Q/AAbdullahil HadiScholar Bangla

মৃত্যুর পূর্বে কাউকে জানাজা নিষেধ করলে করণীয় কি

মৃত্যুর পূর্বে কাউকে জানাজা বা কাফন-দাফনে অংশ গ্রহণ করতে নিষেধ করা এবং এমন‌ ওসিয়ত পালন করার বিধান।
কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর পূর্বে কাউকে তার জানাজা বা কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করতে বারণ করে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে‌ ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কী করণীয়?

কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পূর্বে যদি তার উত্তরাধিকারী বা পরিবার-পরিজনকে ওসিয়ত (অন্তিম নির্দেশনা) দিয়ে যায় যে, উমুক ব্যক্তি যেন তার জানাজায় না আসে বা তার কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ না করে বা কবরে মাটি না দেয় তাহলে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি নয়। বরং এ ধরনের ওসিয়ত করাই হারাম। কেননা এটি সম্পর্কচ্ছেদ, শত্রুতা ও বিদ্বেষ মূলক ওসিয়ত। আর মৃত ব্যক্তির হারাম ওসিয়ত বাস্তবায়ন করা জায়েজ নাই। অর্থাৎ এই ধরনের ওসিয়ত করা যেমন হারাম তেমনি তা বাস্তবায়ন করাও হারাম।

ইবনে রুশদ (স্পেনের বিখ্যাত ফকিহ। মৃত্যু: ১১৯৮ খ্রিষ্টাব্দ) বলেন,

” لا يلزم أن يُنفَّذ من الوصايا إلا ما فيه قربة وبر”
“যে ওসিয়তে আল্লাহর নৈকট্য এবং সৎকর্ম আছে তাছাড়া অন্য কোনো ওসিয়ত বাস্তবায়ন করা অবশ্যক নয়।”
[আল বায়ানু ওয়াত তাহসিল ২/২৮৭]

কুয়েতের ফিকহ বিশ্বকোষ-এ বলা হয়েছে যে, ওসিয়ত বৈধ হওয়ার একটি শর্ত হলো,

أَلا يَكُونَ الْمُوصَى بِهِ مَعْصِيَةً أَوْ مُحَرَّمًا شَرْعًا
“ওসিয়ত কৃত বিষয়টি আল্লাহর নাফরমানি মূলক বা শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম না হওয়া।”
[আল মাওসুয়াতুল‌ ফিকহিয়া ৪৩/২৫৮]

আরো বলা হয়েছে,

الْقَصْدُ مِنَ الْوَصِيَّةِ تَدَارُكُ مَا فَاتَ فِي حَالِ الْحَيَاةِ مِنَ الإِحْسَانِ ، فَلا يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ الْمُوصَى بِهِ مَعْصِيَةً ” انتهى .
“ওসিয়ত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জীবনে যে জনকল্যাণমূলক বা ভালো কাজ করা হয়নি তা পূরণ করা। তাই আল্লাহর নাফরমানি মূলক কাজের অসিয়ত করা জায়েজ নেই।”

অর্থাৎ অসিয়ত হলো, একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বা অন্যান্য জিনিসপত্র কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে উত্তরাধিকারী বা আত্মীয়-স্বজনের নিকট তার ইচ্ছা প্রকাশ করা। আর অসিয়তের উদ্দেশ্য হলো, ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পক্ষ থেকে জনকল্যাণমূলক বা সৎকর্ম সম্পাদন করা। তাই এমন কোনো কাজের অসিয়ত করা যাবে না যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

উদাহরণস্বরূপ: একজন ব্যক্তি অসিয়ত করতে পারেন যে, তার সম্পত্তি অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করা হবে কিংবা মসজিদ, মাদরাসা বা এতিমখানায় দান করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু তিনি অসিয়ত করতে পারেন না যে, তার সম্পত্তি দিয়ে মন্দ কাজ করা হবে।

মোটকথা, কারো প্রতি দুঃখ, কষ্ট বা রাগ ক্ষোভের কারণে মৃত্যুর পূর্বে তাকে তার জানাজা বা কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করা জায়েজ নাই। কেউ তা করে গেলেও তা পালন করা আবশ্যক নয়।

তবে এখানে যে বিষয়ে‌ আমাদের সতর্ক হওয়া জরুরি তা হলো, একজন মানুষের সাথে কোন ধরনের মনোমালিন্য বা ঝগড়াঝাঁটি হয়ে থাকলে বিষয়টি যথাসম্ভব দ্রুত নিষ্পত্তি করে নেওয়া, কোন মানসিক দুঃখ, কষ্ট, রাগ বা ক্ষোভ থেকে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া বা যেকোনো ভাবে তার সুরাহা করা আবশ্যক। অনুরূপভাবে মানুষর প্রাপ্য হক আদায়ের ব্যাপারে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কেননা আমরা কেউ জানি না, কার দুয়ারে কখন মৃত্যু দূত এসে করাঘাত করবে। তখন হয়তো কারো প্রতি বুক ভরা ক্ষোভ বা কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যেতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটেই সাধারণত মানুষ মৃত্যুর পূর্বে কাউকে তার কাফন-কাফন বা জানাজায় অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করে যায়। তাই এমন প্রেক্ষাপট যেন‌ তৈরি না‌ হয় সে ব্যাপারে আমাদের সকলের সচেতন থাকা ও সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহ হেফাজত করুন।‌ আমিন।

আল্লাহু আলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture