Writing

নবীজি কখনো স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেন নি

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনোদিন তাঁর কোনো স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেননি, তাঁর কোনো স্ত্রীকে আঘাত করেননি, মারধর করেননি।
এই কথাটি কে বলেন?
এই কথার সাক্ষ্য দেন নবিজীর স্ত্রী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা।

নবিজী যখন শুনতেন কেউ তার স্ত্রীর গায়ে আঘাত করেছে, তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতেন, “তোমাদের কেউ কেনো স্ত্রীকে ষাঁড় (উট) পেটানোর মতো পেটাবে? পরে হয়তো সে আবার তার সাথে গলাগলি করবে!”

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমন না যে, একদিন স্ত্রীকে পেটানোর পর সব শেষ। আপনি প্রায় প্রতিদিন স্ত্রীর কাছে আসবেন, তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবেন। আবার তাকে পেটাবেনও?

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কয়েকজন সাহাবীর মধ্যে এই অভ্যাস ছিলো। নবিজী তাদের সংশোধন করেন, তাদের ব্যাপারে সাবধানবাণী শুনান।

আবু জাহম রাদিয়াল্লাহু আনহু স্ত্রীদের গায়ে আঘাত করতেন। তিনি ফাতিমা বিনতে কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ফাতিমা নবিজীর সাথে পরামর্শ করতে যান। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতিমাকে পরামর্শ দিলেন আবু জাহমকে বিয়ে না করতে। কারণ, আবু জাহম স্ত্রীদের গায়ে হাত তুলেন!

আল ওয়ালিদ ইবনে উকবা রাদিয়াল্লাহু আনহু স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতেন। তাঁর স্ত্রী নবিজীর কাছে এসে স্বামীর ব্যাপারে বিচার দেন। নবিজী বললেন, তাঁকে গিয়ে বলো আমি তোমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে, সে যেন তোমার গায়ে হাত না তুলে।

আল-ওয়ালিদ ইবনে উকবা স্ত্রীর কথা শুনলেন, কিন্তু মানলেন না। তিনি আবার স্ত্রীকে আঘাত করেন।

তাঁর স্ত্রী দ্বিতীয়বার নবিজীর কাছে বিচার নিয়ে আসলেন। নবিজী এবার প্রমাণস্বরূপ এক টুকরো কাপড় দিলেন। তিনি যে সেই নারীকে নিরাপত্তা দিয়েছেন, সেটা বুঝানোর জন্য। কিন্তু, আল-ওয়ালিদ ইবনে উকবা এসব সত্ত্বেও স্ত্রীকে মারধর করেন।

তাঁর স্ত্রী নবিজীর কাছে অভিযোগ জানাতে আসলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল-ওয়ালিদের বিরুদ্ধে বদ-দু’আ করেন।

সাবিত ইবনে কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর স্ত্রী হাবিবাহ বিনতে সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহাকে মারধর করতেন। হাবিবাহ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নবিজীর কাছে এসে জানান তালাকের ব্যবস্থা করতে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন স্ত্রীকে তালাক দিতে।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা নারীদেরকে মারধর করো না।”

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “নারীরা তো স্বামীদের অবাধ্যাচারণ করে!”

নবিজী অনুমতি দিলেন।

একদিন রাতে নবিজীর বাড়িতে ৭০ জন নারী এসে নবিজীর স্ত্রীদের কাছে অভিযোগ জানালেন, তাদের স্বামী তাদেরকে আঘাত করেছেন।

সকালবেলা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিলেন, “যারা স্ত্রীদেরকে মারধর করে, তারা উত্তম না।”

নবিজী অন্যত্র বলেন, মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার পরিবারের (স্ত্রীদের) কাছে উত্তম।

তাহলে যারা স্ত্রীদেরকে মারধর করে, তারা কিভাবে তাদের কাছে উত্তম স্বামী হতে পারবে?

নারীদের গায়ে হাত তুলার ব্যাপারে ইসলাম এমনভাবে অনুমতি দিয়েছে, যা অনুমতি না দেবার শামিল।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নারীদেরকে জোরে আঘাত করা যাবে না।” জোরে আঘাত মানে?

তিনি বলেন, “মিসওয়াক বা এরকম কিছু দিয়ে আঘাত করা যাবে।”

এমনভাবে আঘাত করা যাবে না, যাতে হাড়গোড় ভেঙ্গে যায়, হাত-পা মচকে যায়, রক্তক্ষরণ হয়। তাছাড়া মুখে তো আঘাতই করা যাবে না (চড়-থাপ্পড়)।

স্ত্রীদের সাথে মনোমালিন্য হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস স্ত্রীদের থেকে আলাদা থাকেন; তবুও তিনি স্ত্রীদের গায়ে হাত তুলেননি।

ইমাম আশ-শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ, ইমাম আন-নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “(প্রয়োজনে) স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলা অনুমোদিত হলেও এটা না করা উত্তম।”

আমাদের দেশে গ্রাম-শহরে যেভাবে স্ত্রীদেরকে অত্যাচার করা হয়, পাষাণের মতো তাদেরকে পেটানো হয়, হাড়ঘোড় ভেঙ্গে দেয়া হয়, কোনো বিজ্ঞ আলেম এগুলোকে অনুমোদন দেন না। বেশিরভাগ আলেমের মতে এরকম অত্যাচার অনুচিত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture