Writing

পূজা সে- তো আমার রবের অবমাননা

আপনি মুসলিম হয়ে অংশগ্রহণ করতে লজ্জা করে না?

যে পূজায় আমার রব্বের সাথে শরীক করা হয়, যে পূজায় আমার রব্বকে অবমাননা করা হয়, যে পূজায় যাওয়া আপনার জন্য জায়েজ নেই, একজন মুসলিস হয়ে সে পূজায় গিয়ে আপনি কী করেন?

‘ধর্ম যারা যার, উৎসব সবার’ এধরণের স্লোগানকে পুঁজি করে আপনি তাদের পূজায় গিয়ে আনন্দ-উল্লাস করাকে জায়েজ বানিয়ে ফেলতে পারবেন না। যেখানে শিরকের মতো পাপ হয় সেখানে আপনি মুসলিম হয়ে অংশগ্রহণ করতে লজ্জা করে না?

শিরক সম্পর্কে আমার রব্ব বলেন,

❝আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা সবচেয়ে বড় জুলুম।❞
[সূরা লোকমানঃ ১৩]

আমার রব্ব আরো বলেন —

❝অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।❞
[ইউসুফঃ ১০৬]

মনে হচ্ছে কুরআনের আয়াতগুলো সরাসরি আপনাকেই কিছু বলছে। শিরক করাকে সবচেয়ে বড় জুলুম বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আপনি আপনার হিন্দু বন্ধুবান্ধব, কলিগ বা পরিচিত কাউকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা-সম্ভাষণ জানানোর মানে হলো তাদের পূজাকে আপনিও সাপোর্ট করলেন। আর আপনি তাদের সাপোর্ট করছেন মানেই অন্যদিকে আমার রব্বের অবমাননা করছেন।

ইমাম হাফিজ ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আহকাম আহ্ল আল-দিম্মা’ গ্রন্থে বলেন —
❛কাফিরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ।❜

আমার নবিজি বলেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
‘যে অন্য জাতির সাথে আচার – আচরণে, কৃষ্টি – সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে।’
[আবু দাউদ, আসসুনান : ৪০৩১]

উপরিউক্ত হাদিসের বাণী অনুসারে আপনি যদি তাদের সংস্কৃতিতে যোগদান করেন তবে আপনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। আল্লাহ না করুক, যদি পূজার অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় মালাকুল মউত আপনার কাছে এসে হাজির হয় তখন আপনি রব্বের কাছে কী নিয়ে যাবেন? ভেবে দেখেছেন কখনো?

বর্তমানে অনেক মুসলিম ভাই-বোনেরা দল বেধে পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন প্ল্যান করে থাকেন। কীভাবে যাবেন, কী পরিধান করবেন, নিজেকে কীভাবে সাজাবেন। একটু চিন্তা করে দেখুন, পূজায় না বরং কীভাবে আপনি জাহান্নামে যাবেন সেটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আপনাদের পয়েন্ট হচ্ছে আমরা তো সেখানে পূজা করতে যাচ্ছি না, শুধুমাত্র দেখতে যাচ্ছি, আনন্দোৎসব করে চলে আসবো। একটু খেয়াল করুন প্রিয় ভাই – বোন আমার! কোনো হিন্দু কি আপনার সাথে মসজিদে যায় আপনার সলাত দেখতে? তারা কি আপনার সাথে মাদ্রাসায় যায় কীভাবে কুরআন – হাদিস শিক্ষা দেওয়া হয় তা দেখতে? আপনার কুরবানিতে তারা কী আসে?

তারা কখনোই আসে না। কারণ তারা এগুলোকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। তাহলে আপনি কেন যান তাদের পূজায়? যেখানে আমার রব্বের লা’নত নাযিল হতে থাকে।
হিন্দুদের ধর্মীয় যে কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা হারাম। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়া জায়েয নয়। ঘুরেফিরে দেখার জন্য হোক, কোন রকমে চাপে পড়ে হোক বা সম্পর্ক রক্ষার জন্য হোক ।
কুরআনে রব্ব বলেছেন,

وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّار.
‘আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।’
[সুরা হুদ: ১১৩]

কলেজে আমার একজন হিন্দু বান্ধবী ছিল। একবার সে তাদের পূজার উৎসবে সবাইকে দাওয়াত করার পাশাপাশি আমাকেও দাওয়াত দিল। অন্যদেরকে দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে তারা খুশিমনে গ্রহণ করলো। আমার আপত্তির কথা সে আগে থেকেই জানতো। তবুও তার আবদার, আমাকে একটু যেতেই হবে, পরিপূর্ণ পর্দার ব্যবস্হা আর একজন মুসলিমকে দিয়ে হালাল খাবার রান্না করানোর ব্যবস্হা করা হবে, সে আরো কত কী!

খুব জোর আবদার, আমি যেন একবার শুধু যাই। আমি মুসলিম হলেও কেন জানি আমার প্রতি তার একটা প্রচুর আন্তরিকতার টান ছিল। মাঝে মাঝে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছু কিছু বিষয় জানতে চাইতো। আমিও তাকে সবকিছু মধ্যমপন্হায় সহজ ভাবে জানিয়ে দিতাম। ভাবতাম, রব্ব যদি তাকে কখনো ইসলামের জন্য কবুল করে। তো যাই হোক নিজের পরিবারের কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে হাজার অনুনয় – বিনয়ের পরে ও আমি গেলাম না। তবে তাকে গুরুদত্ত সিং এর লিখিত ‘তোমাকে ভালোবাসি হে নবী ‘ বইটি উপহার দিলাম। তাদের ধর্মের লেখক তাই তার পরিবারও হয়তো বইটি দেখলে আপত্তি করবে না। সে খুশিমনে আমার উপহারটি গ্রহণ করলো।

কিছুদিন পর পূজা শেষে সে আমায় বললো, বান্ধবী রিনাকে ( ছদ্মনাম) নাকি আমার মামাতো ভাইয়ের খুব ভাল লেগেছে। সে রিনাকে পূজাতে দেখেছে। এমনকি তাকে বিয়ে করতে চায়। আমি তাকে বললাম, রিনা যে মুসলিম তোমার মামাতো ভাইকে কী তা বলো নাই?
সে বললো, “সেদিন পূজার উৎসবে সবাই তাকে হিন্দুই ভেবেছিল। সে যে মুসলমান সেটা তাকে দেখে কেউ আন্দাজ ও করতে পারে নাই।”

বিশ্বাস করুন তার মুখ থেকে একজন মুসলমান বান্ধবী সম্পর্কে এমন মন্তব্য শুনে আমি লজ্জায় নীচু হয়ে গিয়েছিলাম। তাকে বলার মতো আমার কিছু ছিল না। যা ছিল তা হলো আফসোস!

তাই বলবো, ফিরে আসুন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে। রব্বের দরবারে বেশি বেশি আশ্রয় চান শয়তানের দেওয়া পরামর্শ গুলো থেকে।
“নফসে” লাগাম দিন, শয়তানের বিরুদ্ধ লড়াই করুন, শুধু মাত্র আপনার রব্বের সন্তুষ্টির জন্য এবার পূজা সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, অন্যদেরও তালীম দিন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের জানার, বোঝার এবং বুঝে মানার তাওফিক দিন।
আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।

লিখেছেন

ইসলামীক লেখক ও গবেষক
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
“Alhamdulillah For Everything”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture