Writing

ইতিহাসের জানালায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

এক

একটা দিন আসছে যেটাকে সামনে রেখে তোমার কতো আয়োজন, কতো মহাযজ্ঞ — ‘প্রিয়তমাকে হলুদ শাড়িতে দেখতে চাওয়া, তার চোখের কাজলে লেপ্টে যাওয়া, কিংবা তার আবেশের উষ্ণ ছোঁয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা, কিংবা তার মায়াবি চোখে তাঁকিয়ে শত সহস্র বছর কাটিয়ে দেওয়া।’

সেই দিনটিকে সবাই বলে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।’ ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ এর ইতিহাস কি জানা আছে তোমার?
যেই ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে এতো আয়োজন, এতো সাজসাজ-রবরব উন্মাদনা সেটা যে চোরাবালি ছাড়া আর কিছু নয় সেটা কি জানা আছে তোমার? এই চোরাবালিতে ডুব দিয়ে তুমি যে তোমার ঈমান হারাতে বসেছ সেই খেয়াল কি আছে তোমার? তাহলে চল ইতিহাসটা একটু দেখে আসা যাক…

২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’ নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ‘ক্লডিয়াস’ তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলে। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের কারনে ‘ক্লডিয়াস’ ‘ভ্যালেন্টাইনকে’ মৃত্যুদন্ড প্রধান করেন।

মৃত্যুর আগে ‘ভ্যালেন্টাইন’ অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল — ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ ‘From your Valentine।’ মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মানুষেরা ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে।

ঐতিহাসিকরা সবাই একমত ‘ভ্যালেন্টাইনকে’ অন্ধ মেয়েটিকে ভালোবাসার জন্য মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি বরং মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়েছিল খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করার কারনে। কেননা তখন সবদিকে মূর্তিপূজার ছড়াছড়ি ছিল। আমাদের ছানিপড়া চোখ শুধু দেখেছে — ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ (‘From your Valentine’)। বাট তার আগের বিষয়টা সবাই ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে।

এবার আসল প্রসঙ্গে আসা যাক আপনি যে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালন করছেন আল্টিমেটলি অগোচরে খ্রিস্টান ধর্মের সেই ‘ভ্যালেন্টাইনের’ ধর্মের প্রচার করছেন, তাঁকে স্মরণ করছেন। কিন্তু আপনি নিজেকে মুসলিম দাবী করছেন! এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যেখানে আপনি একজন খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারককে ভালোবেসে মুসলিম দাবী করছেন?
আদৌ কি আপনি মুসলিম?
আপনার আদর্শের সাথে কি এসব যায়?

মুসলিম শরিফের একটি হাদিস সবার জানা — ‘যার সাথে যার ভালোবাসা বা মুহাব্বত তার সাথেই তার হাশর হবে।’ আপনার মুহাব্বত ত খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারক ভ্যালেন্টাইনের জন্য, আপনার রাসূলের জন্য নয়? যদি আপনার মুহাব্বত আপনার রাসূলের জন্য হতো তাহলে আপনি কখনো এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালন করতেন না বরং মুহাম্মদ (ﷺ) এর ইসলাম ধর্ম প্রচার করতেন, নিজেকে আরো খাঁটি মুসলিম বানানোর চেষ্টা করতেন।

দুই

তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে গইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বল্লীন বলছ, যার অর্থ — ‘যাদের উপর তোমার ক্রোধ এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদের পথ নয়।’ ‘মাগদুব’ বলতে যে এখানে ইয়াহুদী, খ্রিস্টানদের বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে সমস্ত মুফাসসিরই একমত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসেও অনুরূপ স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে [মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩২,৩৩]

যেই তুমি নামাজে ইহুদী, খ্রিস্টানদের থেকে পানাহ চাচ্ছ সেই তুমিই খ্রিস্টানদের ধর্মপ্রচারক ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের’ পূজা করছ। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন — ‘ভ্যালেন্টাইস ডে পালন করা মানে খ্রিস্টধর্ম পালন করা। এটা কোনো মুসলিম করতে পারে না ! খ্রিস্টীয় ধর্মের ধর্মীয় উৎসব “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” কে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অনুবাদ করে, ধর্মীয় দিবসকে সেকুলার রূপ দিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলন করা হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে প্রতারণা!’

রাসূল (ﷺ) বলেছেন — “বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী, নাসারাদের অনুকরণ কর না। যদি তোমরা তাদের অনুকরণ কর তাহলে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”
[তিরমিজি : ২৬৯৫]

একজন ঈমানদার, মুসলিম কখনোই এই দিবস পালন করতে পারে না। সেটা তার আকীদা বিশ্বাসের সাথে যায় না। সেটা তার দ্বীন বিরোধী। একজন মুসলিম কিভাবে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারককে ভালোবাসতে পারে। ইতিহাসের জানালায় কিভাবে মুসলিমদের আঁটকে দিয়েছে বিশ্বব্যবস্হা সেটা বুঝা খুব কঠিন। কিভাবে ভালোবাসার নাম দিয়ে আল্টিমেটলি খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারণা করে নিচ্ছে সেটা অধিকাংশের অজানা।

ঈমানের দাবি হচ্ছে এসব দিবস থেকে নিজেকে বিরত রাখা। না হয় নিজেকে মুসলিম দাবী করাটা অযৌক্তিক ছাড়া আর কিছু নয়!!

লিখেছেন

নেওয়াজ আরিফ

আমি এক মুসাফির, অল্প কিছু দিনের ভ্রমণে এসেছি এই ধরায়, সময় ফুরিয়ে গেলে চলে যাবো আপন ঠিকানায়…
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture