মহিলাদের জানাজায় অংশগ্রহণ এবং কবর জিয়ারত

আমাদের সমাজে এমন অনেক বোন আছেন যারা কখনোই কাউকে কবর দিতে দেখেননি, এবং বাস্তবে সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও অর্জন করেননি। তারা দেখেননি কিভাবে একজন মৃত ব্যক্তিকে মাটির নিচে নামানো হয় এবং তার উপর মাটি ছিটানো হয়। একজন মৃতকে দাফন করার চূড়ান্ত যে প্রক্রিয়া সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা বঞ্চিত।

সুবহানাল্লাহ! মৃত্যুকে অনুভব করার অনেক উপায় আছে। আমরা বাস করছি একটি ক্রমবর্ধমান বস্তুতান্ত্রিক সমাজে, যেখানে পার্থিব জীবনের চাকচিক্য এবং ক্ষতিকারক অনেক কিছু দ্বারাই মানুষ প্রলুদ্ধ এবং প্রভাবিত। এই লোভ এবং বস্তুবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কিভাবে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনের মূল্য নির্ধারণ করব?

মৃত্যুকে অনুভব করার জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মৃতকে গোসল করানো, মৃতের দাফনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, মৃতের পরিবারকে সঙ্গ এবং সান্ত্বনা দেওয়া – এসব মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, এবং হৃদয়কে নরম করে।

মৃত্যুকে অনুভব করার জন্য কবরস্থান পরিদর্শনের মত উৎকৃষ্ট আর কিছুই নেই। নিজের মৃত্যুকে স্মরণ করার জন্য কবরস্থানে দাঁড়িয়ে মৃতকে মাটির নিচে যেতে দেখা – এর চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কি হতে পারে? কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে এ বিষয়টি নিয়ে ইখতিলাফ আছে। জানাজায়, কবরস্থানে এবং দাফনের সময় নারীরা কোথায় অংশগ্রহণ করতে পারবে আর কোথায় পারবে না সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কি অনুমোদিত আর কি নিষিদ্ধ এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা আলোচনা করতে চাই। প্রথমেই জানাজার নামাজ দিয়ে শুরু করা যাক। মহিলাদের জন্য জানাজায় অংশগ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে এমনকি ইসলামিক ঐতিহ্যগত আইনেও অনুমোদিত। কাজেই জানাজায় অংশগ্রহণ করা, জানাজার নামাজ পড়া – হোক তা মসজিদে বা মাঠে, মহিলাদের জন্য অনুমোদিত, আর এর জন্য পুরুষদের মত মহিলারাও ওহুদের পাহাড় পরিমাণ সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ তা’লা।

এখন আলোচনা করছি এই প্রসঙ্গে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। যে বিষয়টি অত্যাধিক পরিমাণে নিষিদ্ধ তা হল হাহাকার বা বিলাপ। এতে শুধুমাত্র বিলাপকারী ব্যক্তির গুনাই হয় না, এই হাহাকার মৃতের জন্যও ক্ষতিকর। আর রাসুলের (ﷺ) যুগেও নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য এ ধরনের আহাজারি নিষিদ্ধ ছিল। শোক প্রকাশ করতে গিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করা, জামা কাপড় ছিড়ে ফেলা – জাহেলিয়ার সমাজে এ ধরনের প্রথা প্রচলিত ছিল। সেই সমাজে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেত এবং পেশাদার লোক নিয়ে আসতো আহাজারি করার জন্য। পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই রাসুল (ﷺ) এইভাবে কান্নাকাটি এবং হাহাকার নিষিদ্ধ করেছেন।

তাহলে আমরা কি বুঝলাম? সালাতুল জানাজা সর্বসম্মতিক্রমে নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই অনুমোদিত, আর আহাজারি নারী পুরুষ উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ।

কবর জিয়ারত প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করতে চাই। আব্দুল্লাহ ইবনে আবি মুলাইকা বলেন, একদিন আয়েশা (রা:) কবরস্থান থেকে আসলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কোথা থেকে আসলেন? তিনি বললেন, আমি আমার ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের কবরের কাছ থেকে আসলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুল (ﷺ) কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি?
তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ’, রাসুল (ﷺ) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কবর জিয়ারতের আদেশ করেছিলেন।[মুস্তাদরাকে হাকেম, বায়হাকি] অন্য হাদিসে এসেছে রাসুল (ﷺ) কবর জিয়ারতের আদেশ দিয়েছেন কারণ তা দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমায় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

আয়েশা (রা:) বলেছিলেন এক সময় কবর জিয়ারত নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই নিষিদ্ধ ছিল, বিশেষ করে নারীদের জন্য – কারণ তারা নিয়াহার অনুসরণ করতো, অর্থাৎ আহাজারি করতো বেশি। কিন্তু পরবর্তীতে রাসুল (ﷺ) শুধু কবর জিয়ারতকে জায়েজই করলেন না, বরং সাহাবাদের কবর জিয়ারতের পরামর্শ দিলেন – এর মধ্যে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত। মহিলাদের কবর জিয়ারতের ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনাও তিনি দিয়েছিলেন। যেমন মহিলারা ঘনঘন যাতায়াতকারী হিসেবে পরিচিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন, অত্যাধিক কান্নাকাটি বা আহাজারি করতে পারবেন না, এবং পর্দা বজায় রেখে কবর জিয়ারত করবেন। আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে পরবর্তী পর্বে, ইনশাআল্লাহ।

ড. ওমর সুলাইমান

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Exit mobile version