Q/AAbdullahil Hadi

‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম’ কথাটার অর্থ কি

আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম কথাটার অর্থ কি এবং তা কখন পাঠ করতে হয়?
আমি জানতে চাচ্ছি, “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম” কথাটার অর্থ কি এবং এ কথাটা কোন কোন ক্ষেত্রে পাঠ করতে হয়?

আউযুবিল্লাহ এর অর্থ

আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম”
অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

কখন আউযুবিল্লাহ পাঠ করতে হয়

“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম” পাঠ করার কতিপয় ক্ষেত্র

কুরআন তিলাওয়াতের শুরুতে

কুরআন তিলাওয়াত একটি ইবাদত। কুরআনের প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে ১টি করে নেকী রয়েছে। আর একটি নেকী ১০টি নেকীর সমান। (তিরমিযী; মুসতাদরাকে হাকেম; মিশকাত হাদীছ সহীহ) তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় যাতে শয়তান ধোঁকা দিতে না পারে সেজন্য কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার নিদের্শ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
‘যখন তুমি কুরআন তিলাওয়াত করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে’
(নাহল )

সালাতে শয়তান ওয়াসওসা (কুমন্ত্রণা) দিলে

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

عن عُثْمَانَ بْن أَبِي الْعَاصِ رضي الله عنه أنه أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلَاتِي وَقِرَاءَتِي يَلْبِسُهَا عَلَيَّ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ خَنْزَبٌ ، فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلَى يَسَارِكَ ثَلَاثًا قَالَ : فَفَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِّي .

ওসমান বিন আবুল ‘আস রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার মধ্যে এবং আমার সালাত ও কিরাআতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে আমার কিরাআতে জটিলতা সৃষ্টি করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খিনযাব’ বলা হয়। তুমি তার আগমন অনুভব করলে আল্লাহর নিকট তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করবে (অর্থাৎ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করবে) এবং বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে।”

তিনি (ওসমান রা.) বলেন, এরপর থেকে আমি এমনটি করি। ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন।” (সহীহ মুসলিম হা/২২০৩)

রাগের সময়

রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। তাই রাগের সময় শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। সুলায়মান ইবনু সূরাদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন দু’জন লোক গালা গালি করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগ গুলো ফুলে গিয়েছিল।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

إِنِّي لأعلَمُ كَلِمةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عنْهُ مَا يجِدُ، لوْ قَالَ: أَعْوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ذَهَبَ منْهُ مَا يجدُ
“আমি এমন একটি দো‘আ জানি, এই লোকটি তা পড়লে তার রাগ দূর হয়ে যাবে। সে যদি পড়ে ‘আঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ তবে তার রাগ চলে যাবে।”
তখন সুলায়মান তাকে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাও। সে বলল, আমি কি পাগল হয়েছি?।”
(সহিহ বুখারি, ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায় ও মুসলিম)

খারাপ স্বপ্ন দেখলে

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

إِذَا رَأَى أَحَدُكُمُ الرُّؤْيَا يَكْرَهُهَا، فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلَاثًا وَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ثَلَاثًا وَلْيَتَحَوَّلْ عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ
“যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পাঠ করবে।) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে। (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)।”
(সহীহ মুসলিম)

মনের মধ্যে শয়তান কুমন্ত্রনা দিলে

আল্লাহ বলেন,

إِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ
‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (আ‘রাফ ২০০; ফুসসিলাত: ৩৬)

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture