Writing

আলোর পথের যাত্রী

ওরিয়েন্টেশনের দিন হাত বাড়িয়ে মেয়েটি বলেছিল — ‘আই লাভ ইউ’ আর আমি মাথা নিচু করে জবাব দিয়েছিলাম — ‘আই রেসপেক্ট ইউ।’ মেয়েটি এমন জবাবে তাজ্জব বনে যায়! মেয়েটি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে — ‘আমি এতোটাই সুন্দর, স্মার্ট যে’কেউই আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে পাগল।’ আর সেই জায়গায় কিনা ছেলেটি আমার দিকে না তাঁকিয়ে চোখ নিচু করে — ‘আই রেসপেক্ট ইউ বলে চলে গেলো।’ কতো বড় সাহস ওর! আমি দেখে নিব ওকে! কি এমন জিনিসের জন্য সে আমাকে ইগনোর করল? কি এমন দেমাগ তার ভিতর? আমাকে খুঁজেই বের করতে হবে বলে হনহন করে ছুঁটে গেল ‘পুষ্পিকা।’

ওরিয়েন্টেশনের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না দেখেই বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে ‘পুষ্পিকা।’ মেজাজটাই বিগড়ে গেল পুষ্পিকার, এতো সুন্দর একটা দিন আজ মাটি হয়ে গেল ছেলেটার আজিব ব্যবহারে। ‘পুষ্পিকা’ গাড়ির ড্রাইভার মজিদ মিয়াকে ফোন দিয়ে বলল — ‘ মজিদ মিয়া কোথায় আপনি? গাড়ি নিয়ে আগেভাগে আসতে পারেন না।’
— ‘আপা মনি আপনি ত কইছিলেন বিহাল বেলা আওয়ার লাইগা, এহন ত বাজে মাত্র বেলা বারোগা।’

— ‘মজিদ মিয়া বেশি প্যাচাল পারো তুমি ইদানিং, কথা না বাড়িয়ে আধাঘণ্টার মধ্যে আমার কলেজের সামনে চলে আস।’
— ‘আচ্ছা আপামনি আমি অহনি আইতাছি। আপনি বইয়া একটু রেস্ট লন।’

‘পুষ্পিকা’ বিষন্ন মন নিয়ে কলেজ বিল্ডিংয়ের নিচ তলার ওয়েটিং রুমে বসে আছে। ওয়েটিং রুমের লুকিং গ্লাস দিয়ে আবছা আলোয় মনে হল সেই ছেলেটিই এদিকে আসছে, যার সাথে সকালে কথা বলে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে ‘পুষ্পিকার।’ সিউর হওয়ার জন্য ‘পুষ্পিকা’ বাইরে বেরিয়ে এলো। কিন্তু এ কি সে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে কেন? আমি ত তাকে ওয়েটিং রুমের দিকে আসতে দেখলাম! আমি কি ভুল দেখলাম, নাকি সে আমাকে দেখে ভাব নিচ্ছে। ডাক দিয়ে দেখি,

— ‘এই যে শোনচ্ছেন? এই যে আপনাকে বলছি?’
— ‘জ্বি, আমাকে?’
— ‘আপনাকে নয়তো কাকে? আশেপাশে কি আর কেউ আছে নাকি?’
— ‘না, আসলে। আমি অপরিচিত মেয়েদের সাথে কথা বলি না।’
— ‘আজিব মানুষ ত আপনি আমি ত আর আপনার অপরিচিত নই! সকালে যে আপনার সাথে কথা হয়েছে সেটা কি ভূলে গেছেন?’
— ‘আসলে আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনি আমার গাইরে মাহরাম আপনার সাথে কথা বলার অনুমতি ইসলাম আমাকে দেয়নি।’

জবাব শেষে মাথা নিচু করে ছেলেটা চলে গেল অন্ধকার একটা খুপরির ভিতর। ‘পুষ্পিকা’ ভাবল ছেলেটা কেন এই অন্ধকার রুমে ঢুকেছে? কি জানে বাপু এখনকার ছেলেপুলেরা কতো কি করে? ছেলেটা আবার জঙ্গি-টঙ্গী নয়তো? হঠাৎ মজিদ সাহেবের গাড়ির হর্ণে ‘পুষ্পিকার’ ভাবনায় ছেদ পড়ল। এই মজিদ মিয়াকে নিয়ে আর পারা গেলো না গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাগড়া বাঁধাতে পারলেই তার ষোলকলা পূর্ণ হয়!

২.

মজিদ মিয়া এই বাড়ির গাড়ির ড্রাইভার বললে ভূল হবে বরং এই বাড়ির প্রতিটি কাজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে তার অবদান। পুষ্পিকার জন্মের কিছুদিন পর থেকেই মজিদ সাহেব এই বাড়ির ড্রাইভার হয়ে এসেছে। মজিদ মিয়া বাবার বয়সি হলেও পুষ্পিকাকে সে সবসময় আপামনি বলে ডাকে। সে ডাকটা শুধু স্নেহের নয় বরং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার। ‘পুষ্পিকা’ গাড়ির ভেতর বিষন্ন মন নিয়ে বসে আছে। মজিদ মিয়া ইতস্ততাবোধ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপামনি আপনার কি মনডা খারাপ নিহি?’

— ‘হঠাৎ কেন এমন মনে হলো? মজিদ মিয়া।’
— ‘আসলে আপনার চেহারা কেমন যেনো ফ্যাকাসে দেহাইতেছে।’
‘পুস্পিকা’ মুচকি হেসে বলছে আজকাল ত দেখি মজিদ মিয়া মানুষের চেহারা দেখে মনের কথা বলে দিতে পারে।
— ‘হয় আপামনি। আমার মাইয়াডাও তাই কয়, আমি নাকি মানুষের চেহারা দেইখা মনের খবর কইয়া দিবার পারি।’
— ‘তোমার মেয়ে কি পড়াশোনা করে?’

— ‘হয় আপামনি। মাইয়াডা পড়ালেহা কইরা বড় হইবার চায়, আর কয় আমি বড় হইয়া চাকরি করলে তোমার আর কাজ করন লাগব না বাজান।’
— ‘জানেন আপামনি, মাইয়াডা যহন আমারে বাজান কইয়া ডাক দেয় আমার পরানডা ঠান্ডা হইয়া যায়।’
আচ্ছা আপামনি মেডিকেলের পড়া কি খুব মজার?
— ‘কেন বলত?’

— ‘আসলে আমার মাইয়াডারে ডাক্তারি পড়াবার চাইছিলাম। লেহাপড়াও মাইয়াডা ভালোই।’
এই প্রশ্নের জবাবে পুষ্পিকা নিশ্চুপ! মজিদ মিয়া একরাশ হতাশা নিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে গাড়ি চালানোতেই মনযোগী হল!

আলোর পথের যাত্রী

লিখেছেন

নেওয়াজ আরিফ

আমি এক মুসাফির, অল্প কিছু দিনের ভ্রমণে এসেছি এই ধরায়, সময় ফুরিয়ে গেলে চলে যাবো আপন ঠিকানায়…
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture