Writing

আসমাউল হুসনা – আস-সালাম

পবিত্র কুরআনে একটি উপলক্ষে আল্লাহ নিজেকে السَّلاَمُ — শান্তি-দাতা ও শান্তির উৎস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনিই সকল শান্তি ও নিরাপত্তার উৎস। আস-সালাম নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ এবং একমাত্র তিনিই নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রদান করতে পারেন!

সালাম এসেছে س-ل-م থেকে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল শান্তিপূর্ণ, পরিতৃপ্ত এবং প্রশান্তি। দ্বিতীয় অর্থটি হল অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত, এবং তৃতীয় অর্থটি হল নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং ভাল থাকা।

এই মূলটি কুরআনে ১৪০ বার ১৬ টি উদ্ভূত আকারে উপস্থিত হয়েছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল السلامه – আসলামা (সমর্পণ), سلام – সালামুন (শান্তি), سالمين- সালেমিন (নিরাপত্তা/সুস্থতা), الاسلام -আল-ইসলামি (ইসলাম) এবং المسلم -আল-মুসলিম (“মুসলিম”)।

ভাষাগত দিক থেকে, সালাম এবং সালামাহ মানে নিরাপত্তা বা কোন কিছু থেকে মুক্ত হওয়া; আরেকটি মতামত হল এর অর্থ হল সুস্থ এবং নিরাপদ থাকা। আল্লাহ আস-সালাম সকল অপূর্ণতা থেকে মুক্ত। তিনি তাঁর সমস্ত গুণাবলী ও কর্মে নিখুঁত। তিনিই পূর্ণতা। আস-সালাম সকল ঘাটতি থেকে নিরাপদ এবং তাঁর সৃষ্টি তাঁর পক্ষ থেকে যে কোনো অন্যায় থেকে নিরাপদ।

আস সালাম নিজেই বলেছেন –

هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْقُدُّوسُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلْمُؤْمِنُ ٱلْمُهَيْمِنُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُ سُبْحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তিনিই সেই আল্লাহ্ যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, -- রাজাধিরাজ, মহাপবিত্র, প্রশান্তিদাতা, নিরাপত্তা-বিধায়ক, সুরক্ষক, মহাশক্তিশালী, মহামহিম, পরম গৌরবান্বিত। সকল মহিমা আল্লাহ্‌র, তারা যা আরোপ করে তার বহু উর্ধ্বে।
[৫৯:২৩]

ইসলাম শব্দটি এসেছে সালামার মূল থেকে। ইসলাম মানে শান্তিতে প্রবেশ করা এবং আল্লাহর হুকুম ও আদেশের সাথে শান্তিতে থাকা বা মিলিত হওয়া; মুসলিমরা আত্মসমর্পণ করে আজ্জা ওয়াজালের কাছে।

জান্নাতকে বলা হয় দারুস সালাম।

وَٱللَّهُ يَدْعُوٓا۟ إِلَىٰ دَارِ ٱلسَّلَٰمِ وَيَهْدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ
আর আল্লাহ শান্তি-নিরাপত্তার আলয়ের প্রতি আহবান জানান এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথ প্রদর্শন করেন।
[১০:২৫]

কারণ জান্নাত সমস্ত যন্ত্রণা, মৃত্যু, উদ্বেগ এবং অশ্লীল কথাবার্তা থেকে মুক্ত এবং এটি একটি নিরাপত্তার স্থান।
ইসলামের অভিবাদন আসসালামু আলাইকুম এর প্রকৃত অর্থ হল: আপনি আমার থেকে নিরাপদ; আমার দ্বারা কোন ক্ষতি আপনার হবে না। উদাহরণস্বরূপ, ক্বালবুন সলিম, মানে একটি সুস্থ হৃদয় যা দাগহীন, নিষ্কলঙ্ক।

আল্লাহর এই নামটিকে কিভাবে নিজের জীবনে প্রয়োগ করবেন? নিজেকে সমর্পন করুন – আস-সালামের কাছে আত্মসমর্পণ করুন যাতে আপনি নিরাপদ থাকতে পারেন। আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেই আপনি আল্লাহর সালাম পাবেন। ঈমান হল হেদায়েতের অনুসরণ করা এবং সেই অনুযায়ী আমল করা।

لَهُمْ فِيهَا فَٰكِهَةٌ وَلَهُم مَّا يَدَّعُونَ
সেখানে তাদের জন্য থাকবে ফল-ফলাদি এবং তারা যা চাইবে তাও।
[৩৬:৫৭]
سَلَٰمٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ
অসীম দয়ালু রবের পক্ষ থেকে বলা হবে 'সালাম'।
[৩৬:৫৮]

ক্রমাগত দারুস সালামে কথা স্মরণ করুন, যাতে আপনি আল্লাহর সালাম পাওয়ার এবং জান্নাতে নিরাপদে থাকার আকাঙ্ক্ষায় এ পৃথিবীতে যতটা সম্ভব ভাল কাজ করার চেষ্টা করে যেতে পারেন।

একটি প্রশান্ত ও নিষ্কলঙ্ক হৃদয়ের জন্য সংগ্রাম করুন। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের মুখমন্ডল ও সম্পদের দিকে তাকান না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান।’ [মুসলিম] আপনি যেমন শারীরিক রোগের জন্য সজাগ থাকেন, তেমনি মিথ্যা, গীবত, শপথ, ভণ্ডামি, হিংসা, প্রদর্শন ইত্যাদি রোগের জন্য আপনার হৃদয়কে ক্রমাগত মূল্যায়ন করুন এবং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এসব ব্যাধির প্রতিকার খুঁজুন, কারণ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে আপনাকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে যাতে ‘ক্বালবুন সালিম’ – একটি সুস্থ ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে আল-কুদ্দুসের কাছে আপনি পৌঁছাতে পারেন।

مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَمَن يُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُۥ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ
আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। 
[৬৪:১১]

কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরুণ ও অধ্যবসায়ের পরিচয় দিন। আস-সালাম আপনার অন্তরে শান্তি দিবেন: আপনার হৃদয়ে সালাম, সুস্থতার অনুভূতি, এবং প্রশান্তি থাকবে।

সালামের প্রচার করুন। রাসুল (ﷺ) বললেন, ‘হে মানব সকল! সালামের প্রসার কর। খাদ্য দান কর। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। লোকেরা ঘুমিয়ে গেলে রাতে নফল সালাত আদায় কর। তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।’ [আত-তিরমিযী] এবং তিনি সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে বলেছেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং যাদেরকে আপনি জানেন এবং যাদেরকে আপনি জানেন না তাদের সালাম দেওয়া।’ [আল-বুখারী, মুসলিম] এবং তিনি বলেছেন, ‘যখন দুইজন মুসলমান মিলিত হয় (সালাম দেয়) এবং করমর্দন করে, তখন তাদের বিচ্ছেদের পূর্বেই তাদের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় [আবু দাউদ] ‘সালাম’ আমাদের জন্য আল্লাহ আস-সালামের পক্ষ থেকে একটি বিশুদ্ধ আশীর্বাদ।

আল্লাহকে সালাম দিবেন না। নবী মুহাম্মাদকে (ﷺ) সালাম বলুন – উদাহরণস্বরূপ, ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’- এবং অন্যান্য নবীদের উপর এবং পুণ্যবানদের উপর – ‘আলাইহি, ‘আলাইহি ওয়া সালাম’ বলার মাধ্যমে – যেমন আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়াজাল কুরআনে বলেছেন। কিন্তু কখনই আল্লাহকে সালাম দিবেন না, কেননা তিনিই আস-সালাম! তাঁর নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই, কারণ তিনিই শান্তি এবং পরিপূর্ণতার উৎস।

আস-সালামের কাছে চান। যখন আপনি খুব চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন তখন এই নামে আল্লাহর কাছে আজ্জা ওয়াজালের কাছে প্রার্থনা করুন। আপনি বলতে পারেন, আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম (হে আল্লাহ, আপনি আস-সালাম), আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন, বা অন্যের নিরাপত্তার জন্য অনুরোধ করুন। ইসলামকে আপনার নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে এবং আপনার হৃদয়ে শান্তি আনতে আস-সালামের কাছে আবেদন জানান।

আপনি যদি সালাম, নিরাপত্তা এবং আস-সালামের সুরক্ষা চান তবে নিজের উপর জুলুম করবেন না, অন্যদের প্রতি জুলুম করবেন না এবং আল্লাহর আজ্জা ওয়াজালের সাথে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যায় করবেন না। আল্লাহ নিজেই আস-সালাম – যার অর্থ তিনি অন্যায় করতে পারেন না। অন্যের অধিকার রক্ষা না করে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য, অন্যের সম্মান রক্ষা, এবং অভাবগ্রস্তকে সাহায্য না করে আপনি নিজের উপর জুলুম করে থাকেন। কাজেই অন্যের অধিকার সুরক্ষায় আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।

নামাজের শেষে আস সালামের কাছে দু’য়া করুন যেমন করে রাসুল করেছেন –
আসতাগফিরুল্লা-হ” – ৩ বার ।(ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪ)
অর্থঃ হে আল্লাহ!আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এরপর –
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ –
(আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া ধল জালালি ওয়াল ইকরাম।) অর্থঃ হে আল্লাহ্! তুমি শান্তিময়, তোমার কাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। তুমি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী [মুসলিম]।
নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই আপনি নামাজে কৃত ভুলগুলো জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, তার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষায় থাকার জন্য।

হে আল্লাহ, আস-সালাম, আমরা জানি যে সমস্ত শান্তি ও নিরাপত্তা একমাত্র আপনার কাছ থেকেই আসে। আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ রাখুন, আমাদের ধৈর্য ও অভ্যন্তরীণ শান্তির পথ দেখান এবং আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের থেকে অন্যরা নিরাপদ এবং অন্যের অবিচার থেকে আমাদেরকে নিরাপদ করুন। আমাদেরকে সুস্থ এবং শান্তিপূর্ণ হৃদয় দিয়ে সুসজ্জিত করুন এবং আমাদেরকে জান্নাতে আপনার সালাম গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আল্লাহুম্মা আমীন!

আস-সালাম

Source: understandQuran

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture