টাকা না থাকলে কিভাবে যাকাত দিবো

আমার বিয়ে উপলক্ষে আট বরির বেশি স্বর্ণের মালিক হই আমি। বর্তমানে আমার স্বামী বড় পরিমাণ ঋণ থাকায় এবং আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় আমি এখন যাকাত দিতে অসমর্থ। আমি যদি তিন থেকে পাঁচ বছর পর স্বাবলম্বী হওয়ার পর যাকাত দেই তাহলে এক্ষেত্রে বিলম্বে যাকাত প্রদান ইসলামের বিধান কি?
যাকাত ওয়াজিব আলাল ফাওর। ইসলামী ফিক অনুযায়ী যখন যাকাত আবশ্যক হয় তখনই দিতে হয়। যদি আপনার মনে হয় যে এখন যাকাত দেওয়ার মত ব্যক্তি আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না বা আরো উপযুক্ত ব্যক্তি পাবেন তাহলে টাকা আলাদা করে রাখলেন হিসাব আলাদা করে রাখলেন একটু পরে দিলেন ঠিক আছে।
কিন্তু শুধুমাত্র আমার এখন দেওয়ার মত টাকা নেই এই অজুহাতে আপনি যাকাত দু চার বছর পিছাতে পারবেন না, আপনার আটভরি স্বর্ণ থেকে খুব সামান্য পরিমাণ বিক্রি করলে কয়েক বছরে যাকাতের টাকা হয়ে যাবে। আমরা বেশিরভাগ মানুষ চাই আমারটা আমার কাছে থাকুক আমি এক্সট্রা ফাওটা দিয়ে কোন রকম যাকাত দেয়ার চেষ্টা করব। অনেক লোক বলে হুজুর ঋণ পরিশোধের আমল শিখায়া দেন। আমি বলি ঋণ পরিশোধের আমল হলো স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ দিবেন। এটা হল ঋণ পরিশোধের আমল। বলে না হুজুর সেটা না তো, আমি দোয়া চাইছি দোয়া।
একটা দোয়া শিখায় দেন। আমি বলছি আমি বুঝছি। আপনি চাচ্ছেন আমি এমন কোন দোয়া শিখায় দিই যেই দোয়া পড়লে আসমান থেকে ধুপ করে একটা বস্তায় টাকা পড়ে যাবে। আপনি ঋণ দিয়ে দিবেন আপনার স্থাবরা স্থাবর সম্পত্তিতে হাত দেওয়া লাগবে না, আপনি সেই দোয়া চাচ্ছেন।
মোহাম্মদ صَلَّى ٱللَّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ সেটা আমদেরকে শিখান নাই তিনি শিখিয়েছেন আমি ঋণগ্রস্ত আমার সর্বশেষ সম্বল বিক্রি করে তারপরে যখন আমি পারছি না তখন আমি আল্লাহর কাছে তার আগে এবং তখন আল্লাহর কাছে হাত পাদবো কিন্তু আমরা চাই আমার সব ঠিকঠাক থাকুক আমি ফাওটা দিয়ে কোন রকম যাকাত দেই বা ঋণ দেই, এটা মুসলিম সুলভ চিন্তাধারা বা মানসিকতা নয়।
নবী صَلَّى ٱللَّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বুখারী হাদিসে বলেছেন কিয়ামতের আলামত সময়ের মধ্য থেকে একটা হলো যাকাতকে মানুষ জরিমানা মনে করবে, দন্ড মনে করবে দিতে চাইবে না যাকাত দিতে পারা তো সৌভাগ্যের আমার আখেরাতের একাউন্টে জমা হচ্ছে আমি সওয়াব পাব, তাহলে সেক্ষেত্রে আমার কেন সামান্য অংশ বিক্রি করে দিতে কারপণ্য হচ্ছে বা দ্বিধা হচ্ছে এটা করা উচিত নয়।
আপনার স্বামীর ঋণ আছে তাতে আপনার কি, মুশকিল হলো স্বর্ণের মালিক আসলে কে এটা ক্লিয়ার না। এটা কি নারী নিজে না তার স্বামীর, আমাদের দেশে এক্ষেত্রে একটা বড় বড় ধরনের গোজামিল আছে, স্বর্ণ দিয়ে দেওয়া হয় মেয়েকে যে তোমাকে দিলাম মহর হিসেবে দিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপরে যখন আবার তার ইতালির ভিসা চলে আসে তখন বলে স্বর্ণগুলো দাও বিক্রি করে ইটালি যাব। কত স্বর্ণ হয়ে যাবে?
স্বর্ণের মালিক যদি তিনি হন তাহলে আপনি কিভাবে চান?
আপনি একটা দরখাস্ত লিখতে পারেন। বরাবর মাননীয় স্ত্রী বিষয় ঋণ মঞ্জুরের আবেদন। জনাবা যথাবেহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিবেদন। এই যে আমি অধম ঋণগ্রস্ত গরীব আপনি আমাকে আপনার স্বর্ণ বিক্রি করে লোন, হিসেবে দিলে আমি সেটা যথাসময়ে অমুক সময়ে পরিশোধ করিব বাধ্য থাকিব ইত্যাদি ইত্যাদি আপনি দরখাস্ত করতে পারেন।
কিন্তু আপনি তো অর্ডার করছেন। তো আসলে স্বর্ণ কি আপনি তাকে দিয়ে দিয়েছেন?
যদি দিয়ে দিয়ে থাকেন যাকাত তাকেই দিতে হবে। কিন্তু আপনি দিচ্ছেন আবার মন মত আপনি নিচ্ছেন। আর দেওয়ার পরে তিনি যদি এটা তার মন মত মানুষকে দিয়ে দেয়, তাহলে আপনি তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করছেন। তার মানে বিষয়টা ক্লিয়ার না, এইটা ক্লিয়ার করা উচিত।