Q/AAbdullahil HadiScholar Bangla

ফরয কাযা ও নফল রোযার নিয়ত করার পর তা ভেঙ্গে ফেলার বিধান

নফল রোজা রাখার নিয়ত করে যদি তা রাখতে না পারি তাহলে কি গুনাহ হবে?
আর তা কি আবার রাখতেই হবে?
অনুরূপভাবে যদি রমাযানের ফরয রোযা বা মানতের রোযা রাখার পর তা ভেঙ্গে ফেলি তাহলে কি গুনাহ হবে?

কেউ যদি নফল রোযা রাখার নিয়ত করে রোযা শুরু করে তাহলে তা ইচ্ছে করলে ভেঙ্গে ফেলা জায়েয আছে। তবে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া না ভঙ্গ করাই উত্তম। যেমন: অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত কষ্ট, শারীরিক অসুস্থতা, মেহমানের আগমন, বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

হাদিস বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا، فَقَالَ: «هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ؟»، فَقُلْتُ: لَا، قَالَ: «فَإِنِّي صَائِمٌ»، ثُمَّ مَرَّ بِي بَعْدَ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَقَدْ أُهْدِيَ إِلَيَّ حَيْسٌ فَخَبَأْتُ لَهُ مِنْهُ، وَكَانَ يُحِبُّ الْحَيْسَ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ أُهْدِيَ لَنَا حَيْسٌ فَخَبَأْتُ لَكَ مِنْهُ، قَالَ: «أَدْنِيهِ أَمَا إِنِّي قَدْ أَصْبَحْتُ وَأَنَا صَائِمٌ فَأَكَلَ مِنْهُ»، ثُمَّ قَالَ: «إِنَّمَا مَثَلُ صَوْمِ الْمُتَطَوِّعِ مَثَلُ الرَّجُلِ يُخْرِجُ مِنْ مَالِهِ الصَّدَقَةَ، فَإِنْ شَاءَ أَمْضَاهَا، وَإِنْ شَاءَ حَبَسَهَا»
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমার কাছে আসলেন এবং বললেন: তোমার কাছে কি খাওয়ার কিছু আছে?

আমি বললাম: না।

তিনি বললেন: তাহলে আমি রোযার নিয়ত করে নিলাম।

এরপর তিনি আরেক দিন আমার কাছে আসলেন এবং সে দিন আমাকে কিছু “হায়স” (খেজুর এবং ঘি ইত্যাদি দ্বারা প্রস্তুত এক প্রকার খাদ্য), উপহার দেওয়া হয়েছিল, আমি তা থেকে কিছু রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য রেখে দিয়েছিলাম। আর তিনি হায়স খুব পছন্দ করতেন।

তিনি বললেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌! আমাকে কিছু হায়স উপহার দেওয়া হয়েছিল, আমি সেখান থেকে আপনার জন্য কিছু পৃথক করে রেখে দিয়েছি।

তিনি বললেন: নিয়ে এসো, আমি তো আজকে সকালে সাওমের নিয়ত করে ফেলেছিলাম।

অতঃপর তা থেকে খেলেন। তারপর বললেন:

“নফল রোযার দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে স্বীয় ধন-ম্পদ থেকে দান করার নিয়তে কিছু মাল বের করল। এখন সে ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তা দানও করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে রেখেও দিতে পারে।”

[সুনান নাসাঈ, অধ্যায়: সাওম (রোযা), পরিচ্ছেদ: সাওমের নিয়ত এবং এবং এ প্রসঙ্গে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে তালহা ইবনে ইয়াহ্‌য়া ইব্‌ন তালহা (রহঃ) থেকে বিভিন্নতার উল্লেখ, হাদিস নং ২৩২২, সনদ সহিহ]

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে আসেন এবং পানি আনতে বলেন। তা হতে তিনি নিজে পান করলেন, তারপর উম্মু হানীকে দিলেন এবং তিনিও তা পান করলেন। তারপর উম্মু হানী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো রোযা রেখেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

الصَّائِمُ الْمُتَطَوِّعُ أَمِينُ نَفْسِهِ إِنْ شَاءَ صَامَ وَإِنْ شَاءَ أَفْطَرَ ‏

“নফল রোযা পালনকারী নিজের ব্যাপারে আমানতদার (অন্য বর্ণনায়”নফল রোযা পালনকারী নিজের ব্যাপারে কর্তৃত্ব শীল)। সে ব্যক্তি চাইলে রোযা পূর্ণও করতে পারে আবার ভাঙ্গতেও পারে।”

{সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত], অধ্যায়ঃ ৬/ রোযা (সাওম) (كتاب الصوم عن رسول الله ﷺ), পরিচ্ছদঃ ৩৪. নফল রোযা ভেঙ্গে ফেলা প্রসঙ্গে, হাদিস নম্বরঃ [732]-সহিহ}

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্যদের মতে নফল রোযা পালনকারী যদি তা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার উপর কোন কাযা নেই। তবে ইচ্ছা করলে (মুস্তাহাব হিসাবে) সে লোক কাযা আদায় করতে পারে। এ মত সুফিয়ান সাওরী, আহমাদ, ইসহাক ও শাফিঈর।

আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, “এখানে এই বর্ণনায় রয়েছে যে, নফল সিয়াম ভঙ্গ করলে তা কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে কাযার কথা উল্লেখ করেননি। যদি তা ওয়াজিব হত অবশ্যই বর্ণনা করতেন।”

ফরয রোযা তথা রমাযানের ফরয, মানত, কাফফারা ইত্যাদি রোযা কাযা করার ক্ষেত্রে শরিয়ত সম্মত ওজর (যেমন, সফর, অসুস্থতা ইত্যাদি) ব্যতিরেকে তা ভাঙ্গা শরিয়ত সম্মত নয়।

কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
“তোমরা তোমাদের আমল বাতিল করো না।”
(সূরা মুহাম্মাদ: ৩৩)

এটি নামায, রোযা স সকল প্রকার ফরয ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য-তবে শরিয়ত সম্মত ওজর হলে ভিন্ন কথা।

এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য:

উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমা (রাঃ) এলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে বসলেন। আর উম্মু হানী (রাঃ) ছিলেন তাঁর ডান পাশে। এ সময় একটি দাসী হাতে একটি পাত্র নিয়ে এলো। এতে কিছু পানীয় ছিল। দাসীটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে পান পাত্রটি রাখল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে কিছু পান করে তা উম্মু হানীকে দিলেন। উম্মু হানী (রাঃ)-ও ঐ পাত্র হতে কিছু পান করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো রোযা ভঙ্গ করে ফেললাম অথচ আমি রোযা রেখেছিলাম।

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “তুমি কি রমাযান (রমাযান) মাসের রোযা কাযা বা মানতের রোযা কাযা করছিলে?”

উম্মু হানী (রাঃ) বললেন, না।

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন:

فَلَا يَضُرُّكِ إِنْ كَانَ تَطَوُّعًا
“নফল রোযা হলে কোন ক্ষতি হবে না।”

(আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারিমী), শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন-সহিহ আবু দাউদ মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে: فلا بأس عليك “তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।”)

অর্থাৎ যদি নফল রোযা ভঙ্গ করো তাহলে তাতে তোমার কোন ক্ষতি নেই কিন্তু যদি ওজর ছাড়া ফরয রোযা ভঙ্গ করো তাহলে এতে তোমার ক্ষতি রয়েছে অর্থ এতে তোমার গুনাহ হবে।

তবে কেউ যদি শরিয়ত সম্মত ওজর ছাড়া ফরয কাযা রোযা ভঙ্গ করে তাহলে এ জন্য তওবা করত: অনতিবিলম্বে তা পূরণ করে নিবে।

আল্লাহু আলাম

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture