Q/AAbdullahil Hadi

ইস্তিসকার সালাতে‌র পর বৃষ্টি না হওয়ার কারণ

ইস্তিসকার সালাতে‌র পর বৃষ্টি হওয়া-না‌ হওয়া সম্পর্কে যে বিশ্বাস রাখা জরুরি:
অনাবৃষ্টির সময় সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়া সুন্নত।‌ কেননা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদেরকে নিয়ে সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করেছেন। কেউ যদি পড়ে তাহলে সে সুন্নত পালন করার কারণে সওয়াব পাবে। বিশেষ করে যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি মৃত প্রায় সুন্নতকে পুনর্জীবিত করা হয় এবং শেষ জমানায় সুন্নত অনুযায়ী আমল করা হয় তখন এর মর্যাদা ও নেকি অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। যেমন: হাদিসে এসেছে,আবু সা’লাবাহ খুশানি রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامَ الصَّبْرِ الصَّبْرُ فِيهِ مِثْلُ قَبْضٍ عَلَى الْجَمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهِمْ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلاً يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِهِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ قَالَ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ
“তোমাদের পরবর্তীতে আছে ধৈর্যের যুগ। সে (যুগে) ধৈর্যশীল হবে মুষ্টিতে অঙ্গার ধারণকারীর মতো। সে যুগের আমলকারীর হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান সওয়াব।
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসুল, পঞ্চাশ জন পুরুষ আমাদের মধ্য হতে, নাকি তাদের মধ্য হতে?
তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্য হতে।”1

উল্লেখ্য যে, উম্মতের বিশৃঙ্খলার সময় সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য রয়েছে একশ শহিদের সমপরিমাণ সওয়াব।” এ হাদিসটি জইফ।

ইস্তিসকার সালাত আদায় করলে বৃষ্টি হওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এটি কিছুটা ব্যতিক্রমী ও বিশেষ পদ্ধতিতে মহান আল্লাহর কাছে একটি দুআ। আল্লাহ চাইলে দুআ কবুল করবেন অথবা করবেন না। এটি সম্পূর্ণ তাঁর ইচ্ছাধীন বিষয়।

অতএব কোথাও ইস্তিসকার নামাজ পড়ার পরও যদি বৃষ্টি না হয় তখন এ ধারণা করা যাবে না যে, দুআ কারীদের মধ্যে ইমান ও ইখলাসের ত্রুটি ছিল বা আল্লাহ তাদের দুআ প্রত্যাখ্যান করেছেন কিংবা তারা ব্যর্থ হয়েছে…ইত্যাদি।

আবার ইস্তিসকার নামাজের পরে বৃষ্টি বর্ষিত হলে যেন এই ধারণা না করা হয় যে, যিনি নামাজ পড়িয়েছেন তিনি আল্লাহর কামেল ওলি, বিরাট বুজুর্গ বা আল্লাহর খুব পছন্দনীয় মানুষ। তিনি আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের কারণে আল্লাহর নিকট থেকে বৃষ্টি নিয়ে এসেছেন!

বৃষ্টি হলেও এই বিশ্বাস করার সুযোগ নাই। কেননা বৃষ্টি দেওয়া-না দেওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার উপরে নির্ভরশীল। আমাদের কর্তব্য তো কেবল, নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দুআ করা। ইস্তিসকার নামাজ পড়ার পর বৃষ্টি না হলেও সুন্নত আদায়ের কারণে সওয়াব অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।

তাছাড়া এ সালাতের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয় যে, মহান আল্লাহ এ বিশ্ব চরাচরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক। তিনি সর্বময় দয়ালু ও দাতা। তার দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া সৃষ্টি জগত নিতান্তই অচল। আমরা অতিশয় দুর্বল, অসহায় এবং তাঁর করুণার ভিখারি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ - وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ
“হে মানবজাতি, তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী আর আল্লাহ হলেন অভাব মুক্ত ও সর্বময় প্রশংসিত।”2

ইস্তিসকার সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ চাওয়ার পাশাপাশি এই অনাবৃষ্টির ফলে আরও বড় ধরনের বিপদ-বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতি থেকেও আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ কামনা করা হয়।

আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ما من مسلم يدعو بدعوة، ليس فيها إثم ولا قطيعة رحم إلا أعطاه الله بـها إحدى ثلاث : إما أن يعجل له دعوته، وإما أن يدخرها له في الآخرة وإما أن يصرف عنه من السوء مثلها. قالوا : إذا نكثر قال : الله أكثر
“যখন কোনও মুমিন ব্যক্তি দুআ করে, যে দুআতে কোনও পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনও এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দুআর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনও বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুআ করতে থাকবো। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন।”3

এ হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনো বৃথা যায় না।

সুতরাং আল্লাহর নবির সুন্নত পালনের মাধ্যমে সওয়াব অর্জন, নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে মহান দয়ালু ও দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের করুণা প্রার্থনা এবং অনাবৃষ্টির ফলে অনাগত বিপদ-বিপর্যয়, ক্ষয়-ক্ষতি, দুর্ভিক্ষ, রোগব্যাধী-মহামারী ইত্যাদি থেকে পরিত্রাণ কামনা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে আমাদের ইস্তিসকার সালাত আদায় করা উচিত।

মোটকথা, এখানে প্রাপ্তি ছাড়া ব্যর্থতা এবং লাভ ছাড়া ক্ষতির কিছু নাই।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
আমিন।
আল্লাহু আলাম।

  1. আবু দাউদ ৪৩৪৩, তিরমিযী ৩০৫৮, ইবনে মাজাহ ৪০১৪, ত্বাবারানী ১৮০৩৩, সহীহুল জামে’ ২২৩৪ ↩︎
  2. সূরা ফাতির: ১৫ ↩︎
  3. বুখারী : আল-আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ, সহীহ-আলবানি ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture