Writing

সীরাতে ডুব দেওয়াটা কিন্তু বড্ড বিপদজনক!

ধরুন আপনি সিরাহ পাঠ শেষে তপ্ত দুপুরে জোহরের সলাতে দাঁড়ালেন। আপনার মাথায় প্রথমে কি আসবে জানেন? আপনি ভাববেন, আচ্ছা আমার নাবীর সলাত টা কেমন ছিলো? চৌদ্দশ বছর আগে কোনো এক দুপুর বেলা আমার নাবী ও তো জোহরের সলাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন! আপনার জেহেনে আসবে আপনার নাবী মরুভূমির প্রখর সূর্যতাপে তাঁর রব্বের সামনে দাঁড়াতেন, আর আপনার মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে কিংবা ঘরে এসির ঠাণ্ডা হাওয়া! আপনার মারাত্মক লজ্জা লাগবে। হয়তো আপনি জায়নামাজ ছেড়ে উঠে সবগুলো সুইচ বন্ধ করে সলাতে দাঁড়াবেন। যখন সিজদায় যাবেন আপনার ঘর্মাক্ত শরীরের কারণে আপনার জায়নামাজ ভিজে যাবে৷ হয়তো আপনার আম্মা ঘরে এসে অবাক হয়ে ভাববেন, ‘কি ব্যাপার?
আজকে কি ইলেকট্রিসিটি নেই বাসায়?’
আপনার আম্মা তো আর জানেন না যে কার মুহাব্বাতে আপনি এই তপ্ত দুপুরকে স্বেচ্ছায় সহ্য করে নিচ্ছেন!

ধরুন আপনি খাবার টেবিলে বসেছেন। বাহারি পদের খাবারের দিকে তাকিয়ে আপনার হঠাৎ চোখে পানি এসে গেলো। আপনার নাবী মাটিতে বসে মাথা নিচু করে সামান্য কিছু একটা মুখে দিতেন। আর আপনি চেয়ার টেবিলে পায়ের উপরে পা তুলে উদর পুর্তি করছেন ভেবে আপনার গাল ভিজে যাবে!

ধরুন আপনি সূরায়ে নাজম তিলাওয়াত করছেন। এই সেই সূরা, যে সূরার তিলাওয়াতে ঘোর লেগে গিয়েছিলো মুশরিকদের ও! সিজদার আয়াত আসলে যখন ক্বারি স্বয়ং আল্লহর হাবিব রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন, মুশরিকরাও মন্ত্র মুগ্ধের মতো লুটিয়ে পড়লো ভূমিতে! সূরার শেষের দিকে যখন সেই আয়াতটি আসলো, ‘ আল্লহর জন্য সিজদা করো এবং তাঁর ইবাদত করো’ তখন আপনিও সিজদা হয়তো করলেন, কিন্তু বুঝতে পারছিলেন সেই মুশরিকদের মতো মন্ত্রমুগ্ধ হতে পারে নি আপনার গুনাহ এ পরিপূর্ণ ক্বলব টা। আপনি অপরাধ বোধে ভুগতে ভুগতে নিজেকে প্রশ্ন করলেন, হায় কেন পারলাম না আমি?
কেনো পারলাম না ওদের মতো মুহাব্বাতে ডুব দিতে?
হুট করে বুঝতে পারলেন, আরে সেই তিলাওয়াতের ক্বারী তো ছিলেন স্বয়ং আমার হাবিব! আপনি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন। তাঁর তিলাওয়াত শোনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আপনার সকল দুনিয়াবী চাহিদাকে তুচ্ছ করে দিলো, আপনার কাছে মনে হলো, হায়! আমি কি করে সেই তিলাওয়াত শুনতে পারবো,যে তিলাওয়াত শুনে সেই নিকৃষ্ট মুশরিকরাও ক্ষনিকের জন্য নিজেদের মাকসাদ ভুলে এক রব্বের সিজদা করেছিলো!

সিরাহ পাঠের সময় যখন আপনি আম্মার রাঃ কে পড়বেন, যখন জানতে পারবেন মুসআব ইবনে উমায়ের রাঃ ইসলাম গ্রহণ তাঁর নিজের জন্ম দাত্রী মা তাঁকে এতো বেশি অত্যাচার করেছিলো যে তাঁর গায়ের চামড়া খোলস ছাড়ানো সাপের গায়ের মতো হয়ে গিয়েছিলো। বিশ্বাস করুন,ঠিক সেই মুহুর্তে আপনার সকল ব্যক্তিগত দুঃখ ফিকে হয়ে কেবল মাত্র একটা ই দুঃখ থাকবে, আপনি আকুল হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করবেন, ‘ইশ! আমার জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা গুলো এতো সহজ কেন?’

আপনার অন্তরকে যখন ইশকে রসূল গ্রাস করবে, তখন তো আপনি নিজেকেই মুহাব্বাত করতে ভুলে যাবেন! তখন আপনার আর তামাম দুনিয়ার কারো প্রতি মুহাব্বাত অবশিষ্ট থাকবে না। গায়রে মাহরাম তো বহুত দূর কি বাত,স্বীয় বাবা মাকেও মনে হবে অনেক দূরের কেউ। আপনার জেহেনে শুধু একটা কথা ই ঘুরবে,,

ইয়া রব্বে মুস্তফা!
মুঝে তেরি মাহবুব সে মুহাব্বাত হো গেয়া!

এবার আপনি ই বলুন, সিরাতে ডুব দেওয়াটা বিপদজনক ব্যাপার না?

লিখেছেন

নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং মৃত্যু সবকিছুই কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture