Q/AAbdullahil Hadi

গানবাজনা শুনা কোন ধরণের গুনাহ

আমার আশেপাশে যদি উচ্চ আওয়াজে কেউ গান বাজায় আর তাকে নিষেধ করার পরও যদি গান বন্ধ না করে তাহলে সেক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
কিছু হামদ বা নাত আছে বাজনা ছাড়া। সেগুলো কি শুনা জায়েজ হবে?

গান-বাজনা শোনা আল্লাহর নাফরমানীর অন্তর্ভুক্ত। গান-বাজনা মানুষকে পথভ্রষ্টতা এবং অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এ ছাড়াও রয়েছে নানাবিধ ক্ষতিকারক দিক।

গানবাজনা শোনাকে কোন কোন আলেম কবিরা বা বড় গুনাহ এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন আবার কেউ বলেছেন, সগীরা গুনাহ। তবে কেউ যদি গানবাজনা শুনতে আসক্ত থাকে অথবা নিয়মিত শুনে বা এটাকে তুচ্ছজ্ঞান করে শুনে তাহলে তা কাবীরা (বড়) গুনাহে রূপান্তরিত হবে। এ ব্যাপারে সকলেই একমত।

সর্তকতার বিষয় হল, এটিকে সগীরা গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হলেও কেউ যদি এর প্রতি আসক্ত থাকে তাহলে ক্রমান্বয়ে তা তাকে কবীরাগুনাহ তথা জিনা-ব্যভিচার ও শরীয়ত বহির্ভূত প্রেমভালবাসার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। গান শোনায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের অন্তরে মরিচা পড়ে যায়, তাদের অন্তরের নুর নিভে যায়। ফলে একপর্যায়ে তাদের অন্তরে কুরআন তিলাওয়াত, ইসলামী আলোচনা ইত্যাদি শোনার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। এভাবে সে আস্তে আস্তে ইসলামের হুকুম আহকামের প্রতি অবজ্ঞা করতে শুরু করে। আল্লাহ ক্ষমা করুন। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই গানবাজনায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের তওবা করে ফিরে আসা জরুরি।

আপনার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তি যদি উচ্চ আওয়াজে গান-বাদ্য করে আর তাকে নিষেধ করার পরও না শুনে তাহলে আপনি সামাজিকভাবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। কেননা, মানুষকে ডিস্টার্ব দেয়া বা তার পড়াশোনা ও ইবাদত-বন্দেগীতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা সামাজিক ও আইনগত ভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। সে যদি গান-বাজনা শুনতে চায় তাহলে নিম্ন আওয়াজে শুনবে; কোনভাবেই অন্যকে ডিস্টার্ব করে করতে পারে না।

যাহোক, কোন পদ্ধতিতেই তা বন্ধ করা সম্ভব না হলে আপনি স্থান পরিবর্তন করবেন। তাও সম্ভব না হলে গানবাজনার দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকবেন আর ধৈর্য ধারণ করবেন। সেই সাথে পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য পথ খুঁজতে থাকবেন। তাহলে আল্লাহ আপনার গুনাহ লিখবেন না ইনশাআল্লাহ।

বাদ্যযন্ত্র ছাড়া হামদ, নাত, জীবনমুখী, দেশাত্মবোধক ইত্যাদি সঙ্গীত শুনা শর্ত সাপেক্ষে বৈধ। যেমন,

  • এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা যাবে না।
  • নারীর জন্য পুরুষ এবং পুরুষের নারীর কণ্ঠস্বর যেন ফেতনার দিকে ধাবিত না করে।
  • সঙ্গীতের প্রতি অতিরিক্ত নেশা যেন কুরআন তিলাওয়াত, দ্বীনের জ্ঞানার্জন এবং নিজের দায়িত্ব পালনে অবহেলার সৃষ্টি না করে।

ইত্যাদি দিক খেয়াল রেখে মাঝেমধ্যে শিরক, বিদআত ও অশ্লীলতা মুক্ত ভালো ও শিক্ষণীয় ইসলামী সঙ্গীত শুনা দোষণীয় নয়।

নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা ইবনু’ উমার (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফি’ তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কান থেকে হাত তুলে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরনের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন।1

আল্লাহু আলাম।

  1. সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯২৪ ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture