Writing

পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হল

কিভাবে শুরু হয়েছিল সবকিছু?
গত পর্বে আমরা বলেছিলাম যে কুরআনে সব প্রশ্নের উত্তর আছে, এবং আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তিনি এই পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি স্থাপন করবেন এবং খলিফা নিযুক্ত করবেন। দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল এই পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হল?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন –

أَوَلَمۡ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَنَّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ كَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنَٰهُمَاۖ وَجَعَلۡنَا مِنَ ٱلۡمَآءِ كُلَّ شَىۡءٍ حَىٍّۖ أَفَلَا يُؤۡمِنُونَ
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম, আর আমি সকল প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?
[সূরা আম্বিয়া:৩০]

কেন তারা বিশ্বাস করে না? এই আয়াত থেকে তিনটি জিনিস আমাদের শিখতে হবে। যখন আল্লাহ আমাদের জন্য একটি আয়াত নাযিল করেন, তাতে শুধুমাত্র একটি শিক্ষা নয়, অনেক শিক্ষাই থাকে। প্রথম বিষয়টি হলো –

أَوَلَمۡ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ
যারা আল্লাহর উপস্থিতি অস্বীকার করে, তারা কি দেখে না?
কি দেখার কথা বলা হয়েছে এখানে?
আল্লাহ আমাদের বলছেন তারা কি দেখে না যে আসমান ও জমিন একসাথে মিলেমিশে ছিল, তারপর আমি তাদের আলাদা করেছি। আমরা আসলেই তা দেখিনি, কারণ আমরা তো এখন পৃথিবীতে অবস্থান করছি। আমরা দেখছি পৃথিবী এবং আকাশ ইতিমধ্যেই আলাদা হয়ে গেছে।

তাই আমাদেরকে দেখতে হবে হৃদয় দিয়ে, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহকে জানার জন্য, তাঁকে স্মরণ করার জন্য, এবং অবশ্যই তাঁর ইবাদতের জন্য একটি নিদর্শন।

যারা সত্যিই আল্লাহকে জানতে চায় তারা তাদের চারপাশে তাকায়। এই মহাবিশ্ব অনেক কিছুই উন্মোচন করে। এই মহাবিশ্ব নিজেই আল্লাহকে প্রতিফলিত করে। তাই প্রথমত আমাদের বুঝতে হবে কিভাবে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি, আর এর উত্তর রয়েছে এই আয়াতটিতে। আমাদের দেখতে হবে, যেন-তেন ভাবে দেখলে হবে না, দেখতে হবে হৃদয় দিয়ে।

কিভাবে সবকিছু শুরু হল? এটি একটি সাইন্টিফিক মিরাকল। আসমান ও জমিন আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একে অপরের সাথে সংযুক্ত ছিল এবং তারপর আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত দ্বারা, এদেরকে একে অপরের থেকে পৃথক করেছেন। আকাশ উঠে গেল উপরে আর পৃথিবী নেমে আসল নিচে।

এবং কিভাবে এসব হল তা আমরা বিশদ জানি না। আল্লাহ চানও না যে আমরা বিস্তারিত জানি, অন্যথায় তিনি কুরআনে তা স্পষ্ট করে দিতেন। তিনি চান আমরা যেন জানি, বস্তুত বিজ্ঞান এখন যা প্রমাণ করেছে, যে একসময় সবকিছু একসাথে ছিল। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আদিতে আকাশ, সূর্য, নক্ষত্র ও পৃথিবী ইত্যাদি পৃথক সত্তায় ছিল না; বরং সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। তখন মহাবিশ্ব ছিল অসংখ্য গ্যাসীয় কণার সমষ্টি। পরবর্তীকালে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী ও গ্রহসমূহ সৃষ্টি হয়। এটিই বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ থিওরী।

আমি আসলে এখান থেকে কি জানতে চাই, এবং এটা আমার দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে সাহায্য করবে? আসুন আয়াতের শেষ অংশটা দেখি –

وَجَعَلۡنَا مِنَ ٱلۡمَآءِ كُلَّ شَىۡءٍ حَىٍّۖ
আর আমি সকল প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।

এর পরে রয়েছে একটি প্রশ্ন –
أَفَلَا يُؤۡمِنُونَ
তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?

সৃষ্টিগত দিক থেকে যদি এই পৃথিবীর দিকে লক্ষ্য করেন তবে দেখবেন যে এতে অনেক সামঞ্জস্য রয়েছে। প্রথমেই বলছি মানুষের কথা, মানুষের শরীরে ৭০% তরল, পৃথিবীরও ৭০% পানি, এবং একই শতাংশ (৭০%) তরল প্রায় সমস্ত প্রাণীর মধ্যেও। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেছেন –

وَٱللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّن مَّآ ...
আর আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন।....
[সূরা আন-নূর:৪৫]

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বীর্য থেকে অর্থাৎ প্রবাহিত স্বল্প পানি থেকে। এজন্য আল্লাহ বলেন –

أَفَلَا يُؤۡمِنُونَ
তবু কি তারা ঈমান আনবে না?

এটিই আপনার এবং আমার জন্য প্রধান বার্তা। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিশদ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেন আমাকে জানতে হবে? আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, আমাকে আমার চারপাশ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমি তো আকাশ পৃথিবীকে আলাদা দেখতে পাই। বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে তারা একসাথে ছিল এবং এখন পৃথক হয়ে গেছে।

আমাকে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এবং আমার দৈনন্দিন জীবনে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

প্রথমত আমাকে দেখতে হবে, এবং দেখতে হবে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। আমি আমার চারপাশে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে অনেক অলৌকিক নিদর্শন দেখতে পাই। এটাই আমাকে পরিবর্তন করার জন্য এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী করার জন্য যথেষ্ট।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহর কোন কিছু সৃষ্টি করার এবং কোন কিছু পরিবর্তন করার ক্ষমতা মানুষের ক্ষমতার অনেক ঊর্ধ্বে, এমনকি মানুষের বোধগম্যতারও উর্ধ্বে।

ঈমান বৃদ্ধির এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বোত্তম উপায় হল তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।
হে আল্লাহ, আমাদের চারপাশ অবলোকন করার জন্য এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমাদেরকে বাসীরা অর্থাৎ আন্তরিক দৃষ্টি দিয়ে আশীর্বাদ করুন।

সিরিজ: কুরআনে সব আছে

মূল: ড: হাইফা ইউনিস

লিখেছেন

Picture of ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture