Writing

আগে সৌন্দর্য নাকি দ্বীনদারি

পাত্রী অনেক দ্বীনদার কিন্তু দেখতে অত সুন্দরী নয়। তখন পাত্র ফিসফিসিয়ে বলে উঠে; “পাত্রী তো ভালোই বুঝলাম। কিন্তু আরও দু’এক জায়গায় না হয় দেখি! দেখতে তো আর দোষের কিছু নেই!”

আরও দুই এক জায়গায় দেখতে গিয়ে যখন এমন একজন পাত্রী মিলে যায় যিনি কি-না অতিশয় সুন্দরী বটে কিন্তু দ্বীনদারির লেশমাত্রও নেই। তখন পাত্র মহাশয় কিছুটা ইতস্তত ভঙ্গিতে জোর গলায় বলেন; “সমস্যা নেই ও আমি শিখিয়ে পড়িয়ে দ্বীনদার বানিয়েই ছাড়াবো ইন শা আল্লাহ !”

বলি, ও ভাইজান! দ্বীনদার বানানো কি এতোই সহজ? দ্বীনদারি কি হাতের মোয়া! আপনি চাইলেন আর ওমনি চিনি গুড় নারকেল দিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন করে দলা পাকিয়ে বানিয়ে ফেললেন!

যে তাকওয়া অর্জন করতে বছরের পর বছর কেটে যায়। যে রবের ভালোবাসা অর্জন করতে গিয়ে শত শত প্রিয় বস্তু কুরবানী দিতে হয়। যে দ্বিনদারি পেতে গিয়ে নফসের খায়েসকে জলাঞ্জলি দিয়ে হৃদয়কে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করতে হয়! সমাজের কৃষ্টি কালচারের বিপরীত স্রোতে হেঁটে ঈমান আমলকে টিকিয়ে রাখতে হয়। প্রচন্ড গরমের মধ্যে থেকেও পর্দার চুল পরিমাণ বিচ্যুতি যাতে নয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। হারাম রিলেশনের ছোঁয়া থেকে নিজেকে এমন ভাবে আড়াল করতে হয় যেন কোনো আবেগ অনুভূতিই নেই জীবনে! ফ্রী মিক্সিং থেকে, গান বাজনা থেকে, মামাতো’ চাচাতো’ ইত্যাদি ‘তো’ ভাইদের থেকে এমনকি ফেসবুকের নন মাহরম ভাইদের থেকেও এমনভাবে নির্জীব হয়ে থাকতে হয় যেন সে দুনিয়াতেই বেঁচে নেই!

আর সে দ্বীনদারি আপনি এক নিমিষেই বানিয়ে ফেলবেন! তাই না?
আর ওই মেয়টাও আপনার বয়ান শোনা মাত্র সারাজীবনের সমস্ত ভুলত্রুটি আলোর গতিতে শুধরিয়ে নিবে! আধুনিক লেটেস্ট মডেলের জামা কাপড়গুলো সব পুড়িয়ে দিয়ে হিজাব-নিকাব পড়ে ফেলবে! এতদিনের লালিত রীতিনীতি মনোভাব রুসুম রেওয়াজকে এক মুহুর্তেই ভস্ম করে দিবে! ফেসবুকে পোস্ট করা সমস্ত ছবি ডিলিট করে দিয়ে বেষ্ট ফ্রেন্ড’দের বলে দিবে; আমার সাথে আর তোরা মিশবি না! মিউজিক গুলো রিমুভ করে দিয়ে কুরআন আর হাদিসের বাণী শুনবে! শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে তুলবে!

বিষয়টা কি এতোই সহজ! না এতো সহজ না। এসবের কোনটাই রাতারাতি সম্ভব না। যেখানে স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)দের ঈমান শিখতে বছরের পর বছর কষ্ট মুজাহাদা করতে হেয়েছে সে ঈমানের ছিটেফোঁটাও অর্জন করতে গেলে এই ফেতনা ফ্যাসাদের জামানায় আমাদের কতো মেহনতের প্রয়োজন তবে! আর আপনি বলছেন দ্বিনদারি শিখিয়ে পড়িয়ে নিবেন!

তাই স্পষ্ট জেনে রাখুন, শুধুমাত্র সৌন্দর্যের পূজারি হয়ে কোনো বদ্বীন মেয়েকে ঘরে তুলবেন না৷ তাকে ঘরে তোলা মানে হলো খাল কেটে কুমির ডেকে নিয়ে আসা! কেননা সে মেয়ে তো ঘর সংসারের থেকে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ইত্যাদিতে সময় দিতে বেশি পছন্দ করবে। নির্দ্বিধায় যে কোনো ছেলেকে বেষ্টফ্রেন্ড বানিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাটিং করে যাবে। পর্দা করতে যারপরনাই অসন্তোষ প্রকাশ করবে। আপনি যদি তার সাথে কোথাও বেরুতে গিয়ে তাকে হিজাব পড়ার জন্য তোরজোর করেন তাহলে সে ভাববে তার উপর যেন ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে! আর স্বামী নামক জল্লাদটা হাসতে হাসতে তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছে। বোরকাকে সে মনে করবে বিরক্তিকর বস্তা সদৃশ, আর নিকাবকে শ্বাসরোধক জাঁতাকল!

তাই একটু ভেবে দেখুন, এই নশ্বর পৃথিবীতে সৌন্দর্য ক’দিনই বা থাকে? যে নারীর সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে আপনি দ্বীনদারির কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করেই বিয়ে করতে চান। সে নারীই তো আপনার সামনে বুড়ি হয়ে যাবে। এইতো মাত্র ২০ টা বছর কেটে গেলেই যৌবনের অপরূপ সৌন্দর্য্য জানালা পালিয়ে যাবে। আপেলের মতো টকটকে গালে ভাঁজ পরে চুপসানো বেলুনের হয়ে যাবে, বাঁশির মতো নাক ধীরে ধীরে তবলা বনে যাবে, হরিণনয়ন চক্ষুযুগল ঝুলে গিয়ে হুতুমপেঁচার মতো লাগবে, মেঘমালা সদৃশ চুল পেকে গিয়ে পাটকাঠির আঁশের মতন শাদা হয়ে যাবে। কোমর বেঁকে গিয়ে আপনার বাল্যকালের নানীর কথা মনে করিয়ে দিবে!

তাই উপরের সৌন্দর্যের আগে ভেতরের সৌন্দর্য প্রাধান্য দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ শরীরের রূপ সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী কিন্তু ভেতরের রূপসৌন্দর্য্য চিরস্থায়ী। আর ভেতরের সৌন্দর্য হলো ঈমানি সৌন্দর্য। যার ঈমান এবং তাকওয়া যতো বেশি মজবুত তার চরিত্র ততো বেশি সুন্দর এবং সহজ।

যে বদ্বীন সে দুনিয়া ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। সে তো সংসারকে অশান্তির আঁতুড়ঘর বানিয়ে ছাড়বে। কেননা তার কাছে দুনিয়াটাই সব। চাই চাই আর খাই খাই হবে নিত্য দিনের বুলি। এটা নাই আর ওটা নাই হবে স্বামীর সাথে কথপোকথনের হেডলাইন।

অপরদিকে যে মেয়ে দ্বিনদার সে তো জানেই যে দুনিয়াটা ক্ষণিকের। দুনিয়া মনের আশা পূরণের জায়গা না। মনের আশা তো পূরণ হবে জান্নাতে গিয়ে। দুনিয়াতে যেটুকু জরুরত সেটুকু পূরণ হয়ে গেলেই হলো। এবং আসল মাকসাদ হলো রবকে চেনা, রবের সন্তুষ্টি নিয়েই বাঁচা, রবের সন্তুষ্টি নিয়েই মরা। ফলে সংসারে অভাব দেখা দিলেও সে কখনো স্বামীর প্রতি নারাজ হবে না। তাঁর সংসারটাই এক টুকরো জান্নাতে রূপ নিবে।

তাই পাত্রী নির্বাচন করতে গিয়ে আগে দ্বীনদারি দেখুন, এরপর সৌন্দর্য। দ্বীনদারির উপরে যেন সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দেই। রাসূল (সঃ) সবার আগে দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দিতে বলেছেন।

লিখেছেন

Picture of আরিফ আব্দুল্লাহ

আরিফ আব্দুল্লাহ

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture