Writing

চুড়ান্ত / সফলতা

চুড়ান্ত সফলতা হইতো জান্নাত প্রাপ্তিতেও নয়!
অথবা, জান্নাতের বাজারে জান্নাতিদের মধ্যে, শরাবের গ্লাস হাতে দেখতে পেলেন পৃথিবীতে থাকা, নিজের সেই ক্লোজ বন্ধুটিকে ! যাকে কনকনে শীতের শীতল শিথিল বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে ফজরের অযু করতে দেখে জিগ্যেস করেছিলেন, এতো ঠান্ডা সহ্য করে একদিন জান্নাতে গেলে কী খাবে! কুলি করতে গিয়ে ফিক করে হেসে সে বলেছিল, জান্নাতে গেলে মদ খাবো মদ! নাহ,

এটাও যেন সফলতা বলা নয় এখনো!

জান্নাতে শত কীংবা হাজার বছর পরে, হঠাৎ! পৃথিবীর সবচে কাছের মানুষ, প্রিয়তমা প্রিয়নীকে দেখে মুগ্ধতার চোখে, স্নিগ্ধতার আবেশে কয়েক শতাব্দী কাটিয়ে দিয়েছেন, সেই দুষ্টুমিষ্টি মেয়েটার স্বভাব যেন পাল্টাইনি এখনো এখানে এসেও! চিমটি কেটে আপনার ঘোর কাটিয়ে দিয়ে বললো, এই যে….! কী দেখছেন এভাবে হুম!

এটুকু পর্যন্ত আপনি সফল বলা চললেও চুড়ান্ত সফল হননি কিন্তু!

বন্ধুর সাথে দেখা হল, স্বপ্নের রাণীও চলে এল, আপনার কামরায় বসে আপনার সেবায় নিয়োজিত কিশোর কিশোরীদের হাতে মাছের কলিজা খাচ্ছিলেন! এমন সময়, একটি অতি মায়া মিশ্রিত কন্ঠে আপনার নাম ধরে কে যেন ডাক দিলেন! যে কন্ঠ কোনোদিন শোনেননি! অথচ যেন খুবই পরিচিত! প্রিয় বন্ধু, প্রণয়ের আত্মীয়, প্রাণের প্রিয়তমা, কিংবা প্রাণণার মা,বাবা তারা কেউ যেন তাঁরচে পরিচিত, নন!

কীভাবেই বা তাঁরচে পরিচিত কেউ হতে পারে, বলুন! তিঁনি সেই আপনজন, যাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে তাঁর সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন আপনার মন খারাপ! ততক্ষণে তাঁর চোখ হতে গড়িয়ে পড়লো, দু’ফোটা পৃথিবীর সবচে নিঁখুত, নির্ভেজাল, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। চোখদুটো মুছে তাঁর সঙ্গীদের জানালেন, তাঁর ভাইদের কথা খুব মনে পড়ছে! সঙ্গীরা কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কী আপনার ভাই নই! তিনি বললেন না, তোমরা আমার ভাই নও, তোমরা তো আমার সাহাবী। আমার ভাই তারা, যারা আমার পরে আসবে, আমাকে না দেখেও ভালোবাসবে। প্রিয়তম রাসূল( ﷺ.)❤️

এইতো আর কিছুটা পথ!

একে একে সাক্ষাৎ হতে থাকলো, দুনিয়ায় আপনার প্রিয় রাসূল ﷺ এর সাহাবিদের সাথে, আপনি যাদের আদর্শ লালন করতেন(রাদিআল্লাহু আনহুম)! মিট হতে থাকলো তাঁদের সাথেও যাদের কখনো সাহাবীরাও দুনিয়ায় দেখেন নি। রাসূল ﷺ এর মুখ থেকে শুনেছেন কেবল! ইউসুফ, ইসহাক, ইয়াকুব, এমনকি এমন আরও অনেক নবীদের সাথে সাক্ষাৎ হলো, যাদের কথা কুরআনেও নেই (আলাইহিসসালাম)।

চুড়ান্ত সফলতায় হইতো এসেই গেলেন।

এভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেলো! যেতে থাকল। একদিন জান্নাতিরা গেলেন, একটি বিয়ের দাওয়াতে! বরাবরই বিয়ে পড়ালেন সয়ং রব্ব। দফ বাজিয়ে গানের তালেতালে নাচছে, বড়বড় অপরূপ চোখ ওয়ালা হুরপরীরা। খাওয়াদাওয়া শেষ করে, জান্নাতে নিজের ফ্লটে ফিরে যাবার ঠিক আগমুহূর্তে রব্ব হঠাৎ ডাক দিয়ে বললেন, আমার জান্নাতিরা!তোমরা কী এখনো কিছু না পেয়ে আছো!

সবাই মন খুলে একই সাথে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। অবশ্যই আপনার ওয়াদা সত্য। আমরা জান্নাতে যা ভাবিনি, তারচে অনেক বেশিকিছুই পেয়েছি। রব্ব তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, নাহ তোমরা এখনঅব্দি যা পেয়েছো, আর এখন যা পাবে তা পাবার পর এতোদিন পেয়ে আসা সবকিছু নস্যি মনে হবে।

হঠাৎ রব্বের এমন কথা শুনে জান্নাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে গেলো একরাশ পিনপিনে নিরবতা৷ এতো এতো আর এতো কিছুর মধ্যেও যে অপূর্ণতা ছিল, তা যেন কল্পনাও করতে পারছিলো না জান্নাতিরা। আচমকা তাদের সকলের নিরবতা চাপিয়ে একটা ঘোর যেন, চোখ আর শরীরকে নিস্তব্ধ করে দিলো। ঠিক কতক্ষণ তারা ঘোরের মধ্যে ছিল জানা নেই, সম্ভবত মিনিট তিনেক পর তাদের ঘোর কাটতেই সবাই যেন পাগল হয়ে গেল! যেন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি নেশা না করতে পেরে হাহুতাশ করছে! নাহ, তারা যা দেখেছে তা তারা আবার দেখতে চায়। জান্নাতে অফুরন্ত জিনিসের মধ্যে এই জিনিসটা নেই। এই মোহ নেই। নেই এই মুগ্ধতা! তাদের কাছে যেটা মনে হয়েছিলো মিনিট তিনমিনিট, তারা নিজেরাও জানে না, সেটা যে লক্ষ ছাড়িয়ে কোটি বছর পেরিয়ে গেছে।

অবশেষে তাদের সফলতা এবার চুড়ান্ত হল।

লিখেছেন

অপবিত্রার স্পর্শে প্রবর্তন নিখিলে,
অসীম পবিত্রতার পানে গন্তব্য মোর।
লেখাটি পড়ে কেউ নূন্যতম উপকৃত হলে, আপনার অশ্রুসিক্ত মোনাজাতে আমার নাম স্মরণ করে বলবেন, “আল্লাহুম্মাগফীরলি ওবাইদুল ভাই”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture