Writing

ধেয়ে আসছে মহাবিপদ…

মানুষের কর্মফল মানুষকে তাড়া করছে বোধ হয়। বালা-মুসিবত ও দুর্যোগ হয়ে মানুষের দিকে ধেয়ে আসছে তীব্র গ‌তিতে।
সারা‌বিশ্বেই প্রচণ্ড খরা ও দাবদাহ দেখা দিয়েছে, যা ই‌তিপূর্বকার সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
মুরুর দেশগু‌লোতে অসময়ে বৃ‌ষ্টি ও বন্যা দেখা দিয়েছে, যেখানে নদীর দেশগু‌লোতে অনেক নদী শু‌কিয়ে মরুভূ‌মিতে প‌রিণত হচ্ছে। ইয়ামেন, ইরান পা‌কিস্তানে বন্যা হচ্ছে। সৌদী‌সহ মিডল ইস্টে বৃ‌ষ্টির মাত্রা অনেক বৃ‌দ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশসহ এ‌শিয়ার অনেক দেশে বৃ‌ষ্টির মৌসুমে বৃ‌ষ্টির দেখা নেই। ফলে বর্ষাকালীন ধান ও শষ্য, এবং বর্ষাপ‌রবর্তী ই‌রি‌-বোরো নিয়ে ভীষণ অ‌নিশ্চয়তা দেখা দি‌য়ে‌ছে।
ইউরোপ আমে‌রিকাসহ বহু আরব্যা অঞ্চ‌লে দাবানলে পুড়ে যা‌চ্ছে মাইলের পর মাইল বন-বাদাড়, এমন কি জনবস‌তি ও শহর। আলজে‌রিয়া তিউনে‌শিয়ায় তীব্র দাবানলে বহুলোক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

ইউক্রেনকে কেন্দ্রকরে রা‌শিয়া-প‌শ্চিমা বলয়ের লড়াই, তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ কখন যে মহাযুদ্ধে রূপ নেয়; বি‌শ্ববাসী তা নি‌য়ে বেশ শ‌ঙ্কিত। বি‌শ্লেষকরা বলছেন : য‌দি এটা পারমান‌বিক মহাযুদ্ধে প‌রিণত হয়; তা হলে শুধু জনবস‌তি, শহর-নগর বিরাণভূ‌মিতে প‌রিণত হবে না, বরং বিশ্বের আ‌শিভাগ আবা‌দি ও কৃ‌ষিভূ‌মি অনাবা‌দি হয়ে পড়বে।

ই‌তিম‌ধ্যে মানুষের জীবনযাপ‌নের ব‌্যয়ভার বে‌ড়ে গে‌ছে, যেখানে আয়‌-রোজকার ও ক্রয়ক্ষমতা সংকু‌চিত হয়ে পড়ছে। বাজারে জি‌নিসপত্রের দাম আকাশচু‌ম্বি; মধ্যবিত্ত ও নিম্নআ‌য়ের মানুষের নাগা‌ল পেতে নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে।

সবচেয় বড় কথা হলো, সারা দু‌নিয়ায় সামা‌জিক ও পারিবা‌রিক সংকট আশঙ্কাজনকহা‌রে বে‌ড়ে গে‌ছে। পরস্পর সহযো‌গিতা, আস্থা, ভালোবাসা, নী‌তি‌-নৈ‌তিকতা ও মান‌বিক মূল্যবোধ বিলু‌প্তির প‌থে। যা ছিল দুর্যোগকালে মানু‌ষের সবচেয় বড় পাথেয়।

ধর্ম বলুন আর বিজ্ঞান বলুন, সবার দৃ‌ষ্টিতে এসবই হলো মানুষের কর্মদোষে। য‌দিও ব্যাখ্যার ধরণ উভয়ের ভিন্ন। সাম‌গ্রিকভা‌বে মানুষের কর্ম ও আচরণ আত্মঘা‌তি; যা পুরো মানবসভ্যতাকে হুম‌কির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষের রব যা বলেছেন, তা অমোঘ, অলঙ্ঘ্য :

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।
(রূম : ৪১)

হাঁ, এসব দুর্যোগ ও বিপদাপদের মাধ্যমে মূলত মহান প্রভূ আমাদের প্রত্যবর্তন কামনা করেন। তি‌নি চান, মানুষ যেন পাপপচার বর্জন করে, তাকওয়া অবলম্বন করে। তা হলে মুহূ‌র্তে অবস্থা বদলে যাবে।
আল্লাহ তাআলা ব‌লেন :

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।
(আরাফ : ৯৬)

তি‌নি আরও বলেন :

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ
"নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোন সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ্ অশুভ কিছু ইচ্ছে করেন তবে তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই।"
(রা'দ : ১১)

আসুন, তাওবা ক‌রি!
আল্লাহর কা‌ছে ফিরে চ‌লি!
পাপাচারে লাগাম টা‌নি!
তাকওয়া অবলম্বন ক‌রি!
কর্মবদলাই, জীবন বদ‌লে যাবে, ইনশাআল্লাহ!

লিখেছেন

‌শিক্ষকতা, দাওয়াহ, লেখা‌লে‌খি, সস্পাদনা, খুতবা প্রদান

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture