লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ এর ফজিলত
‘লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’- এর অভূতপূর্ণ ফজিলত এবং এ সংক্রান্ত কতিপয় সহীহ ও জয়ীফ হাদিস:
‘লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা’ হল, বিশ্বচরাচরের একচ্ছত্র অধিপতি মহান রাজাধিরাজ এক আল্লাহর প্রতি বান্দার আত্মসমর্পণ, সাহায্যের আবেদন, নিজের দীনতা, হীনতা, অক্ষমতা ও দারিদ্রতার স্বীকৃতি মূলক একটি মহামূল্যবান বাক্য। এর ফযিলতে অনেক সহিহ হাদিস এবং কিছু জয়ীফ হাদিস প্রচলিত রয়েছে।
নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল: وبالله التوفيق
“লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করার ফাযিলত সংক্রান্ত কয়েকটি সহিহ হাদিস:
১. আবু মুসা আশআরী রা. হতে বার্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ هِيَ كَنْزٌ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
“তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা বলে দেব না কি?”
আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রাসূল!’
তিনি বললেন, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ (লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
অর্থ: “আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত অনিষ্ট ও পাপ কর্ম
থেকে বাঁচার এবং কল্যাণ লাভ ও সৎকর্ম করার কোনও ক্ষমতা নেই।” [বুখারী ও মুসলিম]
২. আবু যর রা. থেকেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। [মুসনাদে আহমদ, সহিহ-আলবানি]
৩. মুআয রা. থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এটিকে জান্নাতের দরজা বলা হয়েছে। যেমন:
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ اللهِ، صلّى الله عليه وسلّم، قَالَ: “أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ ؟”. قَالَ: وَمَا هُوَ ؟ قَالَ: “لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ”. (“السلسلة الصّحيحة”
৪. অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَكْثِرُوا مِنْ غِرَاسِ الجَنَّةِ، فَإِنَّهُ عَذْبٌ مَاؤُهَا، طَيِّبٌ تُرَابُهَا، فَأَكْثِرُوا مِنْ غِرَاسِهَا”. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ: وَمَا غِرَاسُهَا؟ قَالَ: “مَا شَاءَ اللهُ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ
“তোমরা জান্নাতে বেশি পরিমাণে চারা গাছ রোপন করো। কারণ জান্নাতের পানি সুমিষ্ট এবং মাটি পবিত্র। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, জান্নাতের চারা গাছ রোপন কী?
তিনি বললেন, “মাশাআল্লাহ! লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”
[ইবনে আবিদ দুনিয়া যিকর অধ্যায়ে ও তবারানী। শায়খ আলবানি তাগিব-তারহীব গ্রন্থে এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ প্রসঙ্গে বর্ণিত কতিপয় জয়ীফ হাদিস। যথা:
১) “লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” হল, ৯৯ টি রোগের ঔষধ। যেগুলোর সর্বনিম্ন হল, দুশ্চিন্তা।”
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا حول ولا قوة إلا بالله دواء من تسعة وتسعين داء، أيسرها الهم
((المعجم الأوسط)) (5/ 187/ رقم:5028) للطبراني،
قال المناوي في شرحه عليه ((فيض القدير)) (6/ 425): ((و فيه كما في الميزان بشر بن رافع قال البخاري لا يتابع في حديثه وقال أحمد ضعيف وقال غيره حدث بمناكير هذا منها.
وقال الشيخ الألباني فى ضعيف الجامع (6286) ، و فى ضعيف الترغيب (1147) ضعيف
এই হাদীসটি তাবারানীর মজামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর বর্ণনা সূত্রে থাকা বিশর বিন রাফে নামক বর্ণনাকারীকে রিজাল শাস্ত্রবিদগণ জয়িফ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যার কারনে শায়খ আলবানী সহ অনেক মুহাদ্দিস এই হাদীসটিকে জয়ীফ বলেছেন।
২) আরেকটি জয়ীফ হাদিস:
‘’যে ব্যাক্তি এ বাক্যটি প্রত্যহ ১০০ বার পাঠ করবে সে কখনো দরিদ্র থাকবে না।’’ কথাটি দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত।
[মুনযিরী, আত-তারগীব ২/২৯৫, আলবানী, যায়ীফুত তারগীব ১/২৪৬]
৩) এ সংক্রান্ত একটি হাদিস যা সহীহ বা যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে:
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমরা বেশি বেশি ‘চিরস্থায়ী নেককর্মগুলো করো।”
সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, এগুলো কী?
তিনি বললেন, তাকবীর (আল্লাহু আকবর),
তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ),
তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ)
আলহামদুলিল্লাহ’
এবং ’লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।
[মুসনাদ আহমদ ৩/৭৫ ]। এ হাদিসটি সহীহ-জয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়।
ইবনে হাজার রহ. এটিকে হাসান বলেছেন (আল ফুতুহাতুর রাব্বানিয়া ৪/৬৫) আর শায়খ শুয়াইব আরনাবুত বলেছেন, হাসান লি গাইরিহী (তাখরিজুল মুসনাদ, হা/ ১১৭১৩)। পক্ষান্তরে শাইখ আলবানি এই হাদিসটিকে যঈফ বলেছেন। যঈফুল জামে/৮২৮ ও যঈফুত তারগিব/৯৬৪]
এই হাদিসের মানের ব্যাপারে যেহেতু হাদিস বিশারদগণের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তাই সতর্কতার স্বার্থে তা আমল না করাই ভালো।
যাহোক আমাদের কর্তব্য, অধিক পরিমাণে এই বাক্যটি জিকির হিসেবে পাঠ করা, এর মর্মার্থ বুঝা এবং সে আলোকে জীবন গঠন করা। তবে ফজিলতপূর্ণ আমলের ক্ষেত্রে সহিহ হাদিস কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে যেখানে সহিহ এবং জয়ীফ উভয় প্রকার হাদিস রয়েছে সেখানে জয়ীফ হাদিস প্রত্যাখ্যান করে সহিহ হাদিস অনুযায়ী আমল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।