Writing

প্রোফাইল পিকচার না রাখা এক বন্ধুর জবাব

ছুটির দিন থাকায় হাসান তার বাল্য বন্ধু জামিলের বাসায় বেড়াতে গেলো। সেখানে গিয়ে ড্রয়িং রুমে সে তাদেরই আরেক বন্ধু মারুফকে দেখতে পেলো। কিছুক্ষণ একসাথে কথা বলার পর মারুফ তার মোবাইল বের করে স্ক্রলিং করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো যেনো সে কিছু একটা করছে। এদিকে জামিল তার বন্ধুদের জন্য এতোক্ষণে কিচেন থেকে নোডলস নিয়ে এসেছে। মারুফকে মোবাইল স্ক্রলিং এ ব্যস্ত দেখে তাকে মোবাইল রেখে নোডলস খাওয়ার কথা বলে তারা দু’জন একসাথে খেতে খেতে আলাপের এক পর্যায়ে জামিল বলে উঠলো,
কী রে হাসান, অনেক দিন ধরেই তোর প্রোফাইল পিকচার দেখছি না যে?তা কী হয়েছে? কোনো সমস্যা নাকি?

–হ্যাঁ,সমস্যা তো বটেই!
–কী এমন সমস্যা! আগে যেখানে তুই প্রতি সপ্তাহে প্রোফাইল পিকচার চেইঞ্জ করতি,নতুন নতুন ছবি আপলোড দিতে সেখানে এখন মাসের পার মাস এমনকি বছর হতে চলছে একটি ছবি পর্যন্ত আপলোড দিস নি। তাছাড়া, সুন্দর সুন্দর স্থানে গিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকা সেই তুই এখন আর আগের মতো নেই। কেনো রে তোর মধ্যে হঠাৎ এমন পরিবর্তন? কী এমন হয়েছে তোর, শুনি?
–দেখ বন্ধু জামিল,এতোদিন আমি পথভ্রষ্ট হয়ে চলছিলাম। এখন আমি আল্লাহর রহমতে সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছি,বুঝতে পেরেছি জীবনের আসল মানে কী। তাই আমি পূর্বে যা করেছিলাম তার জন্য অনুতপ্ত। এখন আমি চাই এমন জীবন গড়তে যে জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আমাকে জান্নাতমুখী করে তুলবে। সেজন্য আমি নিজেকে দ্বীন চর্চায় রেখে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করে চলছি।
একজন মুসলিম হিসেবে আমার প্রতিটি কাজ আখিরাতকে কেন্দ্র করে করা উচিত। দুনিয়াতে আমার এমন কোনো কাজ করা কিংবা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয় যে কাজ আমার চিরস্থায়ী জিন্দেগী তথা আখিরাতের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলে এবং আখিরাতে সফলদের কাঁতারে থাকা থেকে বঞ্চিত রাখে।

–তা বুঝলাম! কিন্তু আখিরাতের সাথে ফেইসবুকের প্রোফাইলের সম্পর্ক কী?
–অবশ্যই! আখিরাতের সাথে অন্যান্য বিষয়ের মতো প্রোফাইল পিকচারেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
দুজনের কথার মাঝখানে পাশে বসে এতোক্ষণ ধরে মোবাইলে স্ক্রলিং করতে থাকা মারুফ জামিলের দিকে লক্ষ্য করে তার মোবাইল দেখিয়ে বলল, এই দেখ, দোস্ত! কি সুন্দর না মেয়েটার ছবি? চোখদুটো কি টানাটানা রে! উফ! প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়ে গেলাম। এমন সুন্দরীমাখা ছবি সেইভ করে না রাখলে কি আর হয়, বল!

জামিল তার দিকে চোখদ্বয় বড়ো করে তাকিয়ে বলল, আরে! তুই আবার মেয়েটির প্রোফাইল পিকচার দেখছিস কেনো? এটা তো ঠিক না দোস্ত। তুই কেনো একজন মেয়ের প্রোফাইল দেখতি যাবি?এছাড়া,ছবি সেইভ করে রাখা সে তো আরও ভারী অন্যায়।তুই কি শুনছিস না আমরা কী নিয়ে আলোচনা করছি?এদিকে তোর নুডলস যে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সে খবর কি আছে?
মোবাইল পকেটে রেখে মারুফ বলল, ও হ্যাঁ, খাচ্ছি রে। ভাবলাম, ফেইসবুকে একটু ঢু মেরে আসি। আর তাতেই মেয়েটির ছবি চোখের সামনে চলে আসলো। যাইহোক, তোরা যেন কী নিয়ে কথা বলছিস, শুনি।

অতঃপর তাদের আলোচনা শুনতে সেও এবার মনোযোগী হয়ে উঠলো।আর জামিল সেই প্রসঙ্গ থেকে ফিরে হাসানকে বলল,হ্যাঁ!বন্ধু,আমরা যে প্রসঙ্গে ছিলাম।
হাসান বলল,দেখ বন্ধু জামিল,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্য যে কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে ফেইসবুকে নিজের প্রোফাইল পিকচার রাখা সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর।কেননা যেখানে অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমাদের প্রোফাইল পিকচার স্থির থাকে সেখানে ফেইসবুকে রাখা আমাদের প্রত্যেকের প্রোফাইল পিকচার “People You May Know” নামক ফিচারটির মাধ্যমে দেশ বিদেশ প্রায় প্রত্যেক ফেইসবুক ব্যবহারকারীর নিকট প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খাচ্ছে।আর এতে করে অনেক গায়েরে মাহরামদের নিকট আমাদের ছবি পৌঁছাচ্ছে। যার ফলে আমাদের ছবি দেখে তাদের কেউ কেউ হয়তো চোখের যিনা করছে, বাজে চিন্তা করে মনের যিনা করছে ইত্যাদি আর কতকি।ও ভালো কথা,মাহরাম কী সেটা তোর জানা আছে তো?অবশ্য, তোর মতো মাদ্রসায় পড়ুয়া ছাত্রদের তো এসব জানারই কথা।

–হ্যাঁ,এগুলো আমার জানা আছে।মাহরাম হচ্ছে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম। অর্থাৎ যাদের সাথে পর্দা করতে হয় না। পক্ষান্তরে, গায়েরে মাহরাম হচ্ছে তার বিপরীত।
–এই তো ঠিক বলেছিস, জামিল। এ ব্যাপারে সূরা আন নেসার ২৩ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা আছে।যাইহোক, যেমনটা বলছিলাম যে,ঐ ফিচারটির মাধ্যমে আমাদের প্রোফাইল পিকচার ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের নিকট সবসময় ঘুরপাক খাওয়ায় প্রতিনিয়তই এসব প্রোফাইল পিকচারের দিকে অনেক গায়েরে মাহরামের নজর পড়ছে। ফলে তাদের বেশীরভাগই চক্ষু হেফাজত করতে পারছেন না। ওগুলো চক্ষু হেফাজতে বাঁধা সৃষ্টি করছে। অথচ আমরা প্রোফাইল পিকচার না রাখলে অন্তত আমাদের ছবি থেকে তাদের কোনো গোনাহ করার সুযোগ থাকতো না। আর এতে আমাদেরও নিরাপদে থাকা হতো।

সাধারণত আমরা প্রোফাইল পিকচারে আকর্ষণীয় ছবি রাখি।ফলে অনেক সময় চাইলেও সেগুলোর নজর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। শয়তান ধোঁকায় ফেলেই দেয়।এই তো কিছুক্ষণ আগে আমাদের বন্ধু মারুফ তোকে একটি মেয়ের প্রোফাইল পিকচার দেখিয়ে নিজের ভালো লাগার কথা বলছিল।অথচ ঐ মেয়েটি যদি প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি না রাখতো তবে সে অন্তত ঐ ক্ষেত্রে চক্ষু হেফাজত করতে পারতো এবং চোখের যিনা থেকেও বাঁচতে পারতো। এছাড়া ঐ মেয়েকে নিয়ে সে কোনো বাজে চিন্তা করতে পারতো না, বাজে মন্তব্যও করতে পারতো না। আর তাতে সেও যেমন গোনাহগার হতো না তেমনি যিনি প্রোফাইল পিকচার রেখে এ ধরণের গোনাহের সুযোগ করে রেখেছেন তিনিও গোনাহগার হতেন না। ঠিক এই জিনিসটাই আমরা বুঝতে চাই না। এখানেই আমার যতো দুঃখ।

কথার মাঝখানে মারুফ আবারও বলে উঠলো,হ্যাঁ বন্ধু!আমি আসলে ঐ মেয়ের ছবি দেখতে চাই নি। ও আমার ফ্রেন্ড লিস্টেও নেই। হঠাৎ করে “People You May Know” এর মাধ্যমে কোত্থেকে যেন ছবিটি আমার চোখের সামনে চলে এলো।আর এতো সুন্দর মিষ্টিমাখা ছবি একটু না দেখলে কী আর হয় বল।সে তো আর কোনো বানর হনুমানকে দেখানোর জন্য তার ছবি রাখে নি বরং আমরা মানুষরাই যেন তার ছবি দেখি সেজন্যই তো সে তার ছবি প্রোফাইলে রেখেছে।তাই না!তাই একটু দেখে ফেললাম আরকি।
এবার হাসান একটু নড়েচড়ে বলল,দেখেছিস জামিল!আমি তোকে বলেছিলাম না। এভাবেই এই ফিচারটি না চাইতেই মানুষের দ্বারে দ্বারে আমাদের প্রোফাইল পিকচার নিয়ে হাজির হয়ে গোনাহের হাতছানি দেয়।

এখানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে যে, মারুফ এই ছবি সেইভ করে রাখার মাধ্যমে যিনা করার দরজা উন্মুক্ত করে রাখলো। সে হয়তো যখন তখন এই মেয়ের ছবি দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করবে, অনেক বাজে চিন্তা করবে যা মনের যিনার অন্তর্ভুক্ত। কে জানে, হয়তো ঐ মেয়ের ছবি তার মাস্টারবেশনের মতো জঘন্য কাজেরও বলি হতে পারে। আস্তাগফিরুল্লাহ!
আমি অবশ্য আমার বন্ধুর প্রতি সুধারণাই রাখি। কিন্তু অমন সম্ভাবনাকেও তো আর উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই না?এখন তার মতো আরও কতো মানুষজন যে এরকম প্রোফাইল পিকচার দেখে বা সেইভ করে কতো বাজে চিন্তা বা বাজে কাজ করে যাচ্ছে তার কি কোনো হিসেব আছে? এগুলো নিয়ে কি আমরা কখনো চিন্তা করছি?

পক্ষান্তরে, অনেক মেয়েরাও ছেলেদের সুন্দর সুন্দর প্রোফাইল ছবি দেখে ক্রাশ খাওয়া তথা চোখের যিনা করতে পারে।অন্তরে বাজে চিন্তাও আনতে পারে।ফলে প্রোফাইল পিকচারের মাধ্যমে যে বড়ো ধরণের গোনাহের দরজা খোলা রাখা হয়ে যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।এই তো,আমরা একটু আগেই মারুফের কথাতেই তা আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম।আর এভাবেই তার মতো আরও অনেক মানুষই যে প্রোফাইল পিকচার দিয়ে এরকম অহরহ গোনাহ করে যাচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই।কাজেই প্রোফাইল পিকচার না রাখা এই হিসেবে উত্তম যে,তাতে আর ঐ রকম কোনো গোনাহের দরজা খোলা থাকলো না।ফলে একদিকে যেমন নিজেকেও গোনাহ থেকে বাঁচা হবে অপরদিকে অন্যকেও গোনাহ থেকে বাঁচানো হবে যা পরোপকারের শামিল।

আবার যিনি প্রোফাইল পিকচারের মতো ভয়ঙ্কর গোনাহের দরজা খোলা রেখেছেন তিনি কিন্তু ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও গোনাহ কামাই করে নিচ্ছেন। কেননা তিনিই তো প্রোফাইলে নিজের আকর্ষণীয় ছবি রেখে অন্যেদের গোনাহ করার সুযোগ করে রেখেছেন যা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মারুফের মতো কারো না কারো নজরে তো পড়ছেই।হয়তো তার মতোই কেউ বাজে চিন্তা করে, বাজে কাজ করে যিনা করে ফেলছে।তাছাড়া, ‘People You May Know’ নামক ভয়ানক ফিচারটি তো রীতিমতো না চাইতেই সার্বক্ষণিক মানুষের দ্বারে দ্বারে আবেদনময়ী ছবিগুলো নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যা যিনার কাজে আরও সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
সুতরাং প্রোফাইল পিকচারের বিষয়টি যে গোনাহে জারিয়ার ভূমিকা পালন করে চলছে তা বলাই বাহুল্য।অথচ চাইলেই এসব থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই নফসের খায়েশ মেটাতে গিয়ে তা থেকে বিরত থাকতে চায় না বরং প্রদর্শনপ্রিয়তাই তাদের নিকট মুখ্য হয়ে উঠে। এমনকি বিভিন্ন লজিক খাটিয়ে সেটাকে বৈধতায় রূপ দিতে চায়।এমন বিষয়কে যিনার দরজা হিসেবে মানতেই চায় না।

মূলত,প্রোফাইল পিকচার রাখার মানেই হচ্ছে যাতে অন্যেরা আমার ছবি দেখে।এখন এই অন্যেদের মধ্যে তো সিংহভাগই গায়েরে মাহরাম রয়েছেন।তবে কি আমি চাচ্ছি যে,গায়ের মাহরামরাও আমার ছবি দেখে গোনাহগারের অন্তর্ভুক্ত হোউক?আমার এমন উন্মুক্ত প্রোফাইল পিকচার রাখাটাই কি তা প্রমাণ করে না?

সত্যি কথা বলতে কি!আমরা স্বীকার করি আর না-ই করি আর যতোই ইনিয়েবিনিয়ে এটা-সেটা বলার চেষ্টা করি না কেনো আসলে কিন্তু আমরা প্রোফাইল পিকচার রাখি নিজেদের সৌন্দর্য অন্যেকে দেখানোর জন্য সর্বোপরি অন্যেকে আকৃষ্ট করার জন্য।আর অন্যেরা যেনো আমার ছবি দেখে wow!nice!awesome!ইত্যাদি কমেন্ট করে সেটা দেখারই অপেক্ষায় থাকি।যদি আমাদের এরকম ইচ্ছে নাই-বা থাকতো তবে আমরা কারো করা ঐ ধরণের কমেন্টে লাভ রিঅ্যাক্ট দিতাম না,ঐসব কমেন্টের বিপরীতে লম্বা করে একটা Thanks দিতাম না।এতেই বুঝা যায় মানুষের কাছ থেকে নিজের রূপের প্রশংসা পেতে আমরা কতোটা আগ্রহ নিয়ে মুখিয়ে থাকি।তাছাড়া, লাইক কমেন্ট পড়ার জন্য তো মন সবসময় অস্থির হয়েই থাকে। একটুও চিন্তা করছি কি যে,কী হবে মানুষের কাছ থেকে এসব প্রশংসাসূচক লাইক কমেন্ট পেয়ে যদি না আমার রবের কাছ থেকে আমার প্রশংসাসূচক কোনো লাইক কমেন্ট পাওয়া যায়?

আমরা অনেকেই হয়তো-বা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে প্রোফাইল পিকচারকে বৈধ করার চেষ্টা করবো। কিন্তু কোনো মু’মিন কক্ষণোই এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হতে চাইবে না যেখানে গোনাহ হওয়ার নূন্যতম সম্ভাবনা রয়েছে।বরং একজন মু’মিন সবসময় নিজেকে সেইফ জোনে বা নিরাপদ স্থানে রেখে দুনিয়ার জীবন পার করতে চাইবে।কারণ সে চাইবে না দুনিয়ার সামান্য জিনিসের জন্য তার আখিরাতের অসামান্য জিনিস ধ্বংস হয়ে যাক।

এতোক্ষণ বন্ধুর কথা শুনে জামিল বলল ,মা শা আল্লাহ! তুই খুব সুন্দর বলেছিস, বন্ধু। একজন মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও আমি এমন চিন্তা আগে কখনো করি নি। সত্যিই দারুণ বলেছিস। এমন বিষয় জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, মারুফ জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা বন্ধু! তবে কি প্রোফাইল পিকচার রাখা নাজায়েজ?
–দেখ বন্ধু মারুফ, যেখানে প্রোফাইল পিকচারের মাধ্যমে এতোসব গোনাহের দরজা খোলা থেকে যাচ্ছে সেখানে কারো এমন বিষয় নিয়ে জায়েজ নাজায়েজের ফতোয়া খুঁজতে যাওয়া মানে এই ইঙ্গিত দেওয়া যে,সে যেন চাচ্ছে এটি কোনোভাবে জায়েজের মধ্যে পড়ে গেলে নিজের ছবি প্রোফাইলে রাখতে পারে।আর যে বিষয়ে এমনিতেই অনেক গোনাহের বিষয় জড়িত থাকে সে বিষয়ে ফতোয়া খুঁজতে যাওয়া অবান্তর। বরং নিজেকে এসব থেকে হেফাজত করে চলাতেই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।

প্রকৃতপক্ষে, যারা প্রোফাইলে পিকচার রাখার পক্ষে থাকতে চান তারাই এমন বিষয়ে তাদের অনুকূলের কিছু ফতোয়া চাইবেন সেটাই স্বভাবিক। কিন্তু কোনো আল্লাহভীরুরা প্রোফাইল পিকচারের এমন জগন্য বিষয় জেনেও নিজের ছবি প্রোফাইলে রাখতে পারেন না বা এমন প্রশ্নও তুলতে পারেন না।এমনকি প্রোফাইল পিকচার রাখার পক্ষে কোনো মতও খুঁজতে পারেন না।

যেখানে মহান আল্লাহ তা’য়ালা স্পষ্ঠ করে সূরা আন নূর এর ৩০ এবং ৩১ নং আয়াতে যথাক্রমে মু’মিন পুরুষদের চক্ষু হেফাজত করার কথা এবং মু’মিনা নারীদের চক্ষু হেফাজত করার পাশাপাশি সৌন্দর্য প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন সেখানে কিভাবে আমরা প্রোফাইল পিকচার রেখে কারো চক্ষু হেফাজতে বাধা সৃষ্টি করতে পারি?সূরা আন নূরের ঐ আয়াতে নারীদেরকে সৌন্দর্য প্রদর্শন না করতে বলার পরও কিভাবে মেয়েরা প্রোফাইলে তাদের চটকদার ছবি রেখে তাদের সৌন্দর্য অনায়েসে প্রদর্শন করে যেতে পারে?এসব জানার পরও কি প্রোফাইল পিকচার জায়েজ নাকি নাজায়েজ এমন প্রশ্ন আসতে পারার কথা?

অথচ এই আমরাই একদিকে দৃষ্টি সংযতের কথা বলি আবার অন্যদিকে নিজেরাই দৃষ্টি সংযতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এমন কিছু করে যাই।তবে কি আমরা অন্তর থেকে চক্ষু হেফাজতের কথা বলি নাকি কেবল বলার জন্য বলে থাকি?
শোন বন্ধু, আজকাল নিজেকে প্রদর্শন করার একটি মাধ্যমই হচ্ছে প্রোফাইলে নিজের ছবি রাখা।যেহেতু প্রোফাইলে রাখা একটির পর আরেকটি নতুন ছবি থেকে মানুষের জন্য প্রতিনিয়তই উপভোগ করার সুযোগ থাকছে সেহেতু এটিকে এক ধরণের কন্টিনিউয়াস ফ্যাশন শো বলাই যায়।আমরা যখন তখন নিজেদের ছবি পরিবর্তন করে সুন্দর সুন্দর ছবি প্রোফাইলে রেখে অন্যদেরকে পৈশাচিক আনন্দ দেওয়ার,চোখের প্রশান্তি মেটানোর সুযোগ করে দিচ্ছি।আর বিনিময়ে নিজেরা গোনাহ কামিয়ে নিচ্ছি আবার অন্যেদেরকেও গোনাহ কামাতে সাহায্য করছি।

–খুব ভালো বলেছিস,দোস্ত!কথাগুলো আসলেই সত্য।কিন্তু অনেক বড়ো বড়ো আলেমদেরকেও তো তাদের প্রোফাইল পিকচার রাখতে দেখা যায়। তবে কি তারা কোরআনের ওই আয়াতদ্বয়ের কথা ঐভাবে চিন্তা করেন না?
–শোন, ইসলাম সম্পর্কে আমাদের জানাশুনার ব্যাপারে আলেমদের অবদান অনস্বীকার্য।তারা আমাদের সম্মানের পাত্র।কিন্তু তাই বলে আমরা তাদের অন্ধভক্ত হতে পারি না।তারা যা করে যাবেন তা যাচাইবিহীনভাবে মেনে নিতে পারি না।আর আজকাল হক্কানি আলেম উলামাদের চিনতে পারাটাও বড়ো মুশকিল।বিশেষ করে ইসলামিক জ্ঞান না থাকলে তো তা আরও মুশকিল।কারণ সেক্ষেত্রে তাদেরকে অনেকটা অন্ধ অনুকরণ করে যেতে হয়। যাইহোক, তারা প্রোফাইল পিকচার রাখছেন বলে আমাদেরকেও রাখতে হবে এমন তো কোনো কথা হতে পারে না।

আরে! যেখানে একজন পুরুষের সুন্দর প্রোফাইল পিকচার দেখে একজন পর নারীর চোখের যিনা করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেই পুরুষকে নিয়ে বাজে চিন্তা করার তথা মনের যিনা করার আশঙ্কা রয়েছে সর্বোপরি সেই পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে কিভাবে একজন আলেম তার সুন্দর সুন্দর পিকচার অবলীলায় আপলোড করতে পারেন কিংবা বেশ সাচ্ছন্দ্য প্রোফাইল পিকচার রাখতে পারেন সেটা আমারও বোধগম্য হয় না।তাদের কারণেই অনেকে প্রোফাইল পিকচার রাখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হচ্ছে।এমনকি তাদেরকে দলিল হিসেবেও ব্যবহার করছে। কি আশ্চর্য!

আবার,এসব আলেমরাই তো নারীদের বলেন যে, নারীরা যেন চক্ষু হেফাজত করে চলে।এখন একদিকে তারা এসব বলবেন আবার অন্যদিকে নিজেরাই নিজেদের ছবি প্রোফাইলে রেখে পর নারীদেরকে দেখার সুযোগ করে দিয়ে তাদের চক্ষু হেফাজতের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন তবে তাদের অমন কথার কী মূল্য থাকলো?সেজন্যই বলি,শুধু অন্যকে নসীহত করলেই হয় না নিজেকে আগে সেটা পালন করে অন্যের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে হয়।অন্যথায়,সেই বলাটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

তারা প্রোফাইলে নিজেদের পিকচার না রেখে কোরআন হাদীসের কোনো আয়াতের সুস্পষ্ঠ অর্থও রাখতে পারতেন যা মানুষের হেদায়েতের ক্ষেত্রে সহায়ক হতো।অবশ্য,এখানে কিছু মানুষ বলবে ভেরিফিকেশনের জন্য বাধ্য হয়ে তারা নিজের ছবি প্রোফাইলে রাখেন।ব্যাপারটা সত্য হলেও এটা নিতান্তই একটি অজুহাত বৈ অন্য কিছু নয়।কেনো?জনপ্রিয় লেখক আরিফ আজাদ সাহেব কি নিজেকে প্রদর্শন না করেও দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন না?উনার তো আজ পর্যন্ত একটি ছবিও দেখতে পেলাম না।তিনি কি আর তাতে দ্বীন প্রচারে পিছিয়ে পড়েছেন নাকি?কাজেই এখানে মনের ইচ্ছাটাই হচ্ছে বড়ো বিষয়।সৎ ইচ্ছা থাকলে যতো বাঁধা বিপত্তি থাকুক আল্লাহ সাহায্য করবেনই।শুধু শুধু এটা সেটা অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানোর কোনো মানে হয় না।

আবার,কেবল বাধ্য হয়েই যদি তাদেরকে ছবি আপলোড করতে হয় তবে এতো সেজেগুজে একের পর এক আকর্ষণীয় ছবি আপলোড করার মানেটা কী?সেক্ষেত্রে কোনোরকমের একটি দিলেই তো পারতেন।ফলে এতে কি বোঝা যায় না যে,উনারাও নিজেকে প্রদর্শন করা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না।তাছাড়া,আকর্ষণীয় ছবি দেওয়ার মানেই তো হচ্ছে নিজেকে প্রদর্শন করতে যাওয়া,অন্যকে আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।এগুলো আসলেই দুঃখজনক।কেননা তাদের থেকেই তো মানুষ শিখবে।এখন তারাই যদি এভাবে নিজেদের ছবি আপলোড করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন,দ্বীনের পথ হারা মানুষের মতো নিজের সুন্দর সুন্দর ছবি আপলোডের মাধ্যমে সৌন্দর্য প্রদর্শনে মেতে উঠেন তবে আমরা তাদের থেকে শিখবোটা কী?

অপরদিকে,তাদের অন্ধ ভক্তের কথা আর কী ই-বা বলবো।এরা তো রীতিমতো তাদের ভক্তকে ডিফেন্ড করতে মরিয়া হয়ে উঠে,বিভিন্ন যুক্তিতর্ক পেশ করা শুরু করে,পারলে গালিগালাজ থেকে শুরু করে মারামারিতে পর্যন্ত লিপ্ত হয়ে পড়ে। এতোটাই জটিল অন্ধ।অথচ প্রকৃত বিষয়টি বোঝারই চেষ্টা করে না যে,যেটিতে ফিতনার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে সেটি কিভাবে এমন মানুষেরা অনায়েসে করে যেতে পারেন যাদের অনুসরণে আমরা ফিতনার পথ এড়িয়ে চলবো?

মোটকথা,আমি বলবো,আলেমরা প্রোফাইল পিকচার রাখলেন কিনা সেটা মোটেও আমাদের দেখার বিষয় নয়।তাদের বিষয় নিয়ে আমাদের পড়ে থাকলে হবে না।তারা কী করছেন না করছেন তা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তাদের হিসেব তাদেরকেই দিতে হবে।আমাদের হিসাব আমাদেরকেই দিতে হবে।তাই সব ব্যাপারে অন্ধের মতো তাদেরকে অনুসরণ করে গেলে হবে না।নিজেদেরকেও একটু বুঝে শুনে চলতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে,তারা কোনো কিছুর দলিল নয় যে,তারা করছেন বলেই আমাদের জন্য সেটা করা আবশ্যক হয়ে গেছে। আমরা কেবল তাদের ভালোটা গ্রহণ করবো আর মন্দটা নির্দ্বিধায় বর্জন করবো।আর সম্মানের জায়গায় সর্বদা আটল থাকবো।ব্যাস!

দেখ,আমি যদি আমার প্রোফাইল পিকচার না রাখি তবে আমি যাদের জন্য গায়েরে মাহরাম তাদের নিকট আমার ছবি দেখার সুযোগ থাকছে না।ফলে অন্তত আমার ছবি তাদের চক্ষু হেফাজতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।এমনকি আমার ছবি নিয়ে তাদের কোনো বাজে চিন্তা করারও কোনো সুযোগ থাকছে না।সহজ কথায়,আমার ছবি থেকে আর কোনো ধরণের গোনাহের রাস্তা খোলা থাকলো না।আর এক্ষেত্রে আমাকে নিরাপদ অবস্থানে থাকা হলো।আর এ অবস্থায় আমার মৃত্যু হয়ে গেলেও অন্তত এখান থেকে বা এসব বিষয় থেকে আমার জন্য গোনাহে জারিয়ার কোনো রাস্তা খোলা থাকলো না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে,যেহেতু নিজের প্রোফাইল পিকচার না রাখাতে অন্যের চক্ষু হেফাজতে তা ভূমিকা রাখছে সেহেতু তাতে এক ধরণের পরোপকারও হয়ে যাচ্ছে।আর আল্লাহ চাইলে এই পরোপকারীতার জন্য আমাদেরকে অনেক সওয়াব দিতে পারেন এবং কিয়ামতের দিন সম্মানিত করতে পারেন।এবার বুঝলি?

–হ্যাঁ বন্ধু!বুঝতে পেরেছি।তোর কথাগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এদিকে,জামিল ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে প্রোফাইল পিকচার না রাখার বিষয়টি বুঝে ফেলতে পারলেও মারুফের যেনো জানার আরও কিছু বাকি রয়ে গেছে।তাই সে হাসানকে আরও কিছু প্রশ্ন করতে লাগলো।সে জিজ্ঞেস করলো, তবে কি বন্ধু আমরা নিজেদের প্রোফাইল পিকচার সরিয়ে ফেলবো?

–হ্যাঁ,মারুফ!আমরা যদি মহান আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাকি তবে তো আমাদের এসব থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করে চলাই উত্তম।আমি যেমনটা শুরুতে বলেছিলাম যে,এমন কোনো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রাখা উচিত নয় যে কাজে আমাদের চিরস্থায়ী জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।আর সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রোফাইল পিকচার না রাখার পক্ষেই আমার দৃঢ় অবস্থান।আর আমাদের যে কারো মৃত্যু যে কোনো সময়ই হয়ে যেতে পারে।ফলে মৃত্যুর প্রস্তুতি হিসেবে এসব বিষয়ে সচেতন থেকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করে যাওয়া মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।
–হুম,তা তো বটেই।তাহলে প্রোফাইলে অন্য কোনো ধরণের পিকচার রাখতে চাইলে সেক্ষেত্রে কী ধরণের পিকচার রাখা উচিত?

–মূলত,নিজের ছবি রাখার চেয়ে একদম খালি রাখাই উত্তম।তবে একান্তই যদি কিছু রাখতে হয় তবে যেনো আমরা এমন কিছু রাখি যা থেকে মানুষের কিছু শেখার থাকে।যেমন কোরআন হাদীসের কোনো সুস্পষ্ঠ বাণী রাখতে পারি যাতে মানুষের ওগুলো থেকে হেদায়েত প্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।এর বাইরে প্রোফাইলে অন্য কোনো ছবি বা কার্টুন রাখাও মোটেও শোভনীয় কিছু নয়।
মনে রাখবে,দুনিয়ার জীবনে নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে রেখে চলা উত্তম।সেই জায়গা থেকে যেসব বিষয় খুব বেশি প্রয়োজন নয় সেসব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখাই সবচেয়ে বেশি কল্যাণকর।আর প্রোফাইল পিকচার রাখা যে খুব প্রয়োজনীয়- ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও তেমন নয়। কাজেই চাইলেই আমরা এই বিষয়কে ইগনোর করতে পারি।

–কিন্তু বন্ধু ফেইসবুকের মতো জাঁকজমকপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি নিজেদের ছবি আপলোড না-ই করতে পারলাম কিংবা প্রোফাইল পিকচার না রাখতে পারলাম তবে এসব ব্যবহার করার কি আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকলো?

–অবশ্যই ফেইসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে।তবে সেটা নিজের মনগড়া নয়।ফেইসবুকে যে শুধু ফটো আপলোড দিতে হবে বা নিজের সুন্দর সুন্দর পিকচার প্রোফাইলে রাখতে হবে এমন উদ্দেশ্য রেখে অন্তত একজন মুসলিমের ফেইসবুক চালানো উচিত নয়।বরং আমাদের উদ্দেশ্য থাকা উচিত এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে ইসলাম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা এবং আরও বেশি করে ইসলাম প্রচার করে যাওয়া।আসলে,ফেইসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই একসাথে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। ফলে একসাথে অনেক বেশি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাওয়া সহজ হয় যা অফলাইনে থেকে ঐভাবে করা সম্ভব হয় না।

ফেইসবুককে কাজে লাগিয়ে দ্বীনি কাজ করে যেতে পারলে আমাদের জন্য তা সদকায়ে জারিয়া হয়ে থাকবে।ইন শা আল্লাহ!আমরা চাইলে নিজেরাও দ্বীনের পথে সহায়ক কিছু আর্টিকেল লিখে মানুষদেরকে দ্বীনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে যেতে পারি।নিজেরা দ্বীনি কিছু লিখতে না পারলে অন্তত যারা লিখেন তাদের লেখাগুলো শেয়ার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতী কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারি।
দুঃখজনক হলেও সত্য,আজকাল অনেক মুসলিমরা আছেন যারা দ্বীনি বিষয়ক কোনো কিছু শেয়ার করতে প্রচন্ড রকমের কার্পণ্য করেন।দ্বীনের প্রতি তারা এতোটাই উদাসীন।অথচ তারা ঠিকই নাটক,মুভি কিংবা ফানি ভিডিওস ইত্যাদি হাবিজাবি শেয়ার করতে ভুল করেন না।মুসলিম হিসেবে আরেক মুসলিমের এমন কর্মকান্ড দেখে যাওয়া খুবই কষ্টকর।

যাইহোক,আমরা কোরআন হাদীসের বিভিন্ন আয়াত, দ্বীন সহায়ক আর্টিকেল বা গল্প,বিভিন্ন ওয়াজ, ইসলামিক লেকচার ইত্যাদি আমরা আমাদের টাইমলাইনে শেয়ার করে যেতে পারি। প্রসঙ্গত,আমাদের টাইমলাইন থেকে কেউ পড়ে লাইক কমেন্ট করলো কিনা সেগুলো দেখা মূখ্য বিষয় নয়।মানুষ যাতে আমাদের টাইমলাইনে হেদায়েতের বাণী পেয়ে হেদায়েতপ্রাপ্ত হতে পারে কেবল সেই সুযোগ করে রাখা উচিত।হয়তোবা আমাদের টাইমলাইনে শেয়ার করা ভালো কিছু থেকে তারা হেদায়েত পেতে পারে যা আমার উপর আমার রবের সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে।আর এভাবেই আমরা ফেইসবুকসহ অন্যান্য যতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে সবগুলোকে দ্বীনের পথে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারি।

–ধারুণ তো।আজকের ফিতনার এ যুগে তোর এতো সুন্দর চিন্তা দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না,বন্ধু।অনেক কিছুই তোর কাছ থেকে আজ জেনে নিলাম।
–জাযাকমুল্লাহু খাইরান।তবে মারুফ দয়া করে তুই ঐ মেয়েটির ছবিটা ডিলেট করে দে,বন্ধু!
–হ্যাঁ,তা তো এক্ষুনি-ই ডিলেট করে দিচ্ছি।দাঁড়া!এর সাথে সাথে আমার প্রোফাইল পিকচারটাও ডিলিট করে দিচ্ছি।
–মা শা আল্লাহ!ঐ ছবির সাথে প্রোফাইল পিকচারটাও ডিলিট করাতে তোর জন্য বন্ধু আমার মন থেকে দোয়া রইলো।আমি ভাবতেই পারি নি যে,আমার সামান্য কথাতেই তুই এভাবেই একদম জায়গায় বসে তোর প্রোফাইল পিকচার ডিলিট করে দিবে।আল্লাহর কাছে হাজার বার শুকরিয়া আদায় করেও এর শুকরিয়া আদায় হবে না রে বন্ধু।
–বন্ধু,Done!এই দেখ,তোর সাথে কথা বলতে বলতে ডিলিট করেই ফেললাম।
–মা শা আল্লাহ!

এতোক্ষণ মনোযোগ সহকারে তাদের কথা শুনতে থাকা জামিলও তার বন্ধু হাসানকে বলল,যাক বন্ধু!প্রোফাইলে নতুন একটি পিকচার রাখবো বলে আমি কয়েকদিন আগেই আগেরটা ডিলিট করে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম,আগামী পরশু খালাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসার সময় ওখানে কিছু ছবি তুলে প্রোফাইলে নতুন ছবি রাখবো।একইসাথে,সোস্যাল মিডিয়ায় অনেকদিন ধরে ছবি আপলোড না করায় নতুন কিছু ছবি আপলোড দেওয়ার ব্যাপারেও মনস্থির করে রেখেছিলাম।যাক,ভালোই হলো।তা আর করতে হচ্ছে না।

–আলহামদুলিল্লাহ!সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ!সত্যিই বন্ধু আমি কোনোদিন আল্লাহর কাছে এর কৃতজ্ঞতা আদায় করে শেষ করতে পারবো না। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি অধমের জন্য এটি অনেক দামি একটি সারপ্রাইজ যে তোমরা আলোচিত বিষয়টি একদম জায়গায় বসে উপলব্ধি করতে পেরেছো।আলহামদুলিল্লাহ!তোদের মতো এভাবে যদি সবাই বুঝতে পারতো তাহলে কতোই-না ভালো হতো রে।
জামিল ও মারুফ একসাথে বলল,বন্ধু!আমরা আমাদের সহপাঠীদেরকে এ ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করবো যাতে তারাও এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নিতে পারে।

–হ্যাঁ,আমাদের প্রত্যেকেরই স্ব স্ব জায়গা থেকে তেমনটাই করা উচিত।সেটা বরং আরও ভালো হবে।মানুষদেরকে ভালো কাজের পরামর্শ দিলে আল্লাহও খুশি হবেন।
যাইহোক,তোদেরকে আরেকটি কথা বলে রাখি যে,আজকের এই আধুনিক যুগে নিজেদের যৌবনের রঙিন সময়ে যেখানে অন্য যুবক-যুবতীরা তাদের প্রোফাইল পিকচার রাখাতে এবং সুন্দর সুন্দর ছবি আপলোড দেওয়াতে ব্যস্ত সেখানে আমাদেরও মন চাইবে নিজেদের ছবি আপলোড দিতে,সুন্দর সুন্দর জায়গায় ছবি তুলে তা আপলোড দিতে আমাদেরও মন খুব ছটফট করবে।এতে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু বিশ্বাস কর,আল্লাহ তা’য়ালা এর উত্তম বিনিময় দিবেনই।কেননা আল্লাহ আশ শাকুর তথা সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিময় দাতা।

শয়তান তো ধোঁকায় ফেলানোর জন্য আমাদের পিছনে প্রতিনিয়ত লেগেই আছে।আর এই এতো কিছুর পরও যখন আমরা ধৈর্য্যের সহিত শয়তান ও আমাদের নফসের সাথে যুদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এসব থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবো তখন আল্লাহ তা’য়ালা নিশ্চয়ই আমাদেরকে অনেক সম্মানিত করবেন।ওয়াল্লাহি!এর প্রতিদান অনেক বড়ো হবে।কারণ আজকের ফিতনার যুগে এসব থেকে বিরত থাকা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়।এর জন্য বড়ো হিম্মতের প্রয়োজন হয় যা ঈমানী শক্তি না থাকলে কারো দ্বারা সম্ভব নয়।

জামিল বলল,একদম যথার্থই বলেছিস বন্ধু!তোর এমন কথাগুলো আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে দিবে।আর বন্ধু হাসান,তুই ভার্সিটির ছাত্র হয়েও অর্থাৎ আমার মতো দ্বীনি কোনো প্রতিষ্ঠানে না থেকেও যেরকম ইসলাম নিয়ে চিন্তা করছ তা সত্যিই বিশেষ করে আমার মতো মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য তোর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখার আছে।যে আল্লাহর ভয়ে,আখিরাতের জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে আজকের চাকচিক্যময় আধুনিক যুগে ফেইসবুকের সামান্য প্রোফাইল পিকচার নিয়ে এতোটা উদ্বিগ্ন থাকতে পারে,এতোটা সচেতন থাকতে পারে সে সত্যিই এ যুগের একজন অনেক বড়ো আল্লাহওয়ালা!

–না,বন্ধু জামিল!আমাকে এভাবে বলিস না।আমি আসলে এখনো আল্লাহওয়ালা হতে পারি নি।আমি যেনো সত্যিকারের একজন আল্লাহওয়ালা হয়ে এ পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিতে পারি সেই দোয়াই তোরা আমার জন্য করিস।আর আমি চাই না কোনো মানুষের নিকট আল্লাহওয়ালা হিসেবে পরিচিত থাকি বরং আমি চাই একমাত্র আমার রব মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট-ই একজন প্রকৃত আল্লাহওয়ালা হিসেবে গণ্য হই।
–সেটাই আমরা দোয়া করি।

কিছু কথাঃ
আমরা প্রোফাইল পিকচার নিয়ে এতো এতো প্রশ্ন না করে,লজিক না খুঁজে আমরাও কি তাকওয়ার খাতিরে হাসানের মতো হিম্মত করে নিজেদের ফেইসবুক তথা যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল পিকচার এক ক্লিকেই সরিয়ে ফেলতে পারি না?একটি বার যেনো নিজেকে প্রশ্ন করি যে,শুধু শুধু মানুষদের নিকট নিজেকে প্রদর্শন করে কী লাভ?

কিছুদিন পরেই তো আমরা পোকামাকড়ের খাবার হতে যাচ্ছি।তাই না? তাছাড়া, এতে তো প্রতিনিয়তই চোখের যিনা হওয়ার দরজা খোলা রাখা হয়ে যাচ্ছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।কাজেই আখিরাতের মতো চিরস্থায়ী জীবন বিবেচনায় জান্নাত প্রত্যাশী হিসেবে আমরা যেন নিজেদের প্রোফাইল পিকচার আজ-ই সরিয়ে ফেলি।

আজকের কঠিন যুগে এমন বড়ো স্যাকরিফাইজের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালা নিশ্চয়ই আমাদেরকে অনেক বড়ো পরিসরে পুরষ্কৃত করবেন।
ইন শা আল্লাহ!

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture