হৃদয়ে বেঁধে এক কালো বাসা শয়তান নাম দিলো তার ভালোবাসা!

এক.

মা-বাবার অবাধ্য হয়ে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে আমরা অসাধারণ প্রেম কাহিনী বলবো না।
ঠিক তেমনি, আল্লাহ্‌র অবাধ্য হয়ে পছন্দের মানুষের সাথে হারাম রিলেইশনশিপ করার দ্বারা আল্লাহ্‌ থেকে পালিয়ে গেলে সেটাও অসাধারণ প্রেমকাহিনী হয় না।

আল্লাহ্‌ কর্তৃক সৃষ্ট হয়ে আল্লাহ্‌র সৃষ্টি করা রিযক খেয়ে আল্লাহ্‌র আনুগত্য করার সবর করতে না পেরে বিয়ে বহির্ভূত রিলেইশনশিপে জড়ানো ব্যক্তি নৈতিকভাবে আর কতোই বা ভালো হতে পারে?

মা-বাবার অবাধ্য সন্তান যেমন ভালো মানুষ না, আল্লাহ্‌র অবাধ্য বান্দাও কোন ভালো মানুষ না।

দুই.

নৈতিকতা!

সবচেয়ে বড় নৈতিকতা হচ্ছে তাকওয়া।

আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন, ব্যক্তি সেই হারাম কাজ করছে – এর মানে সেই ব্যক্তি নীতিবান মানুষ না, তার মাঝে সত্যিকারের নৈতিকতা নাই।

ভালো কাজ সবাই করে, খারাপ কাজ কম করে খুবই কম লোক। তাই ভালো কাজ করলেই ভালো হয় না, খারাপ কাজ ছেড়ে দিলেই ভালো হয়। হারাম আঁকড়ে ধরে নেককার হওয়া যায় না।

সুতরাং বিয়ে বহির্ভূত রিলেইশনশিপে জড়িয়ে আল্লাহ্‌র আনুগত্য থেকে পলায়নকারীরা নিজেকে যতোই ভালো মনে করুক, এই খারাপ কাজ থেকে তাওবা-ইস্তিগফার করে ফিরে আসুক।

তিন.

যে সময়টায় নিজের বয়ফ্রেন্ড / গার্লফ্রেন্ডের সাথে সময় দিতেন, তার সাথে সম্পর্ক ছেড়ে দিয়ে সেই সময়টা রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি বেশি বেশি সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন, অর্থাৎ দরূদ শরীফ পাঠ করুন।

আমি কোন হাসির কথা বলি নাই। আমি একটা সিরিয়াস কথা বললাম।

যে সময়টাতে একটা মানুষ খারাপ কাজ করতে পারতো, হারাম রিলেইশনশিপ চালু রাখতে পারতো; সেই সময়ে এসব কিছু ছেড়ে দিয়ে রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করাটা যে তাকে আসলে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে … সেটা একজন মুসলিম হিসেবে আমি আপনাকে বলতে পারি, তবে বুঝাতে পারি না; কারণ আমি যতো বড় কথাই বলি বা যতো বড় কাজই করি না কেন, আমি সাধারণ মুসলিম-ই।

সাধারণ মুসলিম কেন, সাধারণ আলিমও যদি নিজেকে কিছু একটা মনে করা শুরু করে, সেখান থেকে তার পতনের শুরু। এ কারণে সবসময় খেয়াল রাখা জরুরি যে, আমি নিজেকে কিছু একটা মনে করা শুরু করলাম কিনা! আজকাল তো সহজেই মানুষ নিজেকে দ্বীনদার ধার্মিক মনে করে তো বটেই, বরং বলেও বসে!

তো, রাসূলুল্লাহ্‌কে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসার দাবির কথা ফিকির করে অবৈধ সম্পর্ক ছেড়ে দিন।

ইন শা আল্লাহ্‌, “আসল সম্পর্ক” (আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্ক) জোড়া লেগে যাবে।

রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসার দাবির কথা ফিকির করেও যদি হারাম ছাড়তে না পারি, তবে আমার ভালোবাসা মুখ পর্যন্তই, কারণ যা হৃদয়ের গভীরে গেঁড়ে যায় তা আমলের দ্বারা ফুটে উঠে।

বিষয়টার উদাহরণ? চার নাম্বারে দেখুন।

চার.

খারেজিরাও কুরআন পড়ে, কিন্তু কুরআন তাদের অন্তরে প্রবেশ করে নাই! কুরআন পড়ার পরও তারা খারেজি।
আমরা কুরআন পড়ার পরও যদি আমাদের অন্তরে কুরআন প্রবেশ না করে, আমরা খারেজি না হলেও সেই কুরআন দ্বারা নিজেদের উপকৃত করতে পারবো না। এই যেমন, হারাম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না।

অন্তরে যদি কুরআন থেকেই থাকে, তবে অন্তরে হারাম থাকবে না। থাকলে তা বের হবেই হবে।

কুরআন হারামকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে দুর্বল নয়, বরং মানুষই কুরআনকে অন্তর থেকে বের করে দেয় বলেই হারাম অন্তরে আধিপত্য বিস্তার করে।

আমি কি কুরআন ও হারাম – দুটোকেই অন্তরে একই সাথে রাখতে চাই!? পারবো না। কেউ পারবে না।
একটা হার্ডডিস্কে বিশাল ইসলামি লাইব্রেরী থাকলে আমরা বলি না – কত্ত মুত্তাকী হার্ডডিস্ক!

তেমনি ব্রেইনে যতোই ইলম থাকুক আর তোতা পাখির মতো তা বলতেই থাকা হোক, যদি অন্তরে তা প্রবেশ না করে, ব্যক্তি বক্তা হতে পারে, লেখকও হতে পারে, তবে মুত্তাকী হতে পারে না।

মুত্তাকী হওয়া জরুরি।
কুরআনের অভিশাপ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই।

পাঁচ.

রাসূলুল্লাহ্‌কে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি শুধু স্বপ্নেই দেখতে চান?
রাসূলুল্লাহ্‌কে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বাস্তবে দেখতে চান না?

দুনিয়ার জীবনটাই তো একমাত্র জীবন না যে, এখানে স্বপ্নে না দেখলে আর দেখাই যাবে না।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ্‌কে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আখিরাতে দেখার ফিকিরের লোভ দেখিয়ে নিজেকে হারাম সম্পর্ক থেকে দূরে রাখুন।
এটা নিজেকে “এমনি একটা বুঝ দেওয়া” না। এটাই বাস্তবতা।

ছয়.

যখন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ও সম্পর্ক মজবুতি করার কাজে কেউ লেগে যায় আর লেগেই থাকে, তখন যা কিছু ভাঙ্গে তা ভাঙ্গে নতুন কিছু গড়ার জন্য।

পাপে আসক্ত অন্তর ভাঙ্গুক, তাতে গড়ে উঠবে যিকরুল্লাহ্‌র জান্নাত। ইন শা আল্লাহ্‌।

হ্যাঁ, সেই নতুন কিছু হচ্ছে আল্লাহ্‌র যিকিরের জান্নাত – যাতে প্রবেশকারীকে আগুনে দিলেও তিনি ঈমান ছাড়েন না।

গায়রে মাহরামের প্রেমের আগুনে না পুড়ে আখেরি যমানায় দ্বীন পালন করতে গিয়ে বিকৃত সমাজের জ্বালিয়ে দেওয়া জাহিলিয়্যাতের আগুনে কিছুটা না হয় পুড়লাম।
কয়লা নয়, স্বর্ণ হবো; যদি ইখলাসের সাথে সুন্নাতের তরীকায় দ্বীনের পথে চলতে পারি, ইন শা আল্লাহ্‌।

ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে আমার নাম লেখা থাকা জরুরি না, আমলনামা ডান হাতে আসলে সেই আমলনামা সোনার তৈরি ইতিহাসের বইয়ে সোনার অক্ষরে লেখা থাকার চাইতেও অনেক বেশি দামি।

সাত.

কে যেন বলেছিলেন, ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নারীরা অমনোযোগিতায় তাদের হাত কেটে ফেলেছিল! আর রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিরাতের সুরতে মাজনূন হয়ে যুগের পর যুগ ধরে মুসলিমগণ তাঁদের গোঁটা জীবনটাই কুরবানি করে দিচ্ছেন!

ইয়া রব!

নিয়্যত করি – আমার আমলনামায় যেন গায়রে মাহরামের প্রতি ভালোবাসার হারাম আমলটির অস্তিত্ব না থাকে, আমার আমলনামায় যেন কোন ছোট থেকে ছোট পাপের প্রতিও ভালোবাসার অস্তিত্ব না থাকে; বরং আমার আমলনামা যেন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ভালোবাসার প্রভাবে হারাম ছেড়ে আল্লাহ্‌র মুহাব্বাতে আমলের পরিশ্রমের ঘাম ও চোখের পানি … এমনকি প্রয়োজনে জিহাদের ময়দানে নিজের রক্ত দেওয়ার নিয়্যতের আমলের কথা লেখা থাকে ….. আমার আমলনামা হোক এক আল্লাহ্‌ প্রেমিকের আমলনামা।

সেই আমলনামা হোক রবের প্রতি আমার মুহাব্বাতের পত্র। আমল দ্বারা তাতে লিখে রাখি –

ইয়া রব, আপনাকে ভালোবাসার দাবির হিম্মত করি না, তবে আপনাকে ভালবাসতে হিম্মত করি। তাও আবার এমন হিম্মত যে, কোন কঠিন পরীক্ষাও দিতে চাই না; যদি কঠিন পরীক্ষা দিতে গিয়ে ঈমানটাই চলে যায়!

ইয়া রব, ভালোবাসার দাবি না করে ভালোবাসার তাওফিকের দুয়া করছি।

ইয়া হাইয়্যুল ক্বইয়্যুম, আপনি আমাকে তাওফিক দান করুন সাহাবায়ে কিরামের মতো করে আপনাকে ভালবাসতে, তবে আমার থেকে তাঁদের মতো কঠিন পরীক্ষা নিয়েন না, আল্লাহুম্মা আমিন ইয়া হাইয়্যুল ক্বইয়্যুম।

লিখেছেন

মুজাদ্দিদ হুসাইন রিজভি

একজন সাধারণ মুসলিম, দ্বীনের খেদমত করে নিজেকে সৌভাগ্যবান করার বিষয়ে আল্লাহ্‌র তাওফিকের ভিখারি। চেষ্টা করি আলিমগণের খেদমত আরো ছড়িয়ে দিতে, সেই সাথে অনলাইনে লেখালেখিও করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
Exit mobile version