলিমরা কেন যায় না

আজ চুল কাটতে গিয়ে নাপিতকে জিজ্ঞেস করলাম, “প্রতিদিন আনুমানিক কতোজনের চুল কাটেন?
নাপিতের উত্তর থেকে যা বুঝলাম, মাসে তার উপার্জন আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা। ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল এসব বাদ দিলে মাসে মোটামুটি ৬০ হাজার টাকা তার মুনাফা।

তার দোকানে আর কোনো কর্মচারী নাই। বাড়তি খরচ নাই। দোকানের পাশেই রাতে ঘুমান, কেনা খাবার খান। মাসে ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িতে দিতে পারেন, ব্যাংকে রাখতে পারেন।

গ্রামাঞ্চলে বা শহরের সেলুনে গেলে দেখবেন প্রায় ৯৯% সেলুন হিন্দুদের। মুসলিমদের পরিচালিত সেলুন পেয়েছি, তবে তা হাজারে দশটা!

আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য অংশ জীবিকার অন্বেষনে বিদেশ যেতে চায়, গার্মেন্টসে, বিভিন্ন কোম্পানির নিচের পোস্টে কোনোরকম একটা চাকরি করতে চায়।

দুবাই, সৌদি আরব, বাহরাইন এসব দেশে যেসব শ্রমিকরা যায়, তারা গিয়ে কী করে?
কেউ ক্লিনারের কাজ করে, কেউ কিচেনে সবজি কাটে, কেউ রাজমিস্ত্রীর কাজ করে।

দেশের সবাই নাপিত হবে, এমন না। সবাই নাপিত হলেই যে ৫০ হাজার প্রফিট করতে পারবে এমনও না। কিন্তু, দেশে থাকাবস্থায় এসব ‘অড’ জবকে তারা খুবই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। তারা বলে,
“আরে নাপিত হলে লোকে কী বলবে?
মান-ইজ্জত আছে না?”

অথচ সেই লোকগুলোই বিদেশে গিয়ে খুব খুব কষ্ট করে তারচেয়েও খারাপ জব করে। অনেকেই মা-বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনেও দেখতে আসতে পারে না। অনেকেই বিয়ের পর বিদেশ যায়, ৩-৪ বছর দেশে ফিরে। কী করুণ জীবন! মাতৃস্নেহ, পিতৃশাসন, স্ত্রীর ভালোবাসা, সন্তানকে আদর করা থেকে তারা বঞ্চিত হয়।

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে স্টাডি হয় না। নতুবা দেখতেন যারা নিজে সেলুন দেয়, নিজেই নাপিত তাদের ১০ বছরের প্রফিট কতো। সমস্যা হলো, এই শ্রেণীর মানুষগুলো অর্থের সঠিক ব্যবহার জানে না বলেই ১০ বছর পর একই জায়গায় থাকে।

আর যারা জানে, তারা ঠিকই ‘ধনী‘ হতে পারে। ঢাকা শহরের এমন অনেক বাড়িওয়ালা আছে, যার ৩-৪ টি বাড়ি আছে; যে কিনা ২০ বছর আগে নাপিত ছিলো।

নাপিত পেশায় মুসলিমরা কেনো যায় না?
যারা শ্রমিক হতে চায়, কোনো রকম ভিসা পেলে দেশ ছেড়ে গিয়ে ঝাড়ুদার হতে চায়, তারা কেনো দেশে থাকতে নাপিত হতে পারে না?

এই পেশাকে কেনো একচ্ছত্রভাবে হিন্দুদের পেশা মনে করি আমরা?
আমি খুঁজতে লাগলাম, মুসলিম ইতিহাসে এমন কোনো আলেম ছিলেন কি-না যিনি পেশায় ছিলেন নাপিত। পেয়েও গেলাম কয়েকজনকে।

আবু জাফর মুযায়্যিন কাবির রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন মক্কার একজন আলেম। পেশায় ছিলেন একজন নাপিত।
আবুল হাসিন আলী নামে জুনায়েদ বাগদাদির একজন ছাত্র ছিলেন নাপিত।
আবু ইউসুফ ইয়াকুব নামের একজন আলেম পেশায় ছিলেন নাপিত।

অর্ধশিক্ষিত বা পড়ালেখা করেননি এই শ্রেণীর লোকজনের জন্য চুল কাটা শেখা একটা স্কিল হতে পারে।

বর্তমানে অনেক শিক্ষিত তরুণও ‘আধুনিক সেলুন‘ দিচ্ছে।

আমি/আপনি হয়তো নাপিত হবো না বা আমাদের ইচ্ছে নেই। কিন্তু, একজন মুসলিম হিসেবে আসুন এই পেশাকে অবজ্ঞা না করি। আমাদের পরিচিত কেউ যদি হালাল উপার্জনের অন্বেষণে বেকার বসে না থেকে নাপিত হতে চায়, তাকে যেন হেয় প্রতিপন্ন না করি।

অনেকেই বলছেন নাপিতের অন্যতম উপার্জন দাড়ি কাটা, সেইভ করা।
একজন নাপিত দাড়ি কাটে না, এটাও একটা দাওয়াত, এটাও একটা মার্কেটিং।

শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য স্পেশাল সেলুন দেখুন তো আপনার এলাকায় আছে কিনা।
যেখানে-
দাড়ি কাটা হয় না,
গান-বাজনা নেই,
দোকানে মেয়েদের ছবি নেই, অভিনেতাদের ছবি নেই।

এরকম মুসলিমবান্ধব সেলুন পাওয়াই যায় না। অথচ সেলুনে যারা চুল কাটে, সবাই মুসলিম।
সেক্ষেত্রে এটাও একটা বিজনেস আইডিয়া হতে পারে। মুসলিম বান্ধব সেলুন। বিজনেস এবং দাওয়াত দুটোই হলো।
ব্যবসায়ী মুসলিম মানেই দাঈ মুসলিম। পৃথিবীর নানান প্রান্তে ইসলাম পৌঁছেছে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই।

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture