যে দরজা সব সময় খোলা
এই দু’আ’টি করেছিলেন একজন বিশেষ মহিলা, যার নাম হাবিবাহ আল-আদাউইয়াহ (হে আল্লাহ তার উপর রহমত বর্ষণ করুন)। তিনি সাহাবী নন, বরং পরবর্তী প্রজন্মের একজন ধার্মিক পূর্বসূরি। আবদুল্লাহ আল-মাক্কি এবং অন্যান্যদের বর্ণনা অনুসারে, এটা ছিল তার রীতি – মধ্যরাতে যখন চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে যেত এবং রাতের নামাযের সময় ঘনিয়ে আসতো, তখন তিনি ছাদে উঠে আল্লাহকে ডাকতেন শক্তিশালী দু’আ’র মাধ্যমে।
إِلَهِي غَارَت النُّجُوْمُ، وَنَامَت العُيُوْنُ وَغَلَّقَت المُلُوْكُ أَبْوَابَهَا، وَبَابُكَ مَفْتُوْحٌ، وَخَلا كُلُ حَبِيْبٍ بِحَبِيْبِهِ، وَهَذَا مَقَامِي بَيْنَ يَدَيْكَ
মোটামুটি উচ্চারণ: ইলাহি গরাতি আল-নুজুমু, ওয়া-নামাতি আল-উইয়ুনু ওয়া-গাল্লাকাতি আল-মুলুকু আবওয়াবাহা, ওয়া-বাবুকা মাফতুহুন, ওয়া-খালা কুলু হাবিবিন বি-হাবিয়াবিহি ওয়াহাজা মাকা-মী বাইনা ইয়াদাইকা
অর্থ: হে আল্লাহ, তারাগুলো হারিয়ে গেছে, চোখ ঘুমে জড়িয়ে গেছে, রাজারা তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, আর খোলা আছে তোমার দরজা। প্রতিটি প্রেমিক তাদের প্রিয়জনের সাথে গোপনীয়তা খুঁজে পেয়েছে এবং এখানে আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে।
রাত অতিবাহিত হয়ে গেলে ফজরের সময় পর্যন্ত তিনি তার দু’আ চালিয়ে যেতেন এবং এই দু’আটির মাধ্যমে তার রাত শেষ করতেন: হে আল্লাহ! এখন রাত বিদায় নিচ্ছে এবং দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে, আমি ব্যাকুল হয়ে জানতে আগ্রহী, আপনি কি এই রাতটি আমার কাছ থেকে কবুল করেছেন, যাতে আমি নিজেকে অভিনন্দন জানাতে পারি, নাকি আপনি আমার কাছ থেকে রাতটি প্রত্যাখ্যান করেছেন, যাতে আমি নিজেকে সমবেদনা জানাতে পারি। আপনার শক্তির শপথ করে বলছি!
যতদিন আপনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন এই হবে আমার অঙ্গীকার। আপনার শক্তির শপথ! আপনি আমাকে তিরস্কার করলেও আমি কখনোই আপনার দরজা ছেড়ে যাব না। আপনার উদারতা এবং অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছুই আমার অন্তরে অবশিষ্ট থাকবে না।
হাফিজ ইবনে রজব বলেছেন যে, আপনি আপনার দিনগুলি রাজাদের দরজায় কাটান, কিন্তু রাতে যখন রাজাধিরাজ (সমস্ত রাজাদের রাজা) আপনাকে ডাকেন, আপনি তাঁর সামনে দাঁড়াতে ব্যর্থ হন এবং তাঁর আহ্বানে সাড়া দিতে ব্যর্থ হন, যদিও তিনি আপনাকে ডাকেন এবং আপনাকে কিছু দিতে চান।
এই দু’আ’য় আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার সাথে তার কথোপকথন উঠে এসেছে। এই দু’আ’য় যেমন ভয় আছে, তেমনি আছে প্রত্যাশা, আরো আছে এই ভরসা যে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আমাদের বার্তা শুনেন। আমাদের পিতা ইব্রাহীম (আ:) এবং তাঁর পুত্র যেমন কাবাগৃহ নির্মাণের পর তা কবুলের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালাকে ডেকেছিলেন, তেমনি হাবিবাহ আল-আদাউইয়াহ (রহ.) আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করেছেন যদি তিনি তার দু’আ গ্রহণ করেন তবে তিনি উদযাপন করবেন, এবং যদি তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন, তবে তিনি নিজের প্রতি সমবেদনা জানাবেন, এবং একই সাথে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কোন কিছুই তাকে তাঁর দরজা থেকে দূরে রাখবে না, এবং তাঁর অনুগ্রহ এবং ভালবাসা ছাড়া কিছুই তার হৃদয়কে পুর্ন করবে না।
খুব ব্যক্তিগত কোন দু’আ’ করার পর আমরা হয়তো ভাবতে পারি, ঠিক আছে, আমি আমার দু’আ করেছি, এখন অলৌকিক কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করছি। তাই প্রভুর সাথে খুব চমৎকার একটি কথোপকথনের পর হয় আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগি, নতুবা নিরুৎসাহিত হয়ে তাঁর থেকে দূরে সরে যাই। পরের দিন হয়তো এমন কিছু ঘটতে পারে যাতে আমাদের মনে হতে পারে যে আমাদের দু’আ’ কবুল হয়নি।
আমরা কখনই নিশ্চিতভাবে জানতে পারব না এই পৃথিবীতে আমাদের দু’আ’ কবুল হয়েছে কিনা। হাবিবাহ আল-আদাউইয়াহর দু’আর শক্তি এবং সৌন্দর্য একবার লক্ষ্য করুন, যখন রাত অতিবাহিত হতে চলেছে, তিনি চেয়েছেন আরো একটি সুযোগ তার প্রভুর দরজায় দাঁড়ানোর জন্য, এবং তিনি এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছেড়ে দেননি।
আমরাও প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আমাদেরকে তাঁর দরজা থেকে দূরে সরিয়ে না দেন, এবং আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা তাঁকে ডেকে চলে অবিরত, আমরা যেন তাঁর দরজায় কড়া নাড়তেই থাকি যতক্ষণ না তিনি আখিরাতে আমাদেরকে অভিবাদন জানান এবং তাঁর বাগানে আমাদের অভ্যর্থনা জানান, আল্লাহুম্মা আমীন!
যে দরজা সব সময় খোলা!
পর্ব:২
মূল: ড. ওমর সুলাইমান