‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার’ কথাটা কি ইসলাম সম্মত
‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার বা প্রকৃতির প্রতিশোধ’ কথাটা কি ইসলাম সম্মত?
“রিভেঞ্জ অব ন্যাচার” কথাটা ইসলামের দৃষ্টিতে কতোটা যুক্তিযুক্ত? এর বিশ্লেষণ জানতে চাই।
Revenge of nature (রিভেঞ্জ অব ন্যাচার)।
অর্থ: প্রকৃতির প্রতিশোধ।
বলা হয়ে থাকে যে, “কেও যদি আমাদের প্রতি জুলুম বা অন্যায় করে তাহলে আমরা তাকে ক্ষমা করলেও প্রকৃতি তাকে কখনো ক্ষমা করে না। মানুষ তার মন্দ কাজের শাস্তি কোনও না কোনোভাবে পেয়েই যায়। আগে হোক আর পরে হোক। শাস্তি সে পাবেই। মানুষ ভুলে গেলেও প্রকৃতি কিছুই ভোলে না এবং প্রকৃতি ক্ষমাও করে না।”
এটাকেই ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার‘ বা প্রকৃতির প্রতিশোধ বলা হয়।
যেমন: বর্তমানে করোনা ভাইরাসকে ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার‘ বলা হচ্ছে। বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার‘ বলা হয়।
এমন কথা ও বিশ্বাস শরিয়ত সম্মত নয়। প্রকৃতি কখনই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না। সে কারও উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না আল্লাহর হুকুম ব্যতিরেকে। কারণ তা আল্লাহর সৃষ্টি এবং তারই নিয়ন্ত্রণাধীন। এ বিশ্বচরাচরে যা কিছু আছে তার একচ্ছত্র পরিচালনা, ও নিয়ন্ত্রণ একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ
"জেনে নাও, সৃষ্টি এবং নির্দেশনা (নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা) কেবল তারই নিয়ন্ত্রণাধীন।"
[সূরা আরাফ: ৫৪]
তিনি আরও বলেন,
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ
"আল্লাহই সব কিছুর স্রষ্টা আর তিনি সব-কিছুর উপরে কর্ণধার।"
[সূরা যুমার: ৬২]
তিনি আরও বলেন,
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ
"তিনি আসমান থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন।"
[সূরা সাজদাহ: ৫]
সুতরাং নেচার বা প্রকৃতি মানুষের অন্যায়-অপকর্মের শাস্তি দেয় বা প্রতিশোধ নেয়-এ কথা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ইসলামি আকিদা পরিপন্থী।
সঠিক ইসলামি বিশ্বাস:
এ ক্ষেত্রে সঠিক ইসলামি আকিদা হল,
ক. মানুষ যদি কারও উপর অন্যায় করে আর অন্যায়ের শিকার ও মজলুম ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বদ দুআ করে তাহলে আল্লাহ তা কবুল করে নেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেন-দুনিয়া অথবা আখিরাতে। তবে অন্যায়কারী ব্যক্তি যদি মজলুম ব্যক্তির নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বা সে তাকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে আল্লাহও তাকে ক্ষমা করে দেন।
খ. অনুরূপ ভাবে মানুষ যদি আল্লাহর নাফরমানি করে, পাপাচারে লিপ্ত হয়, অন্যায়-অপকর্ম করে তাহলে অনেক সময় ক্ষমা করে দেন আবার অনেক সময় তার কৃতকর্মের শাস্তি দেন। যেমন:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ
"তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।"
[সূরা শু'আরা: ৩০]
ইসলামের দৃষ্টিতে, এ পৃথিবীতে যত বিপদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তার মূল কারণ মানুষের সীমালঙ্ঘন এবং অন্যায় কৃতকর্ম। তাই আল্লাহ তাআলা মাঝেমধ্যে সৃষ্টির মধ্যে তার শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটান যেন, আল্লাহর অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘন কারী মানুষ সচেতন হয় এবং তাঁর পথে ফিরে আসে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
“স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।”
[সূরা রুম: ৪১]
অর্থাৎ মানুষের অন্যায়-অপকর্ম, অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, সীমালঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে জটিল-কঠিন রোগের প্রাদুর্ভাব, খরা-দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও বড় বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। আর যখন এগুলো আসে তখন কেবল খারাপ লোক ও অপরাধীদেরকে পাকড়াও করে না বরং সর্বস্তরের মানুষ তা দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হয়।
সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বমানবতার জন্য অপরিহার্য হচ্ছে, সকল পাপ-পঙ্কিলতা এবং সীমালঙ্ঘন মূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে এসে মহান আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা।
মোটকথা, মানুষের জীবনে ভাল-মন্দ যা কিছু ঘটুক না তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। নেচার কখনো স্ব প্রনোদিত হয়ে মানুষের ক্ষতি করে না বা কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয় না। আল্লাহর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে এমন কথা বলা কুফরি ও নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত। তবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে এবং আল্লাহকে সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক বলে বিশ্বাস করার পর কেউ যদি এমন কথা বলে, তাহলেও তা কুফরি না হলেও পরিহার করা উচিৎ। কারণ তা নাস্তিকদের কথার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন।
আমিন।
আল্লাহু আলাম।