Q/A

কে সেই মহা পরিকল্পনাকারী?

এটি একটি বিষ্ময়কর ঘটনা। যেটা আমাদের সবার জীবনেই ঘটেছে কিন্তু সেই স্মৃতিটা আমাদের কারো মনে নেই। সেটা হলো মানবশিশু হিসেবে জন্মগ্রহণ করার স্মৃতি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন? কি করে আমরা এক ফোঁটা শুক্রাণু থেকে এলাম?
এতো সূক্ষ্ম, জটিল, যান্ত্রিক ভাবে নিখুঁত দেহটা কিভাবে মায়ের পেটে মাত্র একটি কোষ থেকে তৈরি হলো?
আজ আমি সেই স্মৃতির কথা বলবো যখন আপনি ছিলেন একটি মাত্র কোষ এবং সেখান থেকে আপনার হাত, পা, মাথা, চোখ তৈরী হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মানবশিশুতে পরিনত হলেন। জন্মগ্রহণ করলেন। সেই অজানা একটি স্মৃতির ঘটনা!
যা বিষ্ময়ে ভরপুর!

আপনাকে নিয়ে যাবো সেই স্মৃতির চলচ্চিত্রে, যার কোনো ঘটনাই আপনার মনে নেই। তো চলুন শুরু করি সেই বিষ্ময়কর ঘটনা, মহা আশ্চর্যজনক বিষয়, বংশগতির মৌলিক ধারার প্রতিচ্ছবি, মানুষের অস্তিত্ব টিকে রাখার নিখুঁত এক মেকানিজম।

শুক্রাণু কি?

১.
আমরা সকলেই জানি একটি শুক্রাণু এবং একটি ডিম্বাণুর মিলনে তৈরি হয় জাইগোট। জাইগোট থেকে ধীরে ধীরে মানবশিশু।
তার আগে আসুন দেখি, শুক্রাণু কি?
কিভাবে তৈরি হলো এটি?
এবং কোন কারখানায় তৈরী হয় এটি?

শুক্রাণু একটি কোষ। যার কাজ হচ্ছে নারীদেহের ডিম্বাণুকে পুরুষের উপাত্ত প্রদান করা। আপনি এটিকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন, শুক্রাণুর চেহারা এ কাজের উপযোগী করে বিশেষভাবে নির্মিত একটি মাইক্রো যন্ত্রের মতো। শুক্রাণুর সামনের অংশ বর্মসজ্জিত। প্রথম বর্মের ভিতরে আরেক স্তর বর্ম রয়েছে এবং এই দ্বিতীয় স্তরের নীচে রয়েছে শুক্রাণু কর্তৃক বহন করা মালপত্র।

এই মালপত্র হচ্ছে পুরুষের ২৩ টি ক্রোমোজম। যার ভেতর লুকায়িত আছে মানব দেহের খুটিনাটি তত্ত্ব। অর্থাৎ কেমন হবে আপনার হাত, পা, মুখ, চোখ, গলা! আপনার জন্মের জন্য এই ২৩ টি ক্রোমোজম ওয়ালা শুক্রাণু এসে মিলিত হয় মায়ের দেহের ডিম্বাণুর ২৩ টি ক্রোমোজমের সাথে। শুক্রাণুর বর্ম তার যাত্রাপথের সমস্ত বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে, যাতে এই মূল্যবান মালপত্র যথাস্থানে পৌঁছাতে পারে।

এরপর আরও বিষ্ময় আছে, শুক্রাণুর গঠন শুধু এতটুকুই নয়। এর মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে একটি ইঞ্জিন, যার শেষাংশ শুক্রাণুর লেজের সাথে সংযুক্ত। ইঞ্জিনের শক্তি লেজটিকে প্রপেলারের মতো ঘোরায়, এর ফলেই শুক্রাণু দ্রুত বেগে ছোটে।

যেহেতু শুক্রাণুর ইঞ্জিন আছে, তাই চলতে হলে এর জ্বালানীরও প্রয়োজন। এই প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে ইঞ্জিনের সবচেয়ে কার্যকারী জ্বালানী – ফ্রুকটোজ, রাখা হয়েছে শুক্রাণুকে ঘিরে থাকা তরলের মধ্যে। এভাবে সারা পথের জ্বালানী সরবরাহ করা হয়।

শুক্রাণু দেখতে অনেকটা রকেটের মতো এবং এটি গতিতেও প্রায় রকেটের গতিতে মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে। একবার ভাবুন, চাঁদে অবতরণের জন্য চাঁদের ভূপৃষ্ঠে মাটি, পাথর, বায়ুমন্ডল পরিক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সাথে দু’জন মানুষ পাঠানোর জন্য, একটি রকেটকে ঠিক উপযুক্ত যন্ত্রপাতি দিয়েই তৈরি করা হয়। উপযুক্ত যন্ত্রপাতি নিয়েই পাঠানো হয়। এর ইঞ্জিন, প্রয়োজনীয় জ্বালানী, যোগাযোগ মডিউল, ক্যাপসুল ইত্যাদি নিখুঁতভাবে কারখানায় তৈরী করে রকেটটিকে বানানো হয়। যাতে ঠিক ঠিক কাজগুলো রকেটটি করতে পারে।

তেমনি মাতৃগর্ভের ডিম্বাণুতে অবতরণ করবে একটি শুক্রাণু, সেটি ডিম্বাণুতে গিয়ে কি কি করবে, কি কি নিয়ে যাবে, কতোটি ক্রোমোজম নিয়ে গেলে তৈরি করতে পারবে মানুষের হাত, পা, চোখ, নাক, কান, গলা, জিহ্বা? আর চলতি পথেই বা কি কি সরঞ্জাম লাগবে? ঠিক চাঁদে যে উদ্দেশ্যে রকেটকে পাঠানোর জন্য তাকে একটি কারখানায় তৈরী হতে হয়েছে সকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সাথে। ঠিক তেমনি ভাবেই কি শুক্রাণু নামক রকেটটিকেও কোনো কারখানায় তৈরি হতে হয়েছে। সম্পূর্ন অপরিচিত একটি জগৎ ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জামের সাথে।

হ্যাঁ। শুক্রাণুকেও রকেটের মতোই একটি কারখানায় তৈরী করা হয়েছে। তবে এটি মানুষের দেহের ভেতরই, মানুষের দেহে টেস্টিকলের ভেতর এই শুক্র তৈরির কারখানা অবস্থান করছে। সেখানে রয়েছে ৫০০ মিটার লম্বা একটি আণুবীক্ষণিক নল। কোনো আধুনিক কারখানায় যেভাবে কনভেয়র-বেল্ট এসেম্বলী সিস্টেম কাজ করে, ঠিক সেভাবেই এই নলের ভেতর শুক্রাণু উৎপাদিত হচ্ছে। শুক্রাণুর বর্ম, ইঞ্জিন, এবং লেজের অংশ একের পর এক জোড়া লাগানো হয় এই কারখানায়। ফলশ্রুতিতে যা পাওয়া যায়, তা রকেটের ইন্জিনিয়ারিং সিস্টেম থেকেও বিষ্ময়কর! কেননা, এটি এমন একটি রকেট, যা থেকে তৈরি হবে পূর্ণাঙ্গ একটি দেহ!

আসুন এখান থেকে কিছু প্রশ্ন করি।

  • মায়ের দেহ সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনেই, কিভাবে এই অচেতন কোষগুলো সঠিক আকৃতিতে শুক্রাণু তৈরি করতে পারে?
  • কিভাবে তারা বর্ম, ইঞ্জিন এবং লেজ তৈরী করা শিখলো যা মায়ের দেহে শুক্রাণুর জন্য প্রয়োজনীয়?
  • কোন বুদ্ধিবলে সঠিক পরম্পরায় তারা এগুলো জোড়া লাগায়?
  • কিভাবে তারা জানে যে, শুক্রাণুকে রকেটের মতো ছোটাতে জ্বালানী হিসেবে ফ্রুকটোজ দরকার হবে?
  • কিভাবে তারা ফ্রুকটোজ চালিত ইঞ্জিন বানাতে শিখলো?

এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর। কেউ একজন তো অবশ্যই আছেন এর পিছনে, পরিকল্পনাকারী। যার এই মহাপরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো, মানবজাতির বংশধারা অব্যাহত রাখা। শুক্রাণু গঠনের এই আশ্চর্য প্রক্রিয়ার স্রষ্টা যে মহান আল্লাহ পাক, তিনিই যে শুক্রাণু সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে কুরআনে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেছেনঃ

"আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে। তাহলে কেনো তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস করো না? তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে? তোমরা তা সৃষ্টি করো, না আমি সৃষ্টি করি?" 
(সূরা আল-ওয়াকিয়াঃ ৫৭-৫৯)

২.
প্রায় ২৫০ মিলিয়ন শুক্রাণু একই সময়ে মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে। সবারই লক্ষ্য একটাই, ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে বাচ্চা উৎপাদন। লজিক অনুযায়ী সবাই যদি নিষিক্ত করতে পারতো তাহলে ২৫০ মিলিয়ন বাচ্চা জন্ম নিতো! কিন্তু এমনটা কখনো হয় না। মাত্র ৩০০-৫০০ শুক্রাণু বেঁচে থাকে। বাকিরা সব মাতৃগর্ভে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংসের জন্য যে ঘন এসিডের দ্রবণ থাকে, সে এসিডে ধ্বংস হয়ে যায়। এটিও পরিকল্পনার একটি অংশ।

আবার, এই এসিড এতোটাই শক্তিশালী যে, সব শুক্রাণুকেই মেরে ফেলতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। আল্লাহ পাক এটারও ব্যাবস্থা রেখেছেন। শুক্রাণু যখন তৈরি হয়, তখন শুক্রাণুর সাথে এক প্রকার রাসায়নিক উপাদান মিশে যায়। এই রাসায়নিক উপাদান এসিডকে আংশিক প্রশমিত করতে পারে তাই কয়েকশো শুক্রাণু টিকে থাকে।

অবশেষে, শত শত শুক্রাণু এসে ডিম্বাণুর কাছে হাজির হয়। এর মধ্যে মাত্র একটি শুক্রাণুই নিষিক্ত করতে পারবে। এমন সময় তারা আরেকটি বাঁধার সম্মুখীন হয়। ডিম্বাণুকে ঘিরে থাকা শক্ত আবরণকে ভেদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর এ বাঁধাকে অতিক্রম করার জন্য শুক্রাণু গুলোর মাঝে বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি হয়। শুক্রাণুর মাথায় বর্মের নিচে অনেকগুলো গোপন অস্ত্র রয়েছে, যা এতক্ষণ লুকায়িত ছিলো। এগুলো খুব ছোট এবং দ্রবীভূত করার ক্ষমতা সম্পন্ন এনজাইম গ্রন্থি। এই গ্রন্থিগুলো প্রতিরোধ আবরণকে দ্রবীভূত করে তাতে গর্ত তৈরী করে, যার মধ্য দিয়ে শুক্রাণু এই আবরণের ভেতর প্রবেশ করে। যখন শুক্রাণুটি আবরণের ভিতর নড়াচড়া করতে থাকে তখন তার বর্মটি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে অবশেষে তা খসে পড়ে।

শুক্রাণু ডিম্বানুতে প্রবেশ করার পরপরই আরেকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। এতক্ষণ পর্যন্ত শুক্রাণুর সাথে আসা লেজটি হঠাৎ করেই পরিত্যাগ করে। কেননা তা না হলে সর্বদা ঘুর্ণায়মান লেজটি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে ডিম্বাণুকে ধ্বংস করে ফেলত। শুক্রাণুর এই লেজ পরিত্যাগ করার ঘটনাটির সাথে একটি রকেটের বায়ুমন্ডল ত্যাগ করার পর তার তেলের ট্যাংক থেকে বিমুক্ত হওয়ার ঘটনা সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

এখন প্রশ্ন হলো যে, শুক্রাণু একটি অচেতন জৈবিক অঙ্গাণু, যার কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই। সেই শুক্রাণুটি কিভাবে বুঝতে পারলো, তার এখন লেজ ফেলে দেওয়ার সময় এসেছে? কিভাবে জানতে পারলো লেজ সহ ঢুকলে ডিম্বানুটি ধ্বংস হয়ে যাবে? অতএব, এটা যে নির্ভুল পরিকল্পনার অংশ তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এরপরও কেনো আমরা সেই মহান পরিকল্পনাকারীকে অস্বীকার করি?

এরপর বিশ্বের সবচেয়ে অলৌকিক ঘটনাগুলোর একটি হতে যাচ্ছে আপনার সাথে। তা হলো সম্পূর্ণ নতুন একটি মানুষ সৃষ্টিকল্পে দুই সেট জেনেটিক তথ্য একসাথে মিলিত হতে যাচ্ছে। এই মিলনের পর উৎপত্তি হলো মানব সন্তানের প্রথম কোষ- “জাইগোট”।

যখন আপনি জাইগোট রূপে ছিলেন তখন এর ভেতর লুকিয়ে ছিলো – আপনার চোখ, গায়ের রঙ, চুলের রং, চেহারার গড়ন, এসব যাবতীয় তথ্যের সাংকেতিক ভাষা (কোড)। ৭ বছর থেকে ৭০ বছরে কেমন হবে আপনার গঠন, সবকিছু এতে লেখা রয়েছে। এখন কথা হলো, আপনি যখন জাইগোট রূপে ছিলেন তখন জরায়ুতে ঘুরপাক খেতে খেতে ধ্বংস হয়ে যেতেন। কিন্তু আল্লাহ পাক তা হতে দেন নি। জরায়ুর গায়ে লেগে থাকার জন্য কোষগুলো থেকে বিশেষ এনজাইম নিঃসৃত করিয়েছেন এবং তা দ্বারা জরায়ুর দেয়ালকে শক্তভাবে আটকে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।

ঠিক এই ব্যাপারটিকে কুরআনে আল্লাহ পাক এভাবে বলেছেন –

"পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক্ব থেকে।"
(সুরা আল আলাক্বঃ ১-২)

আরবীতে আলাক্ব অর্থ যা কোনো কিছুতে শক্তভাবে আটকে থাকে।

এরপর আপনার জাইগোট বহুসংখ্যক প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করলো। একটি মাত্র কোষ, ধীরে ধীরে বিভাজিত হতে হতে বিলিয়ন মিলিয়ন কোষে পরিণত হলো। এসকল কোষ এখন অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ, কঙ্কাল ও মস্তিষ্ক তৈরি করবে। কোষের ফাঁকা স্থানে তৈরি হচ্ছে আপনার মস্তিষ্কের ১০ বিলিয়ন কোষ। এরপর শুধু মস্তিষ্কই নয়, অন্যান্য সকল কোষই ভ্রুণ হতে বিভাজিত হয়ে যার যার নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা দখল করে। এবং যেখানে যেখানে সংযোগ স্থাপন করতে হবে ঠিক ওখানেই হাজির হয়ে যায়।

কে সে মহান সত্ত্বা, যিনি বুদ্ধিহীন কোষগুলোকে একটা দারুণ বুদ্ধির আওতায় এনে নির্দিষ্ট স্থানে সংযোগ ঘটান? যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে আপনার হাত, পা, আঙুল, চোখ, ঠোঁট, হৃদপিন্ড! কে আপনার হাজারো শিরা উপশিরার মধ্য থেকে রক্ত প্রবাহ করে দিলেন? এই রক্ত সংবহন ব্যাবস্থার দৈর্ঘ্য আবার ৪০,০০০ কিলোমিটার। তা প্রায় পৃথিবীর পরিধির সমান। কতো মহান প্রকৌশলী তিনি! আছে কি পৃথিবীতে তিনি ছাড়া অন্য কেউ?
যে এভাবে আপনার রক্ত সঞ্চালন করে দেখাতে পারবে?

আসুন আরেকটি বিস্ময়কর ঘটনা দেখি। তার আগে আপনি আপনার হাতের দিকে তাকিয়ে আঙুলের ফাঁকা স্থানগুলো একটু দেখে নিন। কিভাবে এটি তৈরি হয়েছিলো জানেন কি?
আপনি যখন ভ্রুণ অবস্থায় ছিলেন তখন একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। তা হলো – লক্ষ লক্ষ কোষ একসাথে আত্মহত্যা করে।

এই মরণাপন্ন কোষগুলো নির্দিষ্ট রেখা বরাবর মারা যায়, অবশিষ্ট কোষগুলো মৃত কোষগুলোকে খাদ্য হিসেবে খেতে শুরু করে। এবং সুনৈপুণ্য ভাবে রেখা বরাবর তৈরি হয় ফাঁকা স্থান। যা নির্ধারণ করে দেয়, আপনার কোন আঙুলটি কেমন হবে! ঠিক সেভাবেই আপনার হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকা স্থান তৈরি হয়েছিলো। এটা না হলে আঙুলগুলো হতো হাঁসের পায়ের পাতার মতো লেগে থাকা!

প্রশ্ন হলো –

  • হঠাৎ কিছু কোষ কেনো আত্মহত্যা করে? কার নির্দেশে?
  • কিভাবে তারা বুঝতে পারে এখনই আত্মহত্যা করতে হবে, যার কারণে নির্দিষ্ট সময়েই আঙুলগুলো তৈরি হলো আপনার?
  • কোষ গুলো কিভাবে জানে, তার মৃত্যু মানবশিশু গঠনের উদ্দেশ্য সাধন করবে?
  • তারা কিভাবে একটি রেখা বরাবর মরে গেলো? যার ফলে তৈরি হলো বৃদ্ধা আঙুল, অনামিকা আঙুল সহ পাঁচ প্রকার চমৎকার আঙুল!

একবার ভেবে দেখেছেন?
হাতের পাঁচ আঙুল সমান হলে কি হতো?
না ভেবে থাকলে পাঁচ আঙুল সমান করুন। এরপর ভাত খেতে বসুন, নিজেই বুঝবেন কতোবড় সমস্যা!
ভ্রুণ অবস্থায় কিছু কোষ হাতের মতোই নিখুঁত ভাবে আপনার পা ও পায়ের পাতা তৈরি করে।

প্রশ্ন হলো – তারা কি করে জানলো, যে আপনি পৃথিবীতে হাঁটবেন, এজন্য পা তৈরি করতে হবে?

ধীরে ধীরে এভাবে কোষগুলোর বিভিন্ন অঙ্গ গঠনের পর আপনি এখন চার মাসের মানব শিশু। এরপর চোখের কোটর তৈরি হবে আপনার। সেখানে তৈরি হবে চোখের কোষ, মনি, কর্নিয়া, লেন্স ইত্যাদি। এবং তা এতোটাই নিখুঁত ভাবে যে, মনে হবে এগুলো যেনো একে অপরের সাথে কথা বলে নিজেদের নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারন করে নিয়েছে। ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো আপনার চোখ, যা পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত ক্যামেরা। এরপর কিছু কোষ বিভাজিত হয়ে তৈরি করছে আপনার কান, যা পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সূক্ষ্ম শব্দ-গ্রাহক যন্ত্র।

আচ্ছা বলুন তো কিভাবে এই কোষগুলো এতো নিখুঁত ভাবে আপনার হাত, পা, আঙুল, চোখ, কান, ঠোঁট ইত্যাদি বানিয়ে যাচ্ছে? এরা কি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো ইন্জিনিয়ারিং কলেজে পড়েছে? নাকি সবচেয়ে বড় ডাক্তারি ডিগ্রি হাসিল করেছে?
আর এইসব ঘটনা আমাদের সকলের সাথেই ঘটেছে। এসব যে আল্লাহ পাকেরই কুদরত ছাড়া অন্য কিছু নয়, এ ব্যাপারে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ করেছেন –

"আল্লাহ তোমাদেরকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন,যাতে তোমরা অনুগত্য স্বীকার করো।"
(সূরা আন নাহলঃ ৭৮)

আজকের বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ পাক যা জানিয়েছেন, তা আজ ধীরে ধীরে প্রমাণ করতে পারছি। বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে জরায়ুতে ৩ টি পর্যায় থাকে। অথচ তা অনেক আগেই কোরআনে আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন

"তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা, সার্বভৌমত্ব তাঁরই। তিনি ব্যাতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?
(সূরা আয যুমারঃ ০৬)

তাই এটা পরিস্কার যে, আমরা কেউ পৃথিবীতে এমনি এমনি আসিনি। আল্লাহ পাকের অপরিসীম কুদরতের মধ্য দিয়েই এসেছি। আপনার, আমার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। তিনিই অস্তিত্ব দান করেছেন। তাই আসুন অন্তত একটাবার, সেই মহান স্রষ্টাকে স্মরণ করে আলহামদুলিল্লাহ বলি। তাঁর হুকুমগুলো পালনের জন্য নিয়ত করি।

যিনি এতো আশ্চর্য জনক ভাবে আপনাকে, আমাকে মায়ের গর্ভ থেকে নিয়ে এসেছেন, নিশ্চয়ই তিনি মৃত্যুর পর, লাশ গলে-পঁচে যাওয়ার পরও কবর থেকে আবার আমাদের উত্তোলন করার ক্ষমতা রাখেন।

লিখেছেন

আরিফ আব্দুল্লাহ

আরিফ আব্দুল্লাহ

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture