রাসূলুল্লাহকে (সা:) সর্বপ্রথম স্পর্শকারী

পৃথিবীতে আগমনের পর সর্বপ্রথম যে মানুষটি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোলে নেন, তাঁর সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। এমনকি তাঁর নাম পর্যন্ত অনেকেই শুনেননি! তাঁর নাম ছিলো- বারাকা। অবশ্য তিনি আরেক নামে খ্যাত ছিলেন- ‘উম্মে আয়মান’ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)।

উম্মে আয়মান (রা:) ছিলেন হাবাশার অধিবাসী। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিতা আব্দুল্লাহর দাসী ছিলেন তিনি। পিতার ইন্তেকালের পর তিনি তাঁর মা আমিনার তত্ত্বাবধানে আসেন। তিনি ছিলেন ধাত্রী, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্মের সময় আমিনার সাথে ছিলেন। সেই হিশেবে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্ম-পরবর্তী সর্বপ্রথম তাঁকে স্পর্শ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন উম্মে আয়মান (রা:)।

একজন আফ্রিকান মহিলা সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্পর্শ করেন, চিন্তা করা যায়?

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে উম্মে আয়মান (রা:) অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছয় বছর বয়সে তিনি মায়ের সাথে বাবার কবর যিয়ারত করতে মদীনায় যান। ফেরার পথে তাঁর মা ইন্তেকাল করেন।

আমিনার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন কে? মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে নিয়ে মক্কায় ফিরেন কে? এমন প্রশ্ন কি আমাদের মনে জাগে? সেই যাত্রায় তাঁদের সফরসঙ্গী ছিলেন উম্মে আয়মান (রা:)। তিনি পিতা-মাতা হারানো মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে নিয়ে মক্কায় ফিরেন।

৬ বছর বয়স থেকে ২৫ বছর বয়স, এই দীর্ঘ ১৯ বছর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে যে মহিলা তাঁকে লালন-পালন করে বড়ো করেন, তিনি ছিলেন উম্মে আয়মান (রা:)। মা হারানো একজন ছেলে/কিশোর/যুবককে মায়ের অভাব না বুঝার জন্য শতোচেষ্টা করে যান উম্মে আয়মান (রা:)। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ডাকতেন- ‘মায়ের পর মা’

খাদিজার (রাদিয়াল্লাহু আনহা) সাথে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়ে হবার পর তিনি উম্মে আয়মানকে (রা:) মুক্ত করে দেন, তিনি আর তখন দাসী নন। উম্মে আয়মানের (রা:) বিয়ে হয় উবাইদ ইবনে আমরের সাথে। তাঁদের ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয়- আয়মান। এই ছেলের নামেই উম্মে আয়মান (রা:) পরিচিত হোন। কিছুদিন পর স্বামী মারা গেলে উম্মে আয়মান (রা:) আবারো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে ফিরেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ি ছিলো তাঁর কাছে অনেকটা ‘বাপের বাড়ি’

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলাম প্রচারের শুরুর দিকে যে কয়েকজন নারী ইসলাম গ্রহণ করেন, উম্মে আয়মান (রা:) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

তাঁর প্রথম স্বামীর ইন্তেকালের/বিচ্ছেদের পর একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দিলেন- “তোমাদের মধ্যে কে আছো যে একজন জান্নাতী নারীকে বিয়ে করতে চাও?” যায়িদ ইবনে হারিসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘পালকপুত্র’। তিনি আহ্বানে সাড়া দেন। তাঁর সাথে বিয়ে হয় উম্মে আয়মানের (রা:)। তাঁদের ঘরে জন্ম হয় বিখ্যাত সেনাপতি উসামা ইবনে যায়িদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু); যিনি পরিচিত ছিলেন ‘রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রিয়ভাজন’ হিশেবে।

খুব কম সংখ্যক সাহাবী দুটো হিজরতের মর্যাদা অর্জন করেছিলেন। উম্মে আয়মান (রা:) ছিলেন সেই স্বল্পসংখ্যক সাহাবীদের একজন। তিনি উহুদ, খাইবার এবং হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খাইবার যুদ্ধে যে ২০ জন নারী শত্রুদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেন, উম্মে আয়মান (রা:) ছিলেন সেই দলে।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে তাঁর বেশ মধুর সম্পর্ক ছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথে অনেকসময় মজা করতেন। অনেকসময় তাঁদের সম্পর্ক রাসূল-সাহাবী’র মতো ফরমাল সম্পর্ক না হয়ে ইন-ফরমাল হতো; মা-ছেলের সম্পর্ক। একবার উম্মে আয়মান (রা:) রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমাকে পানির পাত্রটি দাও।” এটা দেখে আয়িশার (রাদিয়াল্লাহু আনহা) চক্ষু চড়কগাছ! মানে, রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মে আয়মান (রা:) নির্দেশ দিচ্ছেন? এই সম্পর্ক, এই নির্দেশনা ছিলো শৈশবের লালন-পালন করার ফলে একধরণের মধুমাখা আবদার।

উম্মে আয়মানের (রা:) সম্পর্ক রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবারের সাথে এমনভাবে জুড়ে যায় যে, তিনি হয়ে যান রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবারেরই একজন। সুখে-দুঃখে সর্বদা পাশে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুজন স্ত্রী এবং দুজন মেয়ের ইন্তেকালের পর উম্মে আয়মান (রা:) তাঁদেরকে গোসল করান। তারা হলেন:

ইংল্যান্ড-অ্যামেরিকার লোকেরা যখন ইংরেজি উচ্চারণ করে, তাদের উচ্চারণ একরকম হয়। অন্যদিকে, উপমহাদেশের লোকেরা যখন উচ্চারণ করে, তাদের একই শব্দের উচ্চারণ আরেক রকম হয়।

উম্মে আয়মান (রা:) ছিলেন আফ্রিকার হাবাশার অধিবাসী। তিনি যখন আরবি উচ্চারণ করতেন, তখন সেটা অনেকসময় অর্থ বিকৃত করতো। যেমন: তিনি সালাম দেবার সময় বলতেন ‘সালামা লা আলাইকুম’। যা সালামের অর্থকেই উল্টো করে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সংশোধন করে দিয়ে বলতেন, “তুমি বরং ‘আস-সালাম’ বলো।”

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের পর তিনি মর্মাহত হোন, অনেক কান্নাকাটি করেন। তাঁর চিন্তার বিষয় ছিলো- ওহী নাযিল তো বন্ধ হয়ে গেলো!

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের পর আবু বকর ও উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁর বাড়িতে যেতেন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। খলিফা উসমানের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খিলাফতকালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বপ্রথম স্পর্শকারী

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version