হেদায়াতের আলো

আদম আঃ কে আল্লাহ তা’য়ালা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছিলেন, তাকে দুনিয়ার সৃষ্টি থেকে শেষাবধি সকল জ্ঞান বুদ্ধিমত্তা প্রদান করেছিলেন। অথচ উনারই পুত্র প্রথম হত্যা করে, তাও আবার সহোদর ভাইকে!

নূহ আঃ দীর্ঘ সময় ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, আল্লাহর বড়ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করেছেন। অথচ আল্লাহর গজব আল্লাহর বিধি-বিধান উনার নিজ পুত্র অস্বীকার করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাতেই মৃত্যুবরন করেছিল!

ইউনুস আঃ ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে করতে একটা সময়ে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে নিজ খেয়ালবশত নিজের এলাকা ছেড়ে চলে যান। আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারনে তাকে মাছের পেটে থাকতে হয় অনেকটা সময়, এমনকি আল্লাহ তা’য়ালা কেয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটেই তাকে রেখে দিতেন বলে কিছু কিছু বর্ননা পাওয়া যায়!

নিজ পরিবারের কাছ থেকে সাহায্য তো পান ই নাই, উল্টো পোহাতে হয়েছে অনেক বিড়ম্বনা! লূত আঃ, আল্লাহর নবী, তবুও উনার পরিবারের সদস্যদের ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে সক্ষম হননি!

চারিদিকে ইসলামের নাম-নিশানা নাই, বহু সৃষ্টিকর্তার প্রচলন, তাদের মূর্তি কে পালনকর্তা এবং তাদেরই মতো একজন মানুষ তাদের দেশের সম্রাট কে সৃষ্টিকর্তা মেনে নিয়ে পূজা করার যুগ চলছিল। নিজ পরিবারের সবাই মূর্তি বানানো থেকে শুরু করে পূজাও করে! অথচ সেই ব্যক্তি কে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’য়ালা সাহায্য করলেন, তাকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করলেন, তাকে পুরো সাম্রাজ্যের বিপরীতে জয়ী করে দিলেন, তাকে পুরো মুসলিম জাতির পিতা পুরো মুসলিম জাতির জন্য অগ্রগামী উদাহরণ হিসেবে পেশ করলেন!

আল্লাহর রাসূল ﷺ নিজ পরিবার থেকে শুরু করে একে একে আশেপাশের সবাইকেই ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিয়েছিলেন। সবাই কি তা কবুল করেছিল?
হেদায়াতের আলো সবার কাছে একবারের জন্য হলেও পৌছায়, কিন্তু মানুষ নিজে সেই আলোয় আলোকিত হতে চায় না!
হেদায়াতের আলো প্রত্যেকের অন্তরে লুক্কায়িত আছে, তার যত্ন নিতে অন্তত চেষ্টা করতে হয়!
আল্লাহর বাণী তথা কুরআন হাদিসের কথা সবাই শুনে বা পড়ে, কিন্তু কয়জন অনুধাবন করে?
কয়জন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালনা করে?

আল্লাহ ﷻ বলেছেন,
আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছে নিজ রহমত দ্বারা বিশেষিত করেন।
(আল-বাকারাহ:১০৫)

আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছে সরল পথের দিকে হেদায়াত করেন।
(আল-বাকারাহ:২১৩)

তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেন।
(আলে-ইমরান:১২৯)

আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(ইবরাহীম:৪)

কুরআনে এরকম অনেক ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে যাতে পরবর্তীতে আমরা এসব পড়ে অনুধাবন করতে পারি, যাতে আমরা অন্যান্য জাতির আগমন এবং ওইসব জাতির ধ্বংসের কারনগুলা জানতে পারি! যাতে আমরা শিক্ষা নিয়ে চলতে পারি! আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে এভাবেই আমাদের জন্য উপদেশ দিয়েছেন, আমাদের এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের উদাহরণস্বরুপ পূর্বেকার জাতিদের বর্ননা দিয়েছেন, কি কারনে তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল কি কারনে তাদের জমিনের নিচে পুতে ফেলা হয়েছিল কিংবা কি কি করলে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায় তা সব এই কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।

পড়ুন, বুঝে শুনে পড়ুন, অনুধাবন করুন, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করুন, আল্লাহর কাছে চান!

ইবরাহীম আঃ স্বচক্ষে দেখছিলেন যে আগুনে পতিত হচ্ছেন, তবুও তিনি এতেই তার মুক্তি নিশ্চিত ছিলেন আর তাই ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন! আল্লাহর রাসূল ﷺ কে ত্বায়েফে যখন রক্তাক্ত করা হলো, তবুও তিনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন!

ভালো কাজ বা নেক আমল করার নিয়ত করুন, দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার অন্তরে খারাপ চিন্তা ই আর আসবে না ইনশাআল্লাহ!

নেক আমল করার ব্যাপারে চেষ্টা করুন, দেখবেন আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে কোন না কোনভাবে কোন না কোন উপায়ে সাহায্য করবেন ই ইনশাআল্লাহ!

নিজেই যদি নিজের জ্ঞানের দরজা, নেক আমল করার ইচ্ছা, নিজের আত্মিক উন্নতির রাস্তা বন্ধ করে রাখেন – তাহলে হেদায়াতের আলো আসবে কিভাবে?

লিখেছেন

বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।
(২২ঃ৪৬)

মাহমুদ হাসান

বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।
(২২ঃ৪৬)

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
Exit mobile version