Writing

আমি কি মুসলিম নাকি ‘মুসলিম’ কেবলই আমার পরিচয়

[১]

আমি মুসলিম -এটার চেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে আমি মুসলিম হয়ে জীবনযাপন করছি কিনা, মুসলিম হতে হলে যেসব কোয়ালিটিস থাকা দরকার সেগুলো আমার মধ্যে আছে কিনা। মুসলিম পরিচয় থাকা যতটানা ভাগ্যের বিষয় তার চেয়ে বেশি দূর্ভাগ্যের বিষয় মুসলিম হয়ে জীবন যাপন করতে না পারা। মৃত্যুর পর এমন মানুষদের আফসোসের শেষ থাকবে না বলাই বাহুল্য। আসলে, নিজেকে মুসলিম দাবি করা যতোটা সহজ মুসলিম হওয়া ঠিক ততোটাই যেন কঠিন। কেননা দাবি মুখ দিয়ে অনায়াসে করা যায় কিন্তু মুসলিম হতে হলে মুসলিমের কোয়ালিটিস ধারণ করতে হয়, সেই কোয়ালিটিস বজায় রেখে চলতে হয়। কেবল তবেই মুসলিম হওয়া সম্ভব, তার আগে নয়।

বাপদাদাদের কাছ থেকে পেয়ে মুসলিম হওয়া আর নিজে জেনে বুঝে মুসলিম হওয়া এক জিনিস নয়। বুঝেশুনে মুসলিম হলে মুসলমানিত্বের যে গুরুত্ব থাকে সেটা বাপ দাদাদের কাছ থেকে পেয়ে আসলে থাকে না। দেখবেন, যে ব্যক্তি কষ্ট করে নিজ উপার্জিত টাকায় সম্পদ গড়ে তার কাছে সম্পদের মূল্য থাকে, কখনো সম্পদ বিক্রি করতে হলে তার বুক কাঁপে। কারণ সে বুঝে এই সম্পদ অর্জনের পেছনে তাকে কতো মেহনত করতে হয়েছে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নিজে সম্পদ গড়ে নি বরং পৈত্রিক সূত্রে সম্পদ পেয়েছে সে সম্পদের মূল্য ততোটা বুঝে না।

এজন্য সম্পদ বিক্রি করতে তার গায়েও লাগে না। কারণ এই সম্পদ সে নিজে কষ্ট করে গড়ে নি, ফ্রি-তে পেয়েছে। তদ্রুপভাবে, যে ব্যক্তি বাপদাদাদের দেখে মুসলিম হয়েছে সে তার মুসলমানিত্বের কদর বুঝে না। কারণ ফ্রি-তে পেয়েছে বলে কথা।

অপরদিকে, যে ব্যক্তি নিজে জেনে বুঝে মুসলিম, সে মুসলমানিত্বের কদর বুঝে। এজন্য যারা অমুসলিম থেকে মুসলিম হয় তারা খুব ভালো করে মুসলমানিত্বের মূল্য বুঝে। কেননা তারা জেনেবুঝে অনেক কষ্ট করে, অনেক বাঁধা পেরিয়ে মুসলমানিত্বের স্বাদ পেয়েছে।

[২]

আচ্ছা! মনে করুন, আপনি পুলিশের কাছে সারেন্ডার করলেন। এখন এই সারেন্ডার করার মানেটা কী?
মূলত, সারেন্ডার করার অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পন করা বা নিজেকে সঁপে দেওয়া। আর পুলিশের কাছে সারেন্ডার করার মানে হচ্ছে পুলিশ আপনাকে যা বলবে আপনি তাই করবেন, যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাবেন।তাদের কোনো কথাতেই আপনি আপত্তি করতে পারবেন না। কারণ আপনি তাদের কাছে সারেন্ডার করেছেন। এগুলোর ব্যতিক্রম আপনাকে সারেন্ডারকারী বলে গণ্য করা হবে না।

এবার আসি মূল বিষয়ে। ইসলাম অর্থ হচ্ছে সারেন্ডার করা বা আত্নসমর্পণ করা। আর মুসলিম অর্থ হচ্ছে আত্নসমর্পণকারী বা সারেন্ডারকারী। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলাম কবুল করে তথা আত্নসমর্পণ করে সেই হচ্ছে মুসলিম। অন্যভাবে, শরীয়াতের পরিভাষায় কুরআন সুন্নাহর আলোকে নিজের ইচ্ছা খায়েশ তথা নিজেকে, আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সাঃ)-এর আনিত সকল বিধানের কাছে সমর্পন করার নামই ইসলাম। আর এরকম যে নিজেকে আল্লাহর সকল বিধানের কাছে সমর্পন করে তার নাম মুসলিম।

প্রসঙ্গত, অনেকেই বলে থাকেন, ইসলাম শব্দের অর্থ নাকি শান্তি যা অর্থগত ভুল। মূলত, সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। তবে এর মানে এই নয় যে, ইসলাম মানে শান্তি নয়, ইসলাম অবশ্যই শান্তির ধর্ম তবে শান্তি নিজের খেয়ালখুশি মতো চলাতে নয়, শান্তি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে চলাতে নয় বরং আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই অন্তরে শান্তি আসবে। আর এই আত্নসমর্পণ দুনিয়ার কোনো প্রশাসনের কাছে নয়। এই আত্নসমর্পণ স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে। আল্লাহর কাছে সারেন্ডার করার মানে হচ্ছে আল্লাহ যা যা বলবেন আপনি তাই করবেন,যেভাবে চলতে বলবেন সেভাবেই চলবেন।

এখন যদি আল্লাহর কথা মতো চলা না হয় তবে আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তো, আপনি কি আল্লাহর কাছে সারেন্ডার করতে পারলেন? আর সারেন্ডার করতে না পারলে আপনার মুসলিম দাবি করার কী মানে থাকলো?
এজন্য আপনি যখন বুঝে মুসলিম হবেন তখন আপনার জানা থাকবে মুসলিম মানে হচ্ছে আত্নসমর্পণকারী। তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনি যখন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালিত করবেন কেবল তখনই আপনার প্রকৃত মুসলিম হওয়া হবে।

ভাবুন তো,আত্নসমর্পণের প্রশ্নে দুনিয়ার প্রশাসনের নির্দেশ মতো না চললে যদি তাদের কাছে আত্নসমর্পণকারী হিসেবে গণ্য না হন তবে স্বয়ং আপনার রবের নির্দেশ মতো না চললে আপনি কীভাবে আপনার রবের কাছে আত্নসমর্পণকারী তথা মুসলিম হিসেবে গণ্য হবেন? আপনার মুসলিম দাবি করা কি তখন ঠিক হবে?
আপনার যে বিবেক দুনিয়ার মানুষের কাছে আত্মসমর্পণের বিষয় বুঝতে সক্ষম সেই একই বিবেক তার রবের কাছে আত্নসমর্পণের বিষয় বুঝতে অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে না তো?

সারেন্ডারের ঘোষণা দেওয়ার পর পুলিশের কোনো নির্দেশ অমান্য করাকে যেমন সারেন্ডার বলে না ঠিক তেমনি মুসলিম দাবি করার পর আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করাকেও সারেন্ডারকারী তথা মুসলিম বলে না। আপনি নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি পালন করলেন অথচ মাহরাম গায়রে মাহরামসহ পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করলেন না,মানুষের হকের ব্যাপারে সচেতন থাকলেন না, বিয়েশাদিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয় তোয়াক্কা করলেন না, রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ মানলেন না তাহলে আপনার আত্নসমর্পণ করা হলো কোথায়?

আপনি আল্লাহর এই বিধান মানবেন আর ঐ বিধান মানবেন না, আল্লাহর এই হুকুম আপনার ভালো লাগে আর ঐ হুকুম ভালো লাগে না তবে কি তা আত্নসমর্পণকারীর সংজ্ঞার মধ্যে পড়লো? রবের নির্দেশ মতো চলে রবের কাছে আত্নসমর্পণ করা না হলে আপনার মুসলিম দাবি করার কি যৌক্তিকতা থাকলো? ব্যাপারটি নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন তো।

একজন সত্যিকারের মুসলিম হতে হলে ইসলামের সবকিছুই মানতে হবে। আমি ইসলামের এই বিধান মানলাম আর ঐ বিধান মানলাম না তবে সেটা পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মানা হলো না। তখন তো শয়তানকেই অনুসরণ করা হয়ে গেলো। আর আল্লাহ তা’য়ালা এ ব্যাপারে বলেছেন,
হে ঈমানদাররা, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্যে শত্রু। [সূরা আল বাকারা : ২০৮]

লিখেছেন

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture