Q/AAbdullahil Hadi

ঘরের দেয়ালে কুরআনের আয়াত আল্লাহর নাম দুআ ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখা

ঘরের দেয়ালে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুআ ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখা এবং যে ঘরে এগুলো ঝুলানো আছে সে ঘরে স্ত্রী সহবাস করার বিধান।
ঘরের দেয়ালে কুরআনের আয়াত, দুআ, আল্লাহর নাম বা ইত্যাদি লেখা ঝুলানোর বিধান কি?
আর কোনো ঘরে এগুলো ঝুলানো থাকলে কি ঐ ঘরে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে?
দয়া করে হাদিসের আলোকে জানাবেন।

আমাদের জানা প্রয়োজন যে, শোভা বর্ধনের উদ্দেশ্যে ঘরের দেয়ালে কুরআনের আয়াত, দুআ, আল্লাহর নাম ইত্যাদি টাঙ্গিয়ে রাখা জায়েজ নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা এগুলো আমাদেরকে ওয়ালমেট বানিয়ে ঘরের শোভা বর্ধনের উদ্দেশ্যে দেন নি। বরং এ জন্য দিয়েছেন যে, আমরা যেন নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করি, কুরআন বুঝি, প্রয়োজনীয় দোয়া-তসবিহগুলো যথাসময়ে পড়ি, আল্লাহর নামগুলো মুখস্থ করি, সেগুলোর অর্থ বুঝি, তার কথা স্মরণ করি এবং সেই আলোকে আমাদের জীবন গঠন করি।
যেমন:
আল্লাহ তাআলা কুরআন নাজিলে উদ্দেশ্য কুরআনের শুরুতেই বলে দিয়েছেন:

ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
"এটি সেই গ্রন্থ যাতে কোনই সন্দেহ নেই। যা সঠিক পথ দেখায় ঐ সকল মানুষকে যারা আল্লাহকে ভয় করে।"1

তিনি আরও বলেন:

إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّـهُ
"এটা নির্ঘাত সত্য যে, আমি আপনার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে করে আল্লাহর দেখানো সঠিক বিধান অনুসারে আপনি মানুষের মাঝে বিচার-ফয়সালা করতে পারেন।"2

এভাবে আল্লাহ তাআলা আরও বহু আয়াতে কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে বলেছেন।

দ্বিতীয়ত

ঘরে বরকত নাজিল হবে অথবা জিন, শয়তান, যাদু-টোনা ইত্যাদি থেকে ঘর রক্ষা পাবে এই নিয়তে এসব লেখা ঝুলিয়ে রাখা বিদআত।

কারণ কুরআন-হাদিসে এমন কোন কথা বলা হয় নি যে, এগুলো ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখলে তাতে বরকত নাজিল হবে বা তা জিন-শয়তান ও যাদু-টোনা থেকে রক্ষা পাবে। বরং এ জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতিতে কুরআনের নির্দিষ্ট আয়াত ও সূরাগুলো (যেমন: সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস, সূরা বাকারা, আলে ইমরান, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি) এবং হাদিসে বর্ণিত দুআগুলো যথানিয়মে পাঠ করতে হবে।

যেমন:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“রাতে বিছানায় গিয়ে ঘুমের পূর্বে আয়াতু কুরসি পাঠ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন প্রহরী (ফেরেশতা) নিয়োগ দেয়া হয় এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারে না।

روى البخاري (3275) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : ” وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ فَأَتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَذَكَرَ الحَدِيثَ – ، فَقَالَ : إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ ، لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلاَ يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ ذَاكَ شَيْطَانٌ )

সূরা বাকারা এর শেষ দুই আয়াত পাঠের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারা এর শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে তা তার সারা রাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।”
(হাদিসের ব্যাখ্যাকারীগণ বলেন: রাতে এ দুটি আয়াত পাঠ কারীর জন্য রাতে নফল সালাত আদায় অথবা বিপদাপদ থেকে রক্ষা অথবা উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়)

এ মর্মে হাদিস হল:

روى البخاري (4008) ، ومسلم (807) عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ البَدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( الآيَتَانِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ البَقَرَةِ ، مَنْ قَرَأَهُمَا فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
এমন বহু হাদিসে আমাদেরকে কখন কোন সূরা, দুআ, তাসবিহ পাঠ করতে হবে তার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

তৃতীয়ত

কেউ যদি বিশেষ কোন আয়াত বা হাদিসের দুআ বা আল্লাহর নাম কেবল মুখস্থ করা বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঝুলিয়ে রাখে তাহলে তাতে কোন আপত্তি নেই। তবে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেলে তা নামিয়ে ফেলতে হবে।

শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন:

لا مانع من تعليق الآيات القرآنية، والأحاديث النبوية في المجالس والمكاتب كل ذلك لا بأس به؛ للتذكير والعظة والفائدة، لا اتخاذها حروزا تمنع من الجن
“বৈঠকখানা, অফিস ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত ও হাদিস টাঙ্গিয়ে রাখতে বাধা নেই। এগুলোতে কোন অসুবিধা নেই যদি স্বরণ, উপদেশ ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে হয়। তবে জিন-শয়তান ইত্যাদি থেকে থেকে বাঁচার রক্ষাকববজ হিসেেব হলে জায়েজ নাই।”

আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন:
تعليق الآيات القرآنية على الجدران وأبواب المساجد وما أشبهها- هو من الأمور المحدثة التي لم تكن معروفة في عهد السلف الصالح الذين هم خير القرون،
“কুরআনের আয়াত ঘরের দেয়াল, মসজিদের দরজা বা এ জাতীয় স্থানে লাগানো দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত যা সালাফে-সালেহীন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনদের খাইরুল কুরুন বা শ্রেষ্ঠ যুগে পরিচিত ছিলো না।”
[সৌদি আরবের ‘নূরুন আলাদ দারব’ শীর্ষক জনপ্রিয় ইসলামি প্রশ্নোত্তর মূলক রেডিও প্রোগামে প্রদত্ব উত্তর]

সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়া:

বর্তমানে কুরআনের আয়াতসমূহ ক্যালিগ্রাফিক ডিজাইনে লিখে মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা,‌ ৫/১৯০]।

ঘরে কুরআনের আয়াত, হাদিসের দুআ, আল্লাহর নাম ইত্যাদি টাঙ্গিয়ে রাখা হলে ওই ঘরে স্ত্রী সহবাস করার বিধান:

কেউ যদি দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ঘরের মধ্যে কুরআনের আয়াত, হাদিসের দুআ, আল্লাহর নাম ইত্যাদি টাঙ্গিয়ে রাখে তাহলে ওই ঘরে স্ত্রী সহবাসে কোন আপত্তি নেই। তবে পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে বলব, এগুলো ঘরে ঝুলিয়ে রাখা উচিৎ নয়। কেউ করে থাকলে অনতিবিলম্বে তা নামিয়ে ফেলা কর্তব্য। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

আল্লাহু আলাম।

  1. সূরা বাকারা: ২ ↩︎
  2. সূরা নিসা: ১০৫ ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture