Q/AAbdullahil Hadi

ইহুদিদের লাল গাভীর রহস্য এবং ইসলামের সাথে এর সম্পর্ক

ফেসবুকে লাল গাভী নিয়ে খুব পোস্ট হচ্ছে। এটা নাকি দজ্জাল আগমনের আলামত। এ কথাটার সত্যতা কতটুকু?
ইহুদীদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থের ভাষ্যমতে, কিয়ামত সংঘটিত সময় ঘনিয়ে এলে পৃথিবীতে একটি লাল গাভী জন্ম নিবে। সেই লাল গাভী জন্ম হওয়ার পর তিন বছর বয়সে উপনীত হলে তারা সেটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে ইহুদি সম্প্রদায় পবিত্র হবে। এই ছাই মাখা ছাড়া ইহুদিরা পবিত্র হবে না।

তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী লাল গাভী বের হওয়ার পরই বর্তমান বায়তুল মাকদিস মসজিদ এবং The Dome of the Rock বা القبة الصخراء ভেঙ্গে সেখানে তারা একটি হায়কাল বা উপাসনালয় নির্মাণ করবে বা মাটির নিচের প্রথিত অবস্থায় আছে তা মাটি খুঁড়ে উত্তোলন করবে। এটি হবে তৃতীয় হায়কাল।

তাদের বিশ্বাস মতে, এই হায়কাল বা উপাসনালয়ে কেবল পবিত্র ইহুদিরাই ঢোকার সুযোগ পাবে; অন্যরা নয়।

উল্লেখ্য যে, এর পূর্বে আরও দু বার হায়কাল নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথমবার নির্মাণ করেছিলেন নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। তাই তারা বিশ্বের সর্বত্র এই লাল গাভী খুঁজে বেড়াচ্ছে!

কী সেই লাল গাভী?

তাওরাতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি লাশ স্পর্শ করলে সে সাতদিন পর্যন্ত অপবিত্র থাকে। তাকে পবিত্র করতে হলে লাশ স্পর্শ করার তৃতীয় ও সপ্তম দিনে একধরনের বিশেষ শুদ্ধকরণ পানিতে তাকে গোসল করিয়ে পবিত্র করতে হবে। তা না হলে সে অপবিত্রই থেকে যাবে। সেই বিশেষ পবিত্রকরণ পানি তৈরি করতে লাগবে বিশেষ একটি গরু। যেহেতু সেই লাল গরুর সন্ধান এতদিন পাওয়া যায়নি, তাই পুরো ইহুদি জাতি তাঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী ‘অপবিত্র’ হয়ে আছে।

তাওরাতের ভাষ্য অনুযায়ী, গরুটির প্রতিটি পশমকে লাল রঙের হতে হবে। একটি পশমও লাল ছাড়া অন্য রঙের হলে হবে না। গরুটির গায়ে কোনো কাটাছেঁড়া বা খুঁত থাকতে পারবে না। গরুটিকে একেবারে কম বয়সী হলেও হবে না, আবার বুড়ো হলেও হবে না; সেটিকে হতে হবে মাঝারি বয়সের। সেটির কাঁধে কখনো পানি সেচার কিংবা জমি চাষের জোয়াল পড়লে চলবে না। তার ঘাড়ের পশমকে খাড়া হতে হবে। এই গরুকে বিশেষ প্রার্থনা সহযোগে জবাই করার পর পুরো দেহটি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সেই ছাই পানিতে মিশিয়ে শুচিকরণ পানি তৈরি করতে হবে। সেই পানি দিয়ে যাজকেরা পবিত্র হবে। এর মধ্য দিয়ে পুরো ইহুদি জাতি পবিত্র হবে। ‘রেড কাউ’—শব্দবন্ধটি এই লাল গরুকে বোঝাতে পশ্চিমা সমাজে ব্যবহৃত হয়।

হয়তো এই বিবলিক্যাল ভাষ্যের কারণেই লাল রংয়ের গরুকে অনেক সমাজে বিশুদ্ধতার প্রতীক ভাবা হয়।

যাহোক, বহু খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে আমেরিকার নিউ জার্সিতে অবস্থিত একটি গো খামারে এক লাল গাভীর সন্ধান পাওয়া গেছে।
কিন্তু গাভীর মালিক সেটি ইহুদিদের কাছে কোন মতেই- মিলিয়ন ডলার দিয়ে ও বিক্রয় করতে রাজি নয়।

উক্ত লাল গাভীকে কেন্দ্র করে ইহুদিদের ধর্মীয় উন্মাদনা নতুন ভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এখন যে কোনও মূল্যে উক্ত লাল গাভী সংগ্রহ করে সেটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে গায়ে মেখে দুনিয়ার নাপাক ইহুদিরা পাক হতে চায়।

কিন্তু তাদের ভুলে গেলে চলবে না, এসকল গল্প দিয়ে মসজিদে আকসা ভেঙ্গে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র হলে মুসলিম বিশ্বে যুদ্ধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে পারে।

তখন ইনশাআল্লাহ উড়ে আসা জুড়ে বসা এই অভিশপ্ত ইহুদিদের অস্তিত্ব পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে ইনশাআল্লাহ।

লাল গাভীর সাথে ইসলামের সম্পর্ক কী?

এটি কি কিয়ামতের আলামত?

প্রকৃতপক্ষে লাল গাভীর এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের সাথে ইসলামের দূরতম কোনও সম্পর্ক নেই। এটি ইহুদিদের নিতান্তই ভিত্তিহীন ও অবান্তর বিশ্বাস। এটি তাদের ধর্মগুরুদের তৈরি করা মতবাদ বা বিকৃত তাওরাতে তাদের নিজেদের সংযোজন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে তাদের তাওরাত বিকৃতির বিষয়টি ফাঁস করে দিয়েছেন। তারা ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে মানুূষকে ধোঁকা দেয়।
(দেখুন: সূরা মায়েদা ১৩ ও ৪১ নম্বর আয়াত)

হে আল্লাহ, তুমি ইহুদিদের সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে মসজিদুল আকসা কে পুনরায় মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দাও। নিশ্চয় তুমি দুআ কবুল কারী।
আল্লাহু আলাম

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture