Q/A

অসুস্থতার কারণে নামাজ নিজ ঘরে পড়লে জামাতের সওয়াব পাবে কি

বালেগ থেকেই আমি জামাতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ, তবুও জামাতে নামাজ পড়ছি। কিন্তু খুব কষ্ট হয়, আমি প্রথম রাকাতে দাঁড়াই। পরবর্তী রাকাতগুলো বসে ইশারা করে পড়া হয়।
প্রশ্ন হল, এমন অবস্থায় ঘরে নামাজ পড়া জায়েয হবে কি?
আর বাসায় পড়লে কি আগের মত মসজিদের জামাতের সওয়াব পাব কি?

পুরুষদের জন্য মসজিদে যাওয়া এবং জামাতের সাথে ফরজ সালাত আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ম বা বিধান। শরীয় বিনা কারণে মসজিদের জামাত ত্যাগ করা যাবে না। হাদীস শরীফে বিনা কারণে মসজিদের জামাত ত্যাগ করার জোরালো ভাবে বলা হয়েছে বা কঠোর ধমকি এসেছে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ، فَيُحْطَبَ، ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلاَةِ، فَيُؤَذَّنَ لَهَا، ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيَؤُمَّ النَّاسَ، ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ، فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُهُمْ، أَنَّهُ يَجِدُ عَرْقًا سَمِينًا، أَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ، لَشَهِدَ العِشَاءَ.
অর্থাৎ যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই। অতঃপর নামাযের আযান দেয়ার নির্দেশ প্রদান করি। এরপর কোনো ব্যক্তিকে নামায পড়ানোর নির্দেশ করি এবং আমি ঐসকল লোকদের নিকট যাই, (যারা নামাযে শামিল হয়নি) এবং তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তাদের কেউ জানত যে, সে সামান্য গোশতসহ একটি মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দুটি খুর পাবে তাহলেও সে (এই তুচ্ছ বস্তু পাওয়ার জন্য) এশার জামাতেও (কষ্ট করে) হাযির হত।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৪)

আরেক হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন—

لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُهُ، أَوْ مَرِيضٌ، إِنْ كَانَ الْمَرِيضُ لَيَمْشِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلَاةِ، وَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلَاةَ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَّنُ فِيهِ.
আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, নামায (-এর জামাত) থেকে পিছিয়ে থাকত কেবল এমন মুনাফিক, যার নিফাক স্পষ্ট ছিল, অথবা অসুস্থ ব্যক্তি। তবে আমরা অসুস্থকে দেখতাম, দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর করে নামাযের জন্য চলে আসত।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সুনানুল হুদা (হেদায়েতের পথ ও পন্থা) শিক্ষা দিয়েছেন। ঐসকল সুনানুল হুদার একটি হল, মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করা, যেখানে আযান দেয়া হয়।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪)

তবে অসুস্থ ব্যক্তিদের মসজিদের জামাতে যোগদানের জন্যও ছাড় রয়েছে। অতএব, আপনি যদি সহনীয় কষ্টের সাথে মসজিদে যাতায়াত করতে পারেন, তবে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়া আপনার জন্য উপযুক্ত হবে। তবে বেশি ব্যথা বা অসুস্থ অনুভব করলে ঘরে নামাজ পড়তে পারেন।

আর যদি মসজিদে যাতায়াতের কষ্ট সহনীয় না হয় বা মসজিদে যাতায়াত করলে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ঘরে নামাজ পড়া জায়েয। আর এমতাবস্থায় জামাতে নামায পড়ার ইচ্ছা থাকা সত্বেও অসুস্থতার কারণে ঘরে নামায আদায় করা হলে পূর্বের ন্যায় আল্লাহর দরবারে জামাতের সওয়াব পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إِذَا مَرِضَ العَبْدُ، أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا.
অর্থাৎ যখন বান্দা অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে তখন তার জন্য মুকীম ও সুস্থ অবস্থার আমলের মতো নেকী লেখা হয়।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯৯৬)

আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১০; আলমুহীতুর রাযাবী ১/২৮৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৫৪

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture