Q/AAbdullahil Hadi

কুরবানী দেয়া কি ওয়াজিব না কি সুন্নত

কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয়; সুন্নতে মুআক্কাদাহ।
কুরবানী দেয়া কি ওয়াজিব না কি সুন্নত? কেউ যদি সামর্থ্য থাকা সত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে কুরবানী না দেয় তাহলে কি গুনাহ হবে?
সামর্থবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা সুন্নতে মুআক্কাদা। এটিই জুমহুর তথা অধিকাংশ ইমামদের অভিমত। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে তা বাদ দেয়া ঠিক নয়। কিন্তু যেহেতু ওয়াজিব নয় সেহেতু কেউ যদি কুরবানী না করে তাহলে গুনাহগার হবে না ইনশাআল্লাহ।

পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর নিকট ধনী শ্রেণীর উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব। তার নিকট ধনী বলতে তাকে বুঝায় যে যাকাতের নেছাবের মালিক। এমতানুসারে সামর্থ থাকার পর কুরবানী না করলে গুনাগার হতে হবে।

কিন্তু তার ছাত্র আবু ইউসুফ রাহ. তা বিরোধিতা করে জুমহুরের সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন।

যাহোক নিম্নে এ বিষয়ে সাহাবী ও তাবঈদের অভিমত পরিবেশন করা হল। তাহলে এর মাধ্যমে কুরবানী ওয়াজিব বা সুন্নত হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

দলীলের আলোকে কুরবানী সুন্নত না কি ওয়াজিব?

জমহুর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের মতে কুরবানী দেয়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব। আবু বকর (রা:), উমর (রা:), আবু সাঈদ (রা:), আবু মাসউদ বাদারী (রা:), বিলাল (রা:) প্রমুখ ছাহাবীগণ এই মতই প্রকাশ করতেন। (তাফসীর কুরতুব)

দলীল:

عن أم سلمة أن النبي قال: إذا دخلت العشر وأراد أحدكم أن يضحي فلا يمس من شعره وبشره شيئا
উম্মে সালামা (রা:) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যিলহজ্জের (প্রথম) দশক প্রবেশ করলে তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী দিতে ইচ্ছুক সে যেন তার চুল এবং (শরীরের) চর্ম হতে কিছুই স্পর্শ না করে (অর্থাৎ না কাটে)”।
(ছহীহ মুসলিম)

ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন: উক্ত হাদীছের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয়। কারণ রসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“তোমাদের কেউ যদি কুরবানী করতে ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন ……. না করে।”
যদি কুরবানী করা ওয়াজিব হত তাহলে এভাবে বলা হত: তাহলে সে যেন কুরবানী না দেয়া পর্যন্ত নিজের চুল প্রভৃতি স্পর্শ না করে।”1

ইমাম তিরমিযি বলেন: (৪/৯২)
العمل على هذا من أهل العلم أن الأضحية ليست واجبة ولكنها سنة من سنن النبي صلى الله عليه وسلم يستحب أن يعمل بها وهو قول سفيان الثوري وابن المبارك
“এর উপরই আহলে ইলমদের আমল রয়েছে যে, কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয়। তবে উহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যতম সুন্নাত যার উপর আমল করা মুস্তাহাব। ইহা সুফিয়ান সাওরী ও আব্দুল্লাহ বিনুল মুবারক প্রমুখদের কথা অভিমত।”2

সালাফে ছালেহীনের অধিকাংশের এটাই অভিমত যে কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

হাজীদের কুরবানী প্রসঙ্গ:

হাজীগণ হজ্জের মাঠে যে পশু কুরবানী দেয় তাকে আরবীতে ‘হাদি’ বলা হয়; কুরবানী বলা হয় না। যারা তামাত্তু ও ক্বেরান হজ্জ করেন তাদের উপর এ ‘হাদি’ যবেহ করা ওয়াজিব। অবশ্য হাজিগণ আলাদা ভাবে কুরবানীও করতে পারে। তবে এটা তাদের উপর ওয়াজিব নয়। (বিদ্রঃ আল মুগণী ফি ফিক্বহিল হাজ্জে ওয়াল উমরাহ)

কুরবানী সুন্নতে মুআক্কাদা হওয়ার ব্যাপারে পূর্বসূরীদের মতামত ও কর্মনীতি

নিম্নে সালাফে ছালেহীনের কুরবানী সম্পর্কে কতিপয় বক্তব্য ও কর্মনীতি পরিবেশিত হল যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয় বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

১মঃ
– عن الشعبي عن أبي سريحة قال: ((لقد رأيت أبا بكر وعمر رضى الله عنهما وما يضحيان عن أهلهما خشية أن يستن بهما…))(( أخرجه عبد الرزاق في مصنفه بإسناد صحيح -مصنف عبدالرزاق برقم ৮১৩৯ انظر: فقه الأضحية
ইমাম শাবী সুরাইহা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “আমি আবু বকর ও ওমার (রা:) কে দেখেছি তাঁরা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন না এই আশংকায় যে, মানুষ তাদের এ কাজকে সুন্নত বানিযে নিবে। …”3

২য়ঃ
عن أبي وائل قال: قال أبو مسعود الأنصاري: إني لأدع الأضحى وإني لموسر مخافة أن يرى جيراني أنه حتم على (رواه عبدالرزاق برقم ৮১৪১ وإسناده صحيح، انظر: فقه الأضحية
আবু ওয়াইল হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু মাসউদ আনসারী বলেন: “আমি সচ্ছল হওয়ার পরেও কুরবানী করা পরিত্যাগ করি এজন্য যে, যাতে আমার প্রতিবেশীরা মনে না করে যে তা আমার উপর ওয়াজিব।”4

অলোচ্য হাদীছের আ’মাশ ‘মুদাল্লেস’ হলেও যেহেতু মানসূর তার ‘মুতাবাআত’ করেছে তাই ওটা আর ধর্তব্য নয়।

৩য়ঃ

ইবনু ওমার (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি কুরবানী সম্পর্কে বলেন: هى سنة ومعروف
অর্থ: “উহা সুন্নাত ও সোওয়াবের কাজ।”5

৪র্থঃ
أن ابن جريج قال لعطاء: أواجبة الأضحية على الناس؟ قال: لا، وقد ذبح رسول الله صلى الله عليه و سلم
ইবনু জুরাইজ বলেন: আমি আত্বাকে প্রশ্ন করলাম, কুরবানী করা কি মানুষের উপর ওয়াজিব?
তিনি বললেন: “না, ওয়াজিব নয়। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানী করেছেন।”6

কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে হানাফীগণ যে সব দলীল পেশ করেন তা হয় দুর্বল নতুবা দাবীর সাথে মিল নেই। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়া পৃঃ ১৯)

শাইখ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম

  1. বায়হাকী ফিস সুনান (৭/২৬৩) ফিকহুল উযহিয়াহ্ ১২-১৩ ↩︎
  2. সুনান তিরমিযী ৪/৯২ ↩︎
  3. মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮১৩৯ সনদ ছহীহ। দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১৫ ↩︎
  4. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক (৮১৪৯) ↩︎
  5. তালীকে বুখারী, ফাতহুলবারী ১০/৬ ↩︎
  6. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক (৮১৩৪)সনদ ছহী দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১৭ ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture