Writing

ভরসার অর্থ কি

ভরসার অর্থ হল, দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় বিষয়ের কল্যাণ, লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সঠিকভাবে অন্তর থেকে আল্লাহর উপর নির্ভর করা। বান্দা তার প্রতিটি বিষয় আল্লাহর উপর সোপর্দ করবে। ঈমানে এই দৃঢ়তা আনবে যে, কোনকিছু দেওয়া না দেওয়া, উপকার-অপকার একমাত্র তিনি ছাড়া আর কারো অধিকার নেই।

আল্লাহ্ তাআলা মুমিন বান্দাদেরকে তাওয়াক্কুলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। এর মর্যাদা ও ফলাফল উল্লেখ করেছন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنتُمْ مُؤْمِنِينَ
“তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকে তবে আল্লাহর উপরেই ভরসা কর।”
-সূরা মায়েদা: ২৩

তিনি আরও বলেন,

وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلْ الْمُؤْمِنُونَ
“মুমিনগণ যেন একমাত্র আল্লাহর উপরেই ভরসা করে।”
-সূরা তওবা: ৫১

তিনি আরও এরশাদ করেন,

وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।”
-সূরা ত্বলাক: ৩

তিনি আরও বলেন,

فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
“যখন তুমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ভরসা কারীদের ভালবাসেন।”
-সূরা আলে ইমরান: ১৫৯

হাদীসগ্রন্থগুলোতেও তাওয়াক্কুলের গুরুত্বের বর্ণনা ও এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, “তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দান করতেন- যেমন পাখিকে রিযিক দান করে থাকেন- তারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেট ভর্তি হয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসে।” (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ্)

হাফেয ইবনে রজব (রহ.) বলেন, তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রে এ হাদিসটিই হল মূল। আর তাওয়াক্কুলই হল জীবিকা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।”
-সূরা ত্বালাক: ২,৩

জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) এরশাদ করেন, “কোন প্রাণী তার নির্দিষ্ট রিযিক পরিপূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যু বরণ করবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং রিযিক অনুসন্ধানের জন্য সুন্দর (বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। যা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তা গ্রহণ কর,আর যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ কর।” -ইবনে মাজাহ্, হাকেম ও ইবনে হিব্বান

ওমার (রা.) বলেন, “বান্দা এবং তার রিযিকের মধ্যে একটি পর্দা রয়েছে। সে যদি অল্পে তুষ্ট হয় এবং তার আত্মা সন্তুষ্ট হয় তবে তার রিযিক তার কাছে সহজে আগমন করবে। আর যদি সীমালঙ্ঘন করে এবং উক্ত পর্দাকে ফেড়ে ফেলে, তবে তার নির্দিষ্ট রিযিকের অতিরিক্ত কোন কিছু তার নিকট পৌঁছবে না।”

জনৈক বিদ্বান বলেন: “তুমি আল্লাহর উপর ভরসা কর, রিযিক তোমার কাছে ক্লান্তি ও অতিরিক্ত কষ্ট ছাড়া সহজেই এসে যাবে।”

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর উপর ভরসার সাথে আবশ্যক হল, জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,

وَاتَّقُوا اللَّهَ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلْ الْمُؤْمِنُونَ
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর মুমিনগণ যেন আল্লাহর উপরই ভরসা করে।”
-সূরা মায়েদা:১১

এখানে ভরসা করার সাথে সাথে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। আর তা নির্দেশিত যাবতীয় বিষয়ের উপকরণকে শামিল করছে। সুতরাং নির্দেশিত উপকরণ অবলম্বন না করে বা কাজ না করে শুধু ভরসা করে বসে থাকা বিরাট ধরণের অপারগতা- যদিও এতে তাওয়াক্কুল পাওয়া যায়। সুতরাং কোন বান্দার জন্য উচিত নয় যে, ভরসাকে অপারগতায় রূপান্তরিত করবে অথবা অপারগতাকে ভরসায় রূপান্তরিত করবে। বরং যে সমস্ত উপকরণ সে অবলম্বন করবে তার মধ্যে ভরসাও শামিল থাকবে।

এ অর্থে একটি হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল,হে আল্লাহর রাসূল! উটটিকে বাঁধার পর আল্লাহর উপর ভরসা করব? নাকি আল্লাহর উপর ভরসা করে (না বেঁধেই) ছেড়ে দিব?
তিনি (সা.) বললেন: “আগে তা বেঁধে দাও, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।”
-তিরমিযী

এক্ষেত্রে একদল লোক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে (প্রয়োজনীয় উপকরণ অবলম্বন না করে, কাজ না করে, পরিশ্রম না করে) নিজেদের অপারগতাকে ভরসা ভেবেছে, আর তাকেই ওযর বা ছুতা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে নিজের এবং পরিবারের অনেক অধিকার- ওয়াজিব বিষয় বিনষ্ট করেছে। নবী (সা.) বলেন: “কোন ব্যক্তির পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যাদের খরচ বহন করা তার উপর আবশ্যক তাদেরকে বিনষ্ট করা তথা তাদেরকে প্রয়োজনীয় খরচ না দেয়া।”
-আবু দাউদ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture