Writing

বয়স হোক তারপর হজ্জ করবো

আমাদের বেশিরভাগের মানসিকতা এমন যে, আমরা হজ্জের জন্য বয়স নির্ধারণ করে নিই। আমরা মনে করি- “গোনাহ যা করার করে নিই, অসুবিধা নেই; ৫০-৬০ বছর হবার পর হজ্জ করবো, তাহলে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।”

কেউ যদি ৩০ বছর বয়সে হজ্জ-উমরা করার সামর্থ্য রাখে, তাকে কেউ হজ্জ-উমরা করার পরামর্শ দিলে সে বলে- “হজ্জ থেকে ফিরলে তো আর গুনাহ করতে পারবো না!”

আমরা ভুলে যাই যে, আমাদের মনের অবস্থা আল্লাহ জানেন। হজ্জ-উমরা আমাদের গুনাহ মাফের অনেকগুলো উপলক্ষের মধ্যে অন্যতম উপলক্ষ। আল্লাহ আমাদেরকে এই উপলক্ষগুলো এজন্য দিয়েছেন, যাতে আমরা আমাদের গুনাহ মাফ করাতে পারি, গুনাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করতে পারি। কিন্তু, আমরা সুযোগগুলো হেলায় নষ্ট করি। যৌবনে হজ্জ-উমরার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও করছি না, কিভাবে আশা করবো ১০-২০ বছর আমি বেঁচে থাকবো?
শারীরিক, আর্থিক সক্ষমতা থাকবে?

এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“যে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে, সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ, মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস ফুরিয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে দাঁড়ায়।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৮৩]

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজ্জ করার নিয়্যত করলে সময়ক্ষেপণ না করে যেন হজ্জ করা হয়। খুবই প্রাকটিক্যাল কথা। আমরা দেখি, অনেকেই হজ্জ-উমরার টাকা জমিয়েও হজ্জ-উমরা করতে পারেনি, আকস্মিক বিপদ সামনে এসে দাঁড়ানোর কারণে বা কয়েকবছর পর অসুস্থ হবার কারণে। আকাঙ্ক্ষিত বায়তুল্লাহ সফর তাদের হয়নি!

অনেকের উমরা করার মতো টাকা আছে। কিন্তু, সে এগুলো দিয়ে উমরা না করে চিন্তা করে অন্য দেশে ট্যুরে যেতে বা ব্যাংকে জমা রাখতে। কেমন যেন ভয়ে থাকে, উমরায় গেলে তো টাকা শেষ হয়ে যাবে, তারচেয়ে টাকা জমিয়ে রাখি!

এই মানসিকতা যে একেবারে ভুল, সেই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
নবিজী বলেন:

“তোমরা হজ্জ ও উমরা পরপর একত্রে আদায় করো। কেননা, এই হজ্জ ও উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়; লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুন দূর করে দেয়।”
[জামে আত-তিরমিজি: ৮১০]

হজ্জ-উমরা করলে যেমন গুনাহ মাফ হয়, তেমনি আপনার অভাব-অনটনও দূর হবে। দিনদিন হজ্জ-উমরার খরচ বাড়ছে। সুযোগ থাকলে টাকা জমান ব্যবসার মুনাফা থেকে, চাকরির বেতন থেকে। আমরা যখন উদ্যোগ নেবো, আল্লাহ তখন সহজ করে দিবেন।

পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ কল্পনাও করেনি তারা হজ্জ-উমরা করবে। কিন্তু, আল্লাহ তাদেরকে সেই সুযোগ দান করেন তাদের নিয়্যতের কারণে। আমরা অনেকেই নিয়্যত করি না। নিয়্যত না করলে কিভাবে সেটা কবুল হবে?

একবার উমরা করলে সেটা দুই উমরার মধ্যবর্তী সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
একটি কবুল হজ্জের বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন!
[সহীহ বুখারী: ১৭৭৩]

আমরা মনে করি ধনী হবার পর, বয়স হবার পর হজ্জ করবো, হজ্জ নিয়ে পড়বো। এটা ভুল চিন্তা। আপনি হজ্জ-উমরার বিধান নিয়ে জানুন, আপনার সামর্থ্য থাকুক বা না থাকুক। এটার মাধ্যমে আমরা স্বপ্ন দেখতে থাকি, আমাদের নিয়্যত পাকাপোক্ত করতে থাকি। ফলে, একসময় আল্লাহ আমাদেরকে হজ্জ-উমরার সুযোগ দান করবেন, ইন শা আল্লাহ।

হজ্জ-উমরার বিধান নিয়ে অনেকের কনফিউশন। অনেকেই এটার গাইডলাইন নিয়ে বই খুঁজে। ‘প্রোডাক্টিভ হজ-উমরা’ বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে এই বইটি তাদের জন্য একেবারে পার্ফেক্ট।

এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- বইয়ে হজ্জ-উমরার বিধান আলোচনার পাশাপাশি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছু টিপস দেয়া হয়েছে, যা সচরাচর হজ্জ-উমরার গাইডলাইনের বইয়ে চোখে পড়ে না।

যেমন: হজ্জ-উমরায় গিয়ে কিভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হবে, হজ্জে যাবার কয়েক মাস আগ থেকে কিভাবে শরীরকে ফিট রাখতে হবে, সঙ্গে কী কী বই নিয়ে যেতে হবে, যাবার সময় কেমন ব্যাগ নিতে হবে, কাদের সাথে যেতে হবে ইত্যাদি।

অর্থাৎ ২০২৩ সালে একজন ব্যক্তি হজ্জ-উমরা করতে গেলে তাকে বিধান জানার পাশাপাশি কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে এই নিয়ে প্রতিটি অধ্যায় শেষে আলোচনা। তাওয়াফ, ইহরাম, মিনায় অবস্থান, কুরবানি সহ প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে কিছু টিপস দেয়া হয়েছে।

হজ্জ-উমরা সংক্রান্ত সমসাময়িক মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা বেশিরভাগ হজ্জ-উমরাযাত্রীদের মনে উঁকি মারে।

যারা হজ্জ-উমরায় যাবেন বা যারা এখনো নিয়্যত করেননি, তাদের জন্য হাইলি ইফেক্টিভ হবে শাইখ ইউসুফ বাদাতের ‘প্রোডাক্টিভ হজ-উমরা’ বইটি। ইলহাম থেকে প্রকাশিত বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪, প্রচ্ছদমূল্য ২৭০ টাকা।

[elementor-template id=”6787″]

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button