Abdullahil HadiQ/A

মাহরাম ও নন মাহরাম সম্পর্কীত ১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কিছু মানুষ তারা মাহরাম না কি মাহরাম নয়- এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই সংশয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। তাই এখানে এ জাতীয় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর একত্রিত করা হল যেগুলো বিভিন্ন সময় আমার কাছে করা হয়েছিলো।

মাহরাম কাকে বলে?

মাহরাম বলা হয় ঐ সকল পুরুষ অথবা নারীকে যাদেরকে স্থায়ীভাবে বিবাহ করা হারাম-চাই তা নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে হোক অথবা দুগ্ধপান করার কারণে হোক অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হোক।

১) চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো এবং খালাতো ভাই-বোনের সন্তানরা মাহরাম নয়:

চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো ও খালাতো ভাই ও বোনের মেয়েরা কি আমার জন্য মহারাম?

যেখানে স্বয়ং চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো এবং খালাতো ভাই-বোনরাই মাহরাম নয় সেখানে তাদের সন্তানদের মাহরাম হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ তারা সম্পর্কের দিক দিয়ে আরও নিম্ন স্তরের।
মোটকথা, চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো এবং খালাতো ভাই কিংবা বোনের মেয়েরা ছেলের জন্য এবং ছেলেরা মেয়েদের জন্য মাহরাম নয় বরং তাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ। সমাজে যদিও এদেরকে ভাগ্নে/ভাগ্নি বা ভাতিজা/ভাতিজি বলা হয় কিন্তু তারা যেহেতু আপন ভাই ও বোনের সন্তান নয় সেহেতু তারা মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে না।

এ কথা স্বত:সিদ্ধ যে, আলী বিন আবি তালিব রা. তার চাচাতো ভাই নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা রা. কে বিয়ে করেছিলেন।

খালা মাহরাম কিন্তু চাচী মাহরাম নয়:

আমি জানি যে, চাচী মাহরাম নয়। সুতরাং ভাতিজাকে চাচীর স্পর্শ করা বৈধ নয়। আর খালার ক্ষেত্রে উল্টো হুকুম। আমি কি ঠিক বলেছি?

উত্তর: আপনি ঠিক বলেছেন। খালা মাহরাম কিন্তু চাচী মাহরাম নয়।

সুতরাং চাচী-ভাতিজার মাঝে পর্দা রক্ষা করা ফরজ এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একে অপরকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। তবে খালা মা’র মতই মাহরাম। সুতারাং খালা-ভাগিনার মাঝে পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক নয়।

চাচী মাহরাম নয়-সুতরাং ভাতিজার সাথে চাচীর বিবাহ বন্ধন বৈধ:

চাচীর সাথে কি বিবাহ জায়েয?

উত্তর: চাচী যেহেতু মাহরাম নয় সেহেতু চাচা মারা গেলে বা তালাক দিলে যথানিয়মে ইদ্দত পালনের পর ভাতিজা চাচীকে বিবাহ করতে পারে।

খালা মাহরাম কিন্তু মায়ের চাচতো বোন মাহরাম নয়:

মায়ের আপন বোন অর্থাৎ খালা মাহরাম। কিন্তু মায়ের চাচাতো বোনও তো আমার খালা হয়। তিনি কি আমার জন্য মাহরাম হবেন?

উত্তর: মা’র নিজের বোন তথা আপনার আপন খালা মাহরাম কিন্তু মায়ের চাচাতো বোন আপনার জন্য মাহরাম নন।

খালা ও ফুফু মাহরাম কিন্তু চাচী ও মামী মাহরাম নয়:

আপন খালা ও ফুফু মাহরাম। কিন্তু চাচী ও মামী নন মাহরাম। আমাদের সমাজে এগুলোকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয় না। যেমন মনে করুন, তারা কেউ এমনিতেই কথা বলার সময় আমার ঘাড়ে হাত রাখলেন। সেক্ষেত্রে তো আমারও গুনাহ হবে। বিষয়টি আমি তখন তাদের কিভাবে বুঝাব? সরাসরি তখন রিএক্ট করব নাকি বুঝিয়ে বলব?
আর বুঝিয়ে বললে কি রকম?

উত্তর:
আপনি ঠিক বলেছেন, খালা মাহরাম (বিয়ে নিষিদ্ধ)। অনুরূপভাবে ফুফুও মাহরাম। কারণ তারা রক্ত সম্পর্কীয়। কিন্তু চাচী ও মামী মাহরাম নয়। কারণ তারা আপনার রক্ত সম্পর্কীয় কেউ নয়। বরং বাহির থেকে আসা মহিলা।
আল্লাহ তাআলা সূরা নিসা এর ২৩ নং আয়াতে যে সকল নারীকে বিয়ে করা হারাম করেছেন তাদের ১৪ শ্রেণীর একটি লিস্ট উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্য মামী ও চাচীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি।

সুতরাং তাদের সাথে পর্দা করা আবশ্যক। কেননা মামা অথবা চাচা মৃত্যুবরণ করলে বা তালাক দিলে যথানিয়মে ইদ্দত পালনের পর চাচী ও মামীকে বিয়ে করা জায়েজ।

আর চাচী ও মামী যদি দীনী জ্ঞানের ব্যাপারে অজ্ঞতা বশত: আপনার শরীরে হাত দিতে চায় তাহলে তাদেরকে সে সুযোগ দিবেন না এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে ইসলামের বিধানটা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। ইসলামের বিধান না জানার কারণে অনেকে একে কিছু মনে করে না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।আমীন।

স্বামীর পালক পিতা এবং মামা শ্বশুর স্ত্রীর জন্য মাহরাম নয়:

প্রশ্ন: আমার স্বামীকে বাল্যকাল থেকেই তার মামা প্রতিপালন করে বড় করেছে। যার কারণে আমার স্বামী তাকেই বাবা বলে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, আমার স্বামীর এই পালক পিতা (আমার মামা শ্বশুর) কি আমার জন্য মাহরাম?

উত্তর:
আপনার স্বামীকে তার মামা ছোটকাল থেকে লালন পালন করলেও আপনার জন্য তিনি মাহরাম বলে গণ্য হবে না। সুতরাং আপনার স্বামীর মামার সামনে আপনার জন্য পর্দা করা জরুরি। কেননা, তিনি তার জন্মদাতা পিতা নন বরং পালক পিতা। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মাহরাম হবে কেবল তার স্বামীর জন্মদাতা পিতা।
আল্লাহ ইলমে মাহরাম মহিলাদের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন:
وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ
“আর তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীগণ (তোমাদের জন্য হারাম)।”

সৎ শ্বশুর মাহরাম নয়:

প্রশ্ন: কোন মহিলার সৎ শশুর কি তার মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে?

উত্তর:
কোন মহিলার সৎ শশুর অর্থাৎ তার শাশুড়ির পূর্বের স্বামী (যার সাথে পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে) মাহরাম নয় অর্থাৎ তার সামনে পর্দা করা ফরয। মাহরাম হবে কেবল তার স্বামীর জন্মদাতা পিতা।
আল্লাহ ইলমে মাহরাম মহিলাদের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন:
وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ
“আর তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীগণ (তোমাদের জন্য হারাম)।”
সুতরাং উক্ত মহিলার স্বামী যেহেতু তার মায়ের ১ম স্বামীর ঔরসজাত পুত্র নয় সেহেতু তার স্ত্রী তার জন্য মাহরাম নয়।

ফুফা ও খালু মাহরাম নয়:

প্রশ্ন: চাচা, মামা এবং ফুফা ও খালু কি মাহরাম?
উত্তর: চাচা ও মামা মাহরাম কিন্তু ফুফা ও খালু মাহরাম নয়।

মেয়ের বাবা-মা’র চাচা এবং মামা মাহরাম:

প্রশ্ন: আমার বাবা বা মায়ের আপন চাচা ও মামা (যারা সম্পর্কে আমার দাদা ও নানা) কি আমার জন্য মাহরাম হবেন?

উত্তর:
আপনার বাবা ও মায়ের আপন চাচা বা মামা আপনার জন্য মাহরাম অর্থাৎ তাদের সাথে চিরস্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম। সুতরাং তাদের সাথে আপনার পর্দা ফরজ নয়।

বাবার আপন চাচা মাহরাম কিন্তু তার ছেলে মাহরাম নয়:

প্রশ্ন: বাবার আপন চাচার ছেলে কি আমার মাহরাম হবে- সে যদি বয়সে বাবার মতই হয়? সে তো সম্পর্কে আমার চাচা হয়। তাহলেও সে কি আমার মাহরাম হবে?

উত্তর:
বাবার আপন চাচা আপনার জন্য মাহরাম কিন্তু বাবার আপন চাচার ছেলে (বা বাবার চাচতো ভাই) আপনার জন্য মাহরাম নয়। সুতরাং তার নিকট পর্দা করা জরুরি তার বয়স বাবার মত হলেও।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মেয়ে ফাতিমা রা. এর বিবাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচা আবু তালিবের ছেলে আলী রা. এর সাথে হয়েছে-এটার তার বড় প্রমাণ।

[elementor-template id=”6775″]

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button