Writing

পরকীয়া: স্লো পয়জান অভ আওয়ার সোসাইটি

পরকীয়া শব্দটি পরকীয় শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ। পরকীয়ার অর্থ করতে গিয়ে বিভিন্ন অভিধানে বলা হয়েছে, প্রণয়াসক্ত পরস্ত্রী। (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex)। এই শব্দটার পারিভাষিক সংজ্ঞার বোধহয় প্রয়োজন নেই।

সমাজে ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত বাড়ছে এই সমাজ বিধ্বংসী ভাইরাস। যাতে সংক্রমিত হচ্ছে হাজারও নারী-পুরুষ। আমাদের সমাজে স্বাভাবিকভাবে পরকীয়া বলতে নারী সমাজের দিকে আঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু খোঁজা হয় না তার প্রকৃত কারণ। লেখালেখি হয় না এই বিষয়ে! মানুষ সম্মুখে এই বিষয়ে আলোচনা করতেও থাকে দ্বিধান্বিত। যার দরুন এই সমাজ বিধ্বংসী ভাইরাস নিজের মতো করে সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে কোনোপ্রকার বাধা ব্যতিরেকেই!

গত কিছুদিন যাবত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মাইশা নামক এক ১৮ বছরের কিশোরী। যে কিশোরী এই পরকীয়া নামক এই সমাজবিধ্বংসী ভাইরাসের সর্বশেষ শিকার। এমন না যে মাইশা-ই প্রথম, বরং এর শিকার হয়েছে হাজারো শিশু, নারী, পুরুষ ও পরিবার। এই পরকীয়ার শিকার, সামিউল, মাইশা, আসমা, আরাফসহ আরও অনেক শিশু, কিশোর/কিশোরীরা। [সুত্র]

পরকীয়া প্রেমের উৎপত্তি ও ইতিহাস

[এবনে গোলামা সামাদ স্যারের একটা প্রবন্ধ থেকে পরিমার্জিত।]

শ্রীচৈতন্যের প্রতিষ্ঠিত বৈষ্ণব ধর্মের একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হলো পরকীয়া প্রেম। অর্থাৎ বর্তমান যুগের ভাষায় পরস্ত্রীর সাথে অবৈধ প্রেম ও ব্যভিচার। বিখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদার তার লিখিত ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’-এর দ্বিতীয় খণ্ডে বলেছেন, বর্তমান কালের রুচির অমর্যাদা না করে এর বিস্তৃত বর্ণনা করা অসম্ভব।

তার মতে, আশ্চর্য বিষয় এই যে, এই পরকীয়া, অর্থাৎ পরিণীতা স্ত্রীর সাথে বৈধ প্রেম অপো আধ্যাত্মিক দিক থেকে অনেক শ্রেষ্ঠ ভাবা। বৈষ্ণবরা মনে করতেন এবং এখনো মনে করেন, প্রেমের মাধ্যমে ভগবানের সঙ্গ লাভ সম্ভব। আর এই প্রেমের প্রথম সোপান হচ্ছে পরকীয়া। পরকীয়ার মাধ্যমে ভগবত প্রেমের আবির্ভাব ঘটে। সম্ভব হয় প্রেমের স্বরূপ উপলব্ধির। আর এই প্রেমের সাধনার মাধ্যমে লাভ করা যায় ভগবানের সান্নিধ্য।
(দ্রষ্টব্য : রমেশচন্দ্র মজুমদার; বাংলা দেশের ইতিহাস; দ্বিতীয় খণ্ড। পৃষ্ঠা ২৬৭। মাঘ ১৩৮০; জেনারেল প্রিন্টার্স। কলকাতা)

রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে, উত্তর-পশ্চিমে খেতুর নামে একটি জায়গা আছে। এখানে সুপ্রসিদ্ধ বৈষ্ণব মহাজন নরত্তম ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। ১৫৮২ সালে (১৫০৪ শকাব্দে) নরত্তম ঠাকুর খেতুরে চৈতন্যবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।

এ সময় তিনি আহ্বান করেছিলেন এক বিরাট বৈষ্ণব সম্মেলন। খেতুর হয়ে ওঠে তখনকার সারা বাংলার বৈষ্ণবদের বিশেষ তীর্থ। এই তীর্থ উপল, সেখানে প্রতি বছর বহুলোকের সমাগম হতে আরম্ভ করে। পরে নরত্তম ঠাকুরের তিরধান উপলে মাঘ মাসের শেষে সাত দিন একটি বড় মেলা বসতে আরম্ভ করে।

এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাব, বাঁশ ও বেতের তৈরি দ্রব্য, সুন্দর নকশা আঁকা শখের হাঁড়ি বিক্রি হতো। যারা বৈষ্ণব নন, তারাও যেতেন ওই মেলায় এসব জিনিস কিনতে। বাংলাদেশে এ সময় যত মেলা বসত, তার মধ্যে খেতুর মেলা ছিল খুবই প্রসিদ্ধ।
এ সময় মেলায় প্রতি বছর প্রায় ২৫-৩০ হাজার লোকের সমাগম হতো। এই মেলা এ সময় কার্যত হয়ে উঠত একটি বড় অস্থায়ী ব্যবসাকেন্দ্র।

এই খেতুর মেলায় লোকসমাগম হওয়ার অন্য আর একটি কারণও ছিল। তা হলো, বৈষ্ণব যুবতী মেয়েরা (বৈষ্টমী) আপাদমস্তক চাদরে ঢেকে কেবল এক হাতের তালু বাইরে বের করে রাখত। তাদের হাতের এই তালুতে কিছু অর্থ দিলে এসব বৈষ্ণব মেয়ে যেকোনো লোকের অস্থায়ী যৌনসঙ্গী হতো। এই প্রথাও হয়ে উঠেছিল কিছুটা বৈষ্ণব ধর্ম সাধনারই অঙ্গ।

বৈষ্ণব মতে দাস্য সখ্য বাৎসল্য শৃঙ্গার এই চারি রস। চারি রসে ভক্ত যত কৃষ্ণ তার দাস। উল্লেখ্য, বৈষ্ণবরা কৃষ্ণের পূজারী। কৃষ্ণকে মনে করা হয় দেবতা বিষ্ণুর অবতার। রাধা ও কৃষ্ণকে নিয়ে গড়ে উঠেছে বিরাট বৈষ্ণব সাহিত্য। আর রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার বর্ণনা আজকের মাপকাঠিতে মনে হয় খুবই অশ্লীল।

উপমহাদেশে পরকীয়ার বিস্তার

পরকীয়া শব্দের সাথে এই উপমহাদেশের মানুষের পরিচয় খুব বেশিদিন আগে না! এই উপমহাদেশে ইংরেজরা যখন নিজেদের শাসনকার্য পরিচালনা করা শুরু করেছে তারপর থেকে তারা বিভিন্নভাবে এদেশের মানব শক্তি নিজ দেশে পাচার করতে শুরু করে। এতে করে তারা এই উপমহাদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনায় একটা পরিচিত বাক্য সেটআপ করতে সমর্থ হয় খুব সহজেই। তা হলো, “তোমাকে সুখে থাকতে হলে(পুঁজিবাদী ধারণা মোতাবেক অর্থ কেই সকল সুখের মূল ভাবা) প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আর অর্থের প্রয়োজনে তোমাকে সূদুরে যেতে হবে।

এই উপমহাদেশের সরলমনা মানুষও ছুটতে থাকে নিজ ভূমি ছেড়ে। চলে যায় প্রাচ্যে- প্রাশ্চাত্যে! নিজ আত্মীয়-স্বজন সকলকে ছেড়ে। নিজের বিবাহিত স্ত্রী থাকে একলা পড়ে! বছরের পর বছর তার স্ত্রীকে সে টাকা দিয়েই করতে চায় সবচেয়ে সুখী! কিন্তু তা কি আদৌ হয়?

বিবাহের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ। যখন তাই থেকে যায় অপূরণীয় তখন একজন স্বামী বা স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হওয়াটা কি অসম্ভব কিছু?
পরকীয়া বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী স্ত্রীর দীর্ঘদিন দূরত্ব বজায় রাখা! যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে আমাদের এই উপমহাদেশে। হাজার শিশু, স্বামী, স্ত্রী এর বলি হয়েছেন, হচ্ছেন এর বিহিত না হলে ভবিষ্যতে আরও হবেন।

আরও কিছু কারণের মধ্যে আরেকটা অন্যতম কারণ হলো , দেবর-ভাবির বিতর্কিত সম্পর্ক। তথাকথিত সমাজব্যবস্থায় যার প্রচলন অত্যধিক। এর ভুক্তভোগীও নিতান্ত কম নয়! তারপর রয়েছে সাংসারিক জীবনে ভালোবাসার অভাবও মানুষকে এমন ঘৃণ্য কাজের দিকে মুভ করতে সাহায্য করে। আমাদের সমাজব্যবস্থার এমনকিছু নীতি রয়েছে যেগুলো এই মরণব্যাধিতে হতে অত্যধিক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

আমাদের সমাজের পুরুষেরা পাশ্চাত্যের রঙচঙে মাখা সেই পুঁজিবাদী চিন্তাধারা জেনে না জেনে লালন করে যাচ্ছে! হাজারো পুরুষ তাদের স্বপত্নীর খোঁজ খবর রাখেন না টাকা কামাইয়ের চিন্তায়। তারা তাদের পরিবার নিয়ে ভাবে না। তাদের মাথায় টাকার পোকা অলটাইম গিজগিজ করে।

যুবকদের অনেক বড় একটা অংশ বিয়ে করে বিদেশ পাড়ি দেয় টাকার জন্য! আমার দেখা এমনও ব্যক্তি আছেন যিনি প্রায় দুই দশক থেকে বিদেশ করছে স্ত্রী-সন্তানের ভালোর লাগি! অথচ তারা এটা ভাবে না তাদের স্ত্রীর চাহিদাজুড়ে টাকার চেয়ে মূল্যবান জিনিস আছে। আর সেটা হলো জৈবিক চাহিদা। একজন স্ত্রী সর্বোচ্চ চারমাস সহবাস ব্যতিরেকে কাটাতে পারে।
[মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১২৫৯৩]
কিন্তু যখন বছরের পর বছর, দশকের পর দশক এই ধৈর্যের সঙ্গে থাকার বাণি শোনানো হয় তখন কি তা আদৌ সম্ভব?

আসলেই কি তাদের স্ত্রী-সন্তান ভালো থাকে?
আমি নিজেই একটা জরিপ করেছি, সেখানে দেখলাম, যেসকল সন্তানরা নিজের পিতাকে জন্মলগ্ন থেকে না দেখে বড় হয় তাদের মনস্তত্ত্ব একপ্রকার ভিন্ন ধরনের। তাদের স্ত্রীদের কি জৈবিক চাহিদা নেই!

তাহলে যদি এই নারী অন্য পুরুষের সাথে পরকীয়ার মতো অপরাধে অভিযুক্ত হয় তাহলে সেই স্বামীকে কোন যুক্তিতে আমরা নিস্তার দিতে পারি! আপনি একজন পুরুষ রিজিকের জন্য নিজ স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য ভূলে গেলে আপনার স্ত্রীও ভূলে গেলে দোষ শুধুমাত্র একদিকে কেনো যাবে?

মনে রাখবেন আপনার স্ত্রী সন্তানের রিজিকের ব্যবস্থা মহান রব করবেন। কিন্তু আপনার কারণে যদি আপনার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে তার জন্য অবশ্যই আপনাকেও দায় নিতে হবে। সাংসারিক জীবনে সব সময় নিজের চাওয়াকে উপরে রাখা ঠিক না! মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিষয় ত্যাগ করাতেও রয়েছে আত্মতৃপ্তি।

স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করাও স্বামীর দায়িত্ব। এর জন্য নির্ধারিত সময় ধার্য নেই; বরং চাহিদা, শারীরিক সক্ষমতা ইত্যাদি অনুপাতে করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন বিরত থাকাও নিষেধ। ওমর (রা.) একদা রাতের বেলা একটি ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলেন যে জনৈক মহিলা বিরহের কবিতা পড়ছে। তখন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে তার স্বামী দীর্ঘদিন জিহাদে রত, বাড়িতে আসছে না। তখন ওমর (রা.) হাফসা (রা.)-কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে নারী স্বামীবিহীন কত দিন ধৈর্য ধারণ করতে পারে? হাফসা (রা.) লজ্জায় বলতে চাচ্ছিলেন না। তখন ওমর (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা হক কথায় লজ্জা করেন না। তখন হাফসা (রা.) ইশারায় তিন বা চার মাসের কথা বলেন। অতঃপর ওমর (রা.) সেনাপতিদের নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে চার মাসের বেশি যেন কোনো সৈন্যকে আটকে রাখা না হয়; বরং অনূর্ধ্ব চার মাস পর পর তাদের ছুটি দেবে।
[এই প্রবন্ধ লিখতে সহোযোগিতা নেয়া হয়েছে অনলাইনে প্রকাশিত কয়েকটি প্রবন্ধের।]

উক্ত ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে স্বাভাবিকভাবে চার মাসের বেশি স্ত্রী সহবাস থেকে কখনো বিরত থাকবে না। আর এ পরিমাণটি কোরআনে কারিমের (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৬) ‘ঈলা’-এর বিধান (অর্থাৎ চার মাস স্ত্রী সহবাস না করার কসম করে বিরত থাকলে তালাক হয়ে যায়) দ্বারাও এটি প্রমাণিত।

এ ব্যাপারে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা অনেক উদাসীন। ফলে তাদের মধ্যে কারো কারো পারিবারিক জীবন সুখকর নয়। তবে তা সত্ত্বেও অনেকে পারিবারিকভাবে সুখী। কেননা মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে পারিবারিক বন্ধন খুবই শক্তিশালী। প্রবাসীরা সীমাহীন কষ্ট করে পরিবারের জন্য, দেশের জন্য যে অবদান রাখছেন, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

তবে স্মর্তব্য যে এ ক্ষেত্রে উভয়েই উভয়ের চাহিদা, সক্ষমতা ও মনমানসিকতা বিবেচনা করা জরুরি। তাই এ বিষয়ে ইসলামী শরিয়ত স্বামীকেও নির্দেশ দেয় যে সে স্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেও গুরুত্ব দেবে। তাই স্ত্রীর চাহিদা হলেও স্বামী কোনো ওজর না হলে তার চাহিদা পূরণ করতে হবে। এমনকি স্ত্রীদের অধিকারের দিকে লক্ষ রেখে এ বিধানও দেওয়া হয়েছে যে সহবাসকালীন স্ত্রীর অনুমতিবিহীন স্বামী বীর্য প্রত্যাহার করতে পারবে না। হাদিস শরিফে এসেছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বামীদের স্ত্রী সহবাসে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বীর্য প্রত্যাহার করা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯২৮)
কেননা এতে স্ত্রীর যৌন অধিকার হরণ হয়ে থাকে এবং অতৃপ্তি থেকে যায়।

কিন্তু এতদসত্ত্বেও যদি একে অপরের অনিচ্ছায় সহবাসের চাহিদা পূরণ করতে চায়, চাই সে স্বামী হোক বা স্ত্রী হোক—এটা অপরাধ বা তিরস্কারের বিষয় নয়। কেননা উভয়ে বৈধ স্বামী-স্ত্রী হওয়ায় তাদের পরস্পরে কখনো এমনটি হয়ে যাওয়া আশ্চর্যের বিষয়ও নয় এবং এতে তারা বাদে অন্য কারো নাক গলানো বা মাথা ঘামানোর বিষয়ও নয়। যেমন আমরা দেখি, বন্ধু-বান্ধবরা পরস্পরে অনেক সময় একজন-আরেকজনের থেকে জোরপূর্বক নাশতা আদায় করে আনন্দ উপভোগ করে থাকে, কারো ক্ষতি না হলে সামাজিকভাবে এটি কোনো নিন্দনীয় বিষয় নয়। এমনকি শরিয়তও বন্ধুর থেকে এভাবে চেয়ে খাওয়াটাকে নিন্দনীয় বলে না, কেননা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এমন কিছু হতেই পারে।

তদ্রূপ কারো ক্ষতি করা বাদে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ রকম কিছু ঘটে যাওয়াকে কোনোক্রমেই ‘ধর্ষণ’ বলা যায় না। কেননা ধর্ষণ হলো অবৈধ ক্ষেত্রে জোরপূর্বক কারো সঙ্গে ব্যভিচার করা। দুটির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য আরেকটি উদাহরণ দিই—অঢেল সম্পত্তির মালিক ছেলে মা-বাবাকে যদিও প্রয়োজনীয় খোরপোশ দেয়; কিন্তু সাধারণ হাতখরচ দেয় না, এ জন্য বাবা ছেলের অজান্তে তার পকেট থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিল, তদ্রূপ স্বামীর পকেট থেকে তার অজান্তে স্ত্রী কিছু টাকা নিয়ে নিল, তাহলে এ কাজটি যদিও সামাজিক দৃষ্টিকোণে ভালো নয়, তবে কি এ কাজের জন্য সমাজ ওই বাবা এবং স্ত্রীকে বলবে যে তারা চুরি করেছে?

অথবা তাদের কি চোর বা ছিনতাইকারী বলে ডাকা হবে?
কখনো না। বরং সমাজের অতিউৎসাহী কেউ যদি এ অপরাধের কারণে তার ছেলের সামনে বাবাকে অথবা স্বামীর সামনে স্ত্রীকে চোর বলে গালি দেয়, তাহলে ওই ছেলে এবং স্বামী তাকে কি বলবে না যে ওই বেটা! এটা আমাদের বাপ-বেটার ঘরোয়া নিজস্ব ব্যাপার, স্বামী-স্ত্রীর ঘরোয়া বিষয়, তোমার এখানে নাক গলানোর কী আছে?

অথচ আজকাল দেখা যায়, পশ্চিমা ও ইউরোপিয়ানদের পা-চাটা কিছু দালাল মিডিয়া এ বিষয়েও সরব, তারা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত এসব বিষয় নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সহবাসকেও ধর্ষণের মতো জঘন্য নাম দিয়ে কলঙ্কিত করতে চাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্ত্রীদের স্বামীদের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া, সুখের সংসারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, তাদের পশ্চিমা গুরুদের ঘরে নারী স্বাধীনতার নামে যে আগুন জ্বলছে, যার প্রভাবে পুড়ছে পুরো পশ্চিমা সমাজ, সে আগুন তারা আমাদের ঘরেও লাগাতে চায়। তারা আমাদের সুখের সংসার দেখে হিংসায় বাঁচে না।

আর তাদের আরেকটি হীন-উদ্দেশ্য হলো, মানুষদের বৈধ ও পবিত্র বিবাহের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা এবং অবৈধ প্রেম-প্রীতির রেওয়াজ চালু করা। কুকুরের মতো পথেঘাটে জিনা-ব্যভিচারে অভ্যস্ত করে তোলা, যাতে আমাদের পরিবারব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে অভিশপ্ত সমাজে রূপান্তরিত করতে পারে। তাই তাদের ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায় না; কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত বৈধ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়। আমাদের কি হুঁশ ফিরবে না?

পরকীয়ার শাস্তি সম্পর্কে লিখতে গেলে এই প্রবন্ধ বিশাল আকার ধারণ করার আশঙ্কা করছি। একই আশঙ্কায় অনেকগুলো বিষয় স্কিপ করতে হচ্ছে। ইন শা আল্লাহ বাকি আলোচনা আরেকদিন হবে। সকলে দোয়া করবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture