Writing

বন্ধুদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগলে করণীয়

তোমার বন্ধুদের কারো মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখে তুমি মনে মনে হেসে এটা বলো না যে, ভালোই হয়েছে, ওদের মধ্যে এবার লেগেছে। এই চিন্তা মুনাফিকদের চিন্তা,হিংসুকদের কথা। তোমার পরিচিত কারো মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখলে তুমি বসে না থেকে অবশ্যই মিটমাট করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা তোমার নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা দয়া প্রাপ্ত হও।
[সূরা আল হুজুরাত: ১০]

মনে করো, তোমার দুই বন্ধু আব্দুল্লাহ ও সিয়ামের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তারা একজন আরেকজনের শত্রু। কেউ কারো সাথে কথা বলে না। এখন তুমি চেয়ে চেয়ে না দেখে তাদের দ্বন্দ্ব মেটানোর লক্ষ্যে তাদের একজন আব্দুল্লার কাছে গিয়ে বলবে, এই আব্দুল্লাহ! তোর সাথে সিয়ামের দ্বন্দ্ব থাকার পরও সে তোর ব্যাপারে যা যা বলেছে তাতে আমি অবাক হয়েছি। সে নিশ্চয়ই আগ্রহ ভরা মন নিয়ে জানতে চাইবে, সে আবার কী বলেছে?

তখন তুমি বলতে পারো, সে তোর এই এই প্রশংসা করেছে, তোর খোঁজখবর নিয়েছে। এভাবে তোমার চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে বানিয়ে বানিয়ে তার সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক কথা বলবে। তবে কোনোভাবেই সীমালঙ্ঘন করবে না। একইভাবে, সিয়ামের কাছে গিয়েও বলবে যে, তার শত্রু আব্দুল্লাহ তার সম্পর্কে ভালো কথা বলেছে, তার প্রশংসা করেছে। তখন দেখবে আল্লাহর রহমতে উভয় পক্ষ একে অপরের প্রতি আস্তে আস্তে দূর্বল হতে শুরু করেছে। ফলশ্রুতিতে, তাদের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি হবে যা দ্বন্দ্ব মেটাতে খুবই কার্যকর। আর একটা পর্যায়ে গিয়ে তুমি তাদেরকে মিল করিয়ে দিবে। এভাবেই তাদের দ্বন্দ্বের আগুনে পেট্রোল ঢালার পরিবর্তে পানি ঢেলে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নিজ সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা অব্যহত রাখবে, কেমন?

একইসাথে, আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করতে থাকবে যে, ও আমাদের রব! আমার এই বন্ধুদের তুমি মিল করিয়ে দাও। মাবুদ গো! তুমি রব মিল করিয়ে না দিলে আমি কিছুই করতে পারবো না। তাদের দ্বন্দ্ব দেখে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। বুঝলে! এভাবে বললে তুমি মনে শান্তি পাবে, শান্তি। এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য প্রাথমিক এক পুরস্কার বটে।

এবার নিশ্চয়ই ভাবছো, এভাবে বললে তো মিথ্যা বলা হয়ে যাবে -তাই না? নাহ, মিথ্যা বলা হবে না।ইসলাম কারো দ্বন্দ্ব মেটানোর বিষয় এতটাই গুরুত্বের চোখে দেখে যে, সাধারণভাবে মিথ্যা বলা একটি সাংঘাতিক কবিরা গোনাহ হওয়া সত্ত্বেও কিছু মিথ্যা কথা বলা যদি কোনো দ্বন্দ্বের অবসানের কারণ হয় তবে সেটাকে জায়েজ রেখেছে। সুবহান’আল্লাহ! এটাও ইসলামের অনেক বড়ো এক সৌন্দর্য। এমন সৌন্দর্যের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তিনটি স্থানে মিথ্যা বলা জায়েজ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে কারো দ্বন্দ্ব মিটানোর ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যায়।
[আবু দাঊদ হাদীস নং:৪৯২১]

আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে আন্তরিক চেষ্টা থাকা উচিত, অন্তত আমাদের জানাশুনা কেউ যেনো কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত না থাকে। কারো কোনো বিরোধ লেগে থাকলে যেভাবেই হোক তাদের বিরোধ মীমাংসা করে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। অন্তত আন্তরিক চেষ্টার জায়গায় যেনো কোনো ত্রুটি না থাকে। বিশ্বাস করো, কারো বিরোধ মীমাংসা করে দিলে আল্লাহ মানুষের চোখে তোমার সম্মান বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন যা তুমি কল্পনাই করতে পারবে না। অতএব আর দেরি না করে চিন্তা করে দেখো তো, তোমার জানাশোনা কার কার মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে আছে হোক তারা তোমার বন্ধু কিংবা আত্নীয়। যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে আছে তুমি এখন থেকেই স্টেপ নেওয়া শুরু করো।

লিখেছেন

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture