Writing

ব্ল্যাক হোলের অপর প্রান্তে কি অন্য ইউনিভার্স আছে

সূরা ইয়াসিনের ৩৮ নাম্বার আয়াত,
“সূর্য ছুটে যাচ্ছে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে; সেটা তার জন্য পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের লিখিত নির্ধারিত এক নিয়তি।
আয়াতগুলো আমরা খুব ক্যাজুয়ালি পড়ে যাই, চিন্তা করি না!
কয়দিন আগে একটা জার্নালে পেলাম, গ্যালাক্সির প্রতিটা তারাই কোনো না কোনো একটা ব্ল্যাক হোলের চারপাশে ঘুরছে এবং সেদিকেই ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।

আমাদের সূর্যও ব্যতিক্রম নয়, ধীরে ধীরে ঘণ্টায় ৮০০ হাজার কিলোমিটার বেগে সে এগিয়ে যাচ্ছে মিল্কিওয়ে গেলাক্সির সেন্টারের দিকে, যেখানে অপেক্ষা করছে “স্যাজিটারিয়াস এ” নামক এক বিশাল ব্ল্যাক হোল!

সূরা ইয়াসিন কি সেটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে?
আমরা জানি না, তবে যা জানি তা হলো:
এটা নেচারের এক আশ্চর্য ক্রিয়েশন, আইনস্টাইনতো এই ব্ল্যাক হোল আর জেনারেল থিওরি দিয়েই নিউটনের মহাকর্ষণ তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলো, তিনি দেখিয়েছিলো যে, এই মহাকাশটা হলো একটা ফোমের বিছানার মতো, সেখানে একটা ভারী বল রাখা হলে একটা ডিপ তৈরি হয়, আর সেই ডিপই অন্যান্য বডির জন্য মাধ্যাকর্ষণ সৃষ্টি করে, যেমনটা সূর্য হলো আমাদের সোলার সিস্টেমের ডিপ, ঠিক তেমনটাই ব্ল্যাকহোলে হলো এই গ্যালাক্সির ডিপ!

এই ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমরা মোটামুটি ৭ টা জিনিস জানি,

  • প্রথমত, জায়গাটার গ্রেভিটেশনাল পুল প্রচুর,
  • দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী গ্রেভিটির কারণে টাইম স্পেস ফ্যাব্রিকে একটা গর্ত তৈরি হয় যা দেখতে অনেকটা ফানেলের মত,
  • তৃতীয়ত, যখন ব্ল্যাক হোলের দিকে তাকানো হয় তখন আমাদের দৃষ্টি বেঁকে যায় এবং আমরা তার পিছনে কি আছে তা দেখতে পাই, বানিয়ে বলছি না, এই ফেনোমেননকে গ্রেভিটেশনাল লেন্স বলা হয়।
  • চতুর্থত, ব্ল্যাক হোল হল তারাদের অস্ত স্থল,
  • পঞ্চম, যখন ব্ল্যাকহোলের সারফেস বা ইভেন্ট হরাইজোনের কাছাকাছি যাওয়া হয় তখন টাইম ডাইলেশন এক্সপেরিয়েন্স করা হয়, যে যতই সেন্টারের দিকে আগাতে থাকবে টাইম ততটাই তার জন্য স্লো হতে থাকবে,
  • ষষ্ঠ স্টিফেন হকিংস বলেন ব্ল্যাক হোল হলো একটি অন্য জগতে যাওয়ার পোর্টাল, তিনি বলেন, যদি কখনো ব্ল্যাক হোলে পরে যাও, চিন্তার কিছু নেই, আগাতে থাকো, কিছুদূর গেলেই দেখতে পাবে আরেকটা ইউনিভারস
  • সপ্তম, “ব্ল্যাক হোলের পুল অসীম” কথাটা সত্যি নয়। সায়েন্টিস্টরা রিসেন্টলি আবিষ্কার করেছে এটারও একটা সীমা আছে.

এই সাতটা পয়েন্টের কম্বিনেশন ওয়ালা একটা জায়গার রেফারেন্স কুরআনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
যেমন সূরা ওয়াকিয়াতে [৫৬:৭৫,৭৬] বলেন,
“আমি তারাগুলোর ডুবে যাওয়ার স্থানের কসম খাচ্ছি, তোমরা যদি বুঝতে এটা কত বড় একটা কসম!”

فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ
অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি,
وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَّوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ
নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ-যদি তোমরা জানতে।

সূরা ইয়াসিনের ৩৮ নম্বর আয়াত যেটা দিয়ে শুরু করলাম

“সূর্য ছুটে যাচ্ছে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে; সেটা তারই লিখিত নির্ধারিত নিয়তি [৩৬:৩৮]

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ।
[৩৬ঃ৩৮]

টাইম ডাইলেশন সম্পর্কে সূরা সাজদাতে বলেন,
“উনার ১ দিন হলো আমাদের ১ হাজার বছরের সময়” [৩২:৫]

يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ
তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।
[৩২ঃ৫]

আবার সূরা নাজমে রাসুলের মিরাজ ও জিব্রাইল আমিনের ঘটনা বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন,
তারাদের কসম যখন তারা ডুবে যায় [৫৩:১]
রাসূল তাঁকে সিদ্রাতাল মুনতাহার পাশে দেখতে পান [৫৩:১৪]
যার ওঁ পাশেই আছে জান্নাতুল মাওয়া [৫৩ঃ১৫]
যখন সেই জিনিস সিদ্রাত কে ঢেকে দিল [৫৩ঃ১৬]
তখন তাঁর দৃষ্টি বেঁকেও যায়নি এবং সীমা ছাড়িয়ে যায়নি [৫৩ঃ১৭]
নিশ্চয়ই সে দিন তিনি তাঁর রবের বড় এক বিশাল নিদর্শন দেখেছিলেন” [৫৩ঃ১৮]

প্রশ্ন হল, সিদ্রাতাল মুনতাহা টা কি?
সিদ্রাত মানে বরই গাছ আর মুনতাহা মানে শেষ গন্তব্য, অর্থাৎ এটা কি কেবল “দূর সীমানার শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো একটা বরই গাছ?” নাকি এটা কোনো রূপক, কারণ খেয়াল করে দেখুন
দূর থেকে ব্ল্যাক হোলকে কিন্তু দেখতে একটা আপসাইড ডাউন ফানেল শেপড বড়ই গাছের মতই লাগে

black-hole-and-fuzz
black-hole-and-fuzz

আর এটা সেই জায়গা যেখানে তারাগুলোর শেষ গন্তব্য এবং এই জায়গাতে রাসুলের দৃষ্টি যেন বেঁকে না যায় যেন সরাসরি এর ভিতরে তাকাতে পারেন এর জন্য কোনো আবরণ দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছিল।

তাই প্রশ্ন, ভাবছি অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স আর কোরআন তো মনে হয় একই সুরে কথা বলছে, ভাবছি এমনটা কি হতে পারে যে, ব্ল্যাক হোল হলো সেই পোর্টাল যার মাধ্যমেই তিনি অন্য প্রান্তে গিয়েছিলেন!

কোরআন অবশ্য এক লাইন বেশিই বলছে, কনফার্ম করছে যে অপারে আসলেই আরেকটা ইউনিভার্স আছে, যার নাম জান্নাতুল মাওয়া।

তবে একটা অঙ্ক অবশ্য এখনো মিলছে না, রাসূলুল্লাহ কেন এই টাইম ডায়লেশন এক্সপেরিয়েন্স করলেন না, কারণ তিনি যখন ফিরে এসেছিলেন, এসে তার ওযুর পানি গড়াতেই দেখেছিলেন, অর্থাৎ তার জন্য সময় স্থির হয়ে গিয়েছিলো।
এই সময় স্থির হওয়ার ঘটনা আমরা সূরা নামলেও দেখতে পাই, যেখানে হজরত সুলাইমানের দরবারের এক জ্ঞানী টাইম কে পস করে চোখের পলকেই সাবার সিংহাসনকে নিয়ে এসেছিলেন!

সো বলা যায় এখানে আরেকটা পাওয়ারফুল ক্স ফ্যাক্টর কাজ করছে, এই এক্স ফ্যাক্টর নিয়ে স্টাডি করা দরকার, এতে আশা করি কোয়ান্টাম ট্রাভলিং এর এক নতুন দাঁড় উন্মোচন হবে!

লিখেছেন

Picture of সামিউল হক

সামিউল হক

জ্ঞানীদের বাণী হলো বিশ্বাসীদের হারানো সম্পদ, তা সে যেখানেই খুজে পাক"[তিরমিজি ২৬৮৭]
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি

Visit all other posts by this author
জ্ঞানীদের বাণী হলো বিশ্বাসীদের হারানো সম্পদ, তা সে যেখানেই খুজে পাক”[তিরমিজি ২৬৮৭]
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button