কবর
সবাই একদিন থাকবো না এই পৃথিবীতে। বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম হয়তো কতো বৎসর। তবে মৃত্যু অবধারিত। শেষ গন্তব্য তো মাটি। যে আত্মা নিতে আসবে, জানি না কেমন লাগবে দেখে!
কালো কাপড় পড়া বিরাট কুৎসিত কোন কেউ? তাকে দেখে হয়তো ভয়ে ছটফট করবো আমরা, হাত-পা ভারী হয়ে যাবে, কথা আটকে যাবে, কপাল বেয়ে ঘাম ঝরবে, হয়তো আরও ৭০ গুণ ভয়ানক কিছু হতে পারে, আমরা ভয়ার্ত চিৎকার কারো কানে পৌঁছবে না তখন। এভাবে যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে আমাদের মৃত্যু হবে।
গোসল করানোর পর সাদা কাফনে জড়িয়ে যেতে হবে, হয়তো নাকে তুলো গোজা থাকবে। কবরস্থানের দিকে নিয়ে যেতে থাকবে, জানাজা হবে, কবর আগেই খোঁড়া থাকবে সাড়ে ৩ হাত। শুইয়ে দেবে কবরে, তারপর আমাদের ওপরে বাঁশের কয়েকটি ফলা বিছিয়ে দেয়া হবে, তার ওপর কলাপাতা আর মুঠোয় মুঠোয় মাটি পড়তে থাকবে কাফনের কাপড় বেয়ে শরীরে। মাটি দেয়া শেষে সবাই চলে যাবে, হয়তো ২-১ দিন এসে কাঁদবে কবরের পাশে। তারপর কেউ দেখতে আসবে না।
আমরা একদম একা, নিঃসঙ্গ। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে কবরে ঘাস গজাবে, একদিন আমরা ওপরেই হয়তো দেয়া হবে নতুন আরেকটি কবর, নতুন লাশ… এভাবেই মিলিয়ে যাবে সব কিছু। কিন্তু আমরা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত শুয়ে থাকবো সেই দরজা-জানালাবিহীন বদ্ধ সেই কবরে।
মৃত্যু- চেষ্টা সাধনার সময় শেষ হওয়ার সর্বশেষ ঘোষণা। আর পরকাল- নিজের চেষ্টাসমূহের ফলাফল লাভের শেষ জায়গা। মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার চেষ্টা-সাধনার না কোনো সুযোগ রয়েছে, না রয়েছে পরকালীন জীবন শেষ হয়ার কোনো সম্ভাবনা।
হায়! কতই না কঠিন এ বাস্তবতা। যদি আমরা মৃত্যুর পূর্বে এ ব্যাপারে সজাগ হতাম! কারণ, মৃত্যুর পরে এ ব্যাপারটি বুঝে আসলে তখন আর কিছুই করার থাকবে না। মৃত্যুর পর সতর্ক হওয়ার অর্থ তো শুধু এই যে, মানুষ কেবল এই বলে আফসোস করে করে সময় কাটাবে যে, সে অতীতে কতো বড়ো ভুলই না করেছে। এমন এক ভুল যা শুধরানোর সামন্যতম সুযোগ তার সামনে নেই।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন,
‘তোমাদের কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের হিসাব সম্পন্ন করে নাও, তোমাদের আমল ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের আমলসমূহ ওজন করে নাও, কিয়ামত দিবসে পেশ হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো। সুসজ্জিত হও সেদিনের জন্য, যেদিন তোমাদের সামনে কোনো কিছু অস্পষ্ট থাকবে না’।
মায়মূন ইবন মিহরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু হতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেই নিজের হিসেব নেয় বা মুহাসাবা করে। যেভাবে সে তার সঙ্গীর সঙ্গে হিসেব করে কোথায় তার আহার আর কোথায় তার পোশাক।’
رَبِّ اغْفِرْلِىْ خَطَايَاىَ وَجَهْلِىْ
‘হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার ভুল ও অজ্ঞতাগুলোও ক্ষমা করুন’।
اغْفِرْلِى وَ تُبْ عَلَيَّ اِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُوْرُ
‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহান তাওবাহ কবুলকারী; মহান ক্ষমাশীল’।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সব সময় ক্ষমা প্রার্থনা করার এবং শোকরগুজার, আনুগত্যশীল হওয়ার তাওফিক দিন।
আ-মিন।