Writing

টার্নিং পয়েন্ট

Table of Contents

আয়েশা ও আফনান একটি রেস্তোরাঁয়। সাথে তাদের উভয়ের মা-বাবা। মা-বাবার টেবিল থেকে একটু দূরে বসে আছে আফনান এবং আয়েশা। পরিবারে বিয়ের মতামত দেওয়ার জন্য তারা উভয়ে নিজেদের নিয়ে কথা বলছে। এখানে আয়েশা ও আফনান উভয় ইসলামিক। ইসলামের ধারনা যে তাদের মধ্যে আছে সেটা তাদের লেবাস পরিধান ও দৃষ্টি হেফাজতের দিকে তাকালে বোঝা যায়।

আফনান: আসসালামু আলাইকুম।
আয়েশা: ওয়ালাইকুমুস আসসালাম।
আফনান: আপনি নিশ্চয়ই জানেন আজ আমরা কিসের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি!
আয়েশা: জি আলহামদুলিল্লাহ!

আফনান: আপনি হয়তো আমার সম্পর্কে জেনে এখানে এসেছেন তাও নিজ মুখে নিজের বায়ো ডাটা আপনার সামনে তুলে ধরি। আমি মোঃ আফনান বিন ওমর। আমি অতি সাধারণ একজন ছেলে। আল্লাহর ইচ্ছায় ছোটখাটো একটা ব্যবসা করি। মা-বাবা ও ছোট বোন নিয়ে আমার ছোট্ট পরিবার

আয়েশা: মাশাল্লাহ!

আয়েশাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে। তার সকল উত্তর এ যেন এক ইতস্ততের ছাপ ছিল। সে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু আবার বলতে চাচ্ছে না। আফনান ব্যাপারটা খেয়াল করলে-

আফনান: আপনাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে !আপনি ঠিক আছেন তো?

আয়েশা: (আমতা আমতা করে) না কিছু হয়নি।

আফনান: আপনার সমস্যা হলে বলতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আমি কিছু মনে করব না।

আয়েশা: না মানে….. আপনি যদি কিছু মনে না করতেন, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই!

আফনান: জি অবশ্যই।

আয়েশা: আমার মনে হয় আমি আপনাকে আগে থেকেই চিনি। আপনি সেই ভার্সিটির বড় ভাই আফনান, যাকে ভার্সিটির জুনিয়র থেকে শুরু করে সিনিয়ররা সবাই চিনতো।

আফনান: (মুখে মলিনতার হাসির সাথে) আপনি কি ঐ ভার্সিটিতে পড়ালেখা করেছেন?

আয়েশা: জি আমি আপনার জুনিয়র ছিলাম। তবে আপনার পপুলারিটি …..র কারনে আপনাকে চিনি।

আফনান: তাহলে তো আপনি আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন।

আয়েশা: আমিতো ততটুকুই জানি যতটুকু আমি নিজ চোখে দেখেছি। তবে হ্যাঁ ভার্সিটির ওই আফনান আর আমার সামনের আফনান উভয়ের মধ্যে আমি অনেক বড় ফারাক দেখতে পাচ্ছি!

চলুন ঘুরে আসি দুই বছর আগে এক ভার্সিটির ক্যাম্পাসে।

আফনান। ভার্সিটির বড় ভাই নামে পরিচিত। সবাই তাকে বড় ভাই বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। উগ্রতায় ভরা যার জীবন। ইসলামের কোন ছোঁয়া ছিলনা তার মাঝে। হুজুর সহ্য করতে পারত না মোটেও। পর্দাশীল মেয়ে দেখলে ভাবতো একটু বেশিই বাড়াবাড়ি। অবাত হারাম রিলেশনশিপে জড়িত ছিল তার জীবন। এইতো সেদিন সকল জুনিয়রদের হাতে একটি একটি লাভ বেলুন দিয়ে, ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটিকে প্রপোজ করল সবার সামনে। লজ্জার মাথা ঠেকিয়ে হাঁটু গেড়ে তাকে ফুল দিয়ে নিজের মনের প্রস্তাব পেশ করল। সকলে তা আড় চোখে দেখলেও তার সামনে আসলে ভদ্রতা দেখায়। কেননা আফনানকে সবাই ভয় পেতো। উল্টাপাল্টে হলেই , বন্ধুদের নিয়ে কেলানি দিত। তাই সবাই তাকে বাহবা দিয়ে বেড়াতো ঠিক কিন্তু তার পেছনে সবাই তাকে অপছন্দ করত। অশ্লীলতা উদ্দীপনায় যার জীবন।

আয়েশা। খুবই নম্র ভদ্র এক পর্দাশীল মেয়ে। ইসলামকে কেন্দ্র করে ছিল যার জীবন। পর্দা করে সে ভার্সিটিতে আসতো। তার সহপাঠীরা তাকে খুব সম্মান করতো। সে সব সময় নন মাহরাম মেইনটেইন করে চলতো। কলেজের তার খুব সুনাম ছিল। এইতো সেদিন আয়েশা তার সহপাঠীর সাথে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কথা বলে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটতে থাকল। হঠাৎ তার চোখে পড়ে একটি ছেলে শুয়ে আছে একটি মেয়ের কোলে। চোখে পড়ার সাথে সাথে সে ইন্নালিল্লাহ বলে উঠলো। এবং তার সহপাঠী তাকে বলল ,চলে আয়! বড় ভাই যে।”আয়েশা মনে মনে তখন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করল ,”ইয়া আল্লাহ! তুমি তাদের হেদায়েত দান করো”। এবং তারা উভয়ে সেখান থেকে সরে পরলো।

বিকালে আফনান ব্যালকনিতে আনমনা হয়ে বসে আছে। তার ছোট বোন বর্ষা কফি নিয়ে এলো। বর্ষা বললো,

-ভাইয়া তোমার কি মন খারাপ?

– কই নাতো?

-ভাইয়া আজকে শুক্রবার তুমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলে?

-তুই কি দেখিস নি আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম!

-হ্যাঁ তুমি তো ঘুম ছিলে। আচ্ছা ভাইয়া তুমি নামাজ পড়ো না কেন?

-কই পড়িত মাঝে মাঝে, সময় পাইনা তাই পড়তে পারিনা।

-জানো ভাইয়া আজকে আমার তিন ওয়াক্ত নামাজ কমপ্লিট। ইনশাআল্লাহ বাকি দুই ওয়াক্তের অপেক্ষায় আছি।

-আচ্ছা।

-জানো ভাইয়া, সেদিন খালাম্মাদের বাসায় গিয়েছিলাম। আম্মাকে খালারা তোমার কথা বলে অনেক লজ্জায় ফেলে দিচ্ছিলো। বলছিল তুমি নাকি উগ্র। কখনো নাকি তুমি মসজিদে যাও না। সারাক্ষণ নাকি ভার্সিটিতে বড় ভাই সেজে পড়ে থাকো। সাথে বলছিল বড় ছেলে যেমন হয়েছে ছোট মেয়েও তেমন হবে। কথাটা আমার খুব খারাপ লেগেছিল ভাইয়া।

-কি বলিস!

-হুম।ভাইয়া।জানো আমি আল্লাহর কাছে তোমাকে নিয়ে বলেছি।

-কি বলেছিস?

-বলেছি আল্লাহ আপনি আমার ভাইয়াকে বড় ভাই থেকে ভালো ভাই বানিয়ে দিন।

রান্না ঘর হতে ডাক এলো,

বর্ষা!!!!!

-আসছি মা।

এই বলে বর্ষা চলে এলো।

আফনান ছোট বোন হতে এমন কথা গুলো শুনে মনে মনে অনেক লজ্জিত হলো।ছোট কথা গুলো যেন, অনুভূতির দোয়ারে কড়া নেড়ে গেলো।

আফনান ব্যালকনি থেকে উঠে নিজ রুমে এলো। বোনের কথাগুলো তার মাথায় ঘুরছে। হঠাৎ আফনান তার বুকে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করল। বুকে হাত দিয়ে কি একটা খোঁজার জন্য রুমের বাহিরে বের হলো। বোনের রুম ক্রস করতেই আফনান থেমে দাঁড়ালো। বর্ষাএকটি আয়াত তেলাওয়াত করছিল আর কাঁদছিল। আফনান রুমে ঢুকেই –

-কিরে কাঁদছিস কেন! কি এমন পড়তেছিস?

-ভাইয়া দেখো এখানে কি বলা হয়েছে।

-কই , পড়ে শোনা তো!

-"তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শুনেনা। তারা পশুর মত বরং এদের চাইতেও নিকৃষ্ট। তারা চরম গাফিলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে"।
(সূরা আরাফ ০৭:১৭৯)

আফনান আর কিছুই বলতে পারলো না। শুকনো গলায় বোন কে বলল

-বর্ষা আমার পাঞ্জাবীটা একটু আমাকে খুঁজে দিবি?

-হ্যাঁ ভাইয়া অবশ্যই।

এবার আফনান সোজা হাঁটা দিল মসজিদের দিকে। সেই হাঁটা থেকে শুরু হয় আফনানের নীড়ে ফেরার গল্প।

চলুন এবার চলে যাওয়া যাক রেস্তোরাঁয়।

আফনান: আপনি যদি কিছু মনে না করতেন আমি আপনাকে একটি কথা বলতে চাচ্ছি।

আয়েশা: জি অবশ্যই!

আফনান: একটি মেলা হচ্ছিল। যেখানে ছিল অনেক সাজসজ্জা। মানুষের ভিড় যেখানে হাঁটায় যাচ্ছে না। এত মানুষের ভিড় দেখে আমারও কৌতুহল জাগলো আমিও সেই মেলায় যাব। এবং চলে গেলাম সেই মেলায়। সেখানে গিয়ে দেখলাম হরেক রকমের দোকান যার যার প্রয়োজন অনুসারে সে দোকানে ভিড় করছে। কিন্তু এসবের মাঝে খেয়াল করলাম একটি দোকান যেখানে অনেক বেশিই ভিড় করেছে। কৌতূহলবশত আমিও সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি সেটি রিং এর দোকান। সবাই সুন্দর সুন্দর রিং কিনছে। আমিও অনেক সুন্দর একটি রিং বাছাই করে নিলাম। কিন্তু এটির দাম ছিল অতি নগন্য। তবে আমি সন্তুষ্ট, যে অল্প দামে পছন্দের মত একটি রিং পেয়েছি। রিং টা আমি সবসময়ই পরে থাকি। অনেক সুন্দর চকচকে। মনে মনে ভাবতে থাকি আমি খুব ভাগ্যবান। অনেকে আমাকে আমার এই রিং নিয়ে প্রশংসা করত, এতে আমার ভালোই লাগতো। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে আমার রিং এর উজ্জ্বলতা ততো হারাচ্ছে। যা আর বয়ে বেড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাই আবার গেলাম মেলায়। কিন্তু এবার আর সে দোকানে গেলাম না। এবার আমি হাঁটছি। এবং ভালোমন্দ যাচাই করে সঠিক দোকান নির্বাচন করছি। এর মধ্যে একটি দোকান চোখে পড়ল যেখানে ভিড় বলতে নেই ,আছে একজন দুজন। দোকানে গেলাম। গিয়ে দোকানদারকে বলি আপনাদের দোকানে সকল রিং ঢেকে রাখা কেন ? প্রতিউত্তরে দোকানদার আমাকে বলল, এই রিংগুলো অনেক দামি। যারা আসলেই ক্রয় করতে চাই শুধু তাদের দেখানো হয়। আপনি যদি ইচ্ছুক হয়ে থাকেন কেনার তাহলে আমি আপনাকে দেখাতে পারি। পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার যথার্থ মূল্য নেই। তাই আমি সেখান থেকে ফিরে এলাম। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুবই ভালো লাগলো। পরের দিন সঠিক মূল্য নিয়ে রিংয়ের দোকানে হাজির হলাম। এবং সবচেয়ে দামি রিং টি কেনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম এবং এখনো করছি।

আয়েশা: শেষ পর্যন্ত কি রিং টা কিনতে পেরে ছিলেন?

আফনান: আমি যে এখনো রিং এর দোকানের সামনেই বসে আছি। অনুমতি পেলে ইনশাআল্লাহ ক্রয় করবো।

আয়েশা: আপনি চাইলে সম্মতি জানাতে পারেন, পরিবারে।

আফনান:আলহামদুলিল্লাহ ।

এরপর আফনান এবং আয়েশার সম্মতিতে, শরীয়ত সম্মত বিয়ে হল। এবং তাদের দ্বীনের অর্ধেকের পরিপূর্ণতা পেল।

লিখেছেন

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture