Writing

আসমাউল হুসনা – আল-গাফুর

আল্লাহর নাম আল-গফুরের অর্থ ক্ষমাশীল – যিনি পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করেন এবং যিনি পরম ক্ষমাশীল। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর এই নামটি ৯১ বার এসেছে। তিনি সেই প্রভূ যার ক্ষমায় গুণগত (quality) এবং পরিমাণগত (quantity) উভয় দিকই প্রকাশ পায়। আল-গফুর হলেন তিনি যিনি ক্ষমা করেন, পাপ যত বড়ই হোক না কেন, এবং তিনি বারবারই ক্ষমা করেন!

গফুর এসেছে غ-ف-ر থেকে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ হল ঢেকে রাখা, পর্দায় রাখা, বা আড়াল করা। দ্বিতীয় অর্থ হল ক্ষমা করা। আর তৃতীয় অর্থ হল কোন জিনিসকে (পঙ্কিলতা থেকে) রক্ষা করার জন্য ঢেকে রাখা।

এই মূলটি কুরআনে ২৩৪ বার নয়টি উদ্ভূত আকারে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল يغفروا -ইয়াগফিরু (তিনি ক্ষমা করেন, ক্ষমা করবেন), ويستغفر-ওয়া-ইস’তাগফির (এবং ক্ষমা প্রার্থনা করুন), এবং مغفره – মাগফিরাতুন (ক্ষমা)।

ভাষাগত দিক থেকে, গফুর এবং গাফফার উভয়ই مغفره – মাগফিরাহ এর ধারণাকে নির্দেশ করে। আল-গাফফার বলতে বোঝায় – আল্লাহ বারবার ক্ষমা করেন (পরিমাণ) আর আল-গাফুর নামটি তাঁর ক্ষমার ব্যাপকতা (গুণ) নির্দেশ করে। আল্লাহর নাম আল-গফুর মানে শুধু এই নয় যে তিনি আমাদের ক্ষমা করেন; এছাড়াও তিনি আমাদের নিজেদের কর্মের পরিণতি থেকে আমাদের রক্ষা করেন। তিনি মাগফিরাহ করেন- আমাদের পাপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হওয়া সত্বেও তিনি তা তিনি ঢেকে দেন। তাঁর নিখুঁত ক্ষমা সত্যিই আমাদের প্রতি তাঁর চূড়ান্ত করুণার লক্ষণ।

আল গাফুর নিজেই বলেছেন –

نَبِّئْ عِبَادِىٓ أَنِّىٓ أَنَا ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে আমি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু
[১৫:৪৯]
يُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ وَهُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা (অনুগ্রহ) দেন। আর তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
[১০:১০৭]

আল্লাহর নাম আল-গফুর এবং আর-রহিম এর মধ্যে রয়েছে সুন্দর একটি সমন্বয়। উদাহরণস্বরূপ আরবি ভাষায় الرحيم – আর-রহিম নামটি আল্লাহর রহমতের ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। অন্যদিকে الغفور – আল-গফুর নামের অর্থ এই নয় যে তিনি সর্বদা বা চিরতরে ক্ষমাশীল, কারণ তহলে তো কোন জাহান্নাম থাকবে না। আল-গফুর নির্দেশ করে যে আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল; আমরা যা আশা করতে পারি তিনি তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমাশীল।

সাধারণত আল্লাহর নাম আল-গফুরের সাথে যে নামটি আসে তা হল আর-রহিম। আল্লাহর এই দুটি নাম একসাথে কুরআনে ৭২ বার এসেছে, যা প্রদর্শন করে যে তিনি আমাদের পাপগুলিকে ঢেকে দেন কারণ তিনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত করুণাময়। আল্লাহর এই দুটি নামের সুন্দর সংমিশ্রণের একটি উদাহরণ কুরআনের সবচেয়ে আশাপ্রদ, হৃদয় প্রশান্তকারী আয়াতে আমরা দেখতে পাই –

قُلْ يَٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[৩৯:৫৩]

হে পাপীগণ, না বলে আল্লাহ এখানে নম্রভাবে ‘ইয়া ইবাদি’ বলে আমাদের সম্বোধন করেছেন, ‘হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছো।’ আলহামদুলিল্লাহ; আমাদের একজন প্রভু আছেন যিনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

আল্লাহর এই নামটিকে আমরা নিজেদের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করতে পারি? এই নাম ধরে আল্লাহকে ডাকুন। আপনি যখন অন্যের প্রতি বা এমনকি নিজের প্রতিও অন্যায় করেন, তখন আল-গাফুরকে ডাকুন, পাপ যত বড় বা ছোটই হোক না কেন। আল্লাহর এই সুন্দর নামটি দিয়ে আপনি দু’আ করতে পারেন। সর্বদা তাঁকে আপনার উপর মাগফিরা করতে বলুন, আপনার খারাপ কাজগুলিকে ঢেকে রাখতে এবং ক্ষমা করতে বলুন। কখনই চাওয়া ছেড়ে দেবেন না। একই সাথে, কখনই ভাববেন না যে পাপ কাজটি করেই ফেলি তারপরে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে। পাপ কাজ করার সময় আপনি যে মহান আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালাকে অমান্য করছেন, তাঁর প্রদত্ত বিধি নিষেধ অমান্য করছেন সেটাও একবার চিন্তা করে দেখুন।

কখনো নিরাশ হবেন না। একজন প্রকৃত মুমিনের একটি বৈশিষ্ট্য হল যে সে কখনো নিরাশ হয় না। আমরা আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারে নিরাশ হই না এবং আমরা তাঁর রহমত ও ক্ষমা থেকেও নিরাশ হই না। এর মানে হল যখনই আমরা কোন খারাপ কাজ করি – এবং যেহেতু আমরা মানুষ তাই আমরা পাপ করি – আমরা হতাশায় নিমজ্জিত হই না বরং তৎক্ষণাৎ আল-গফুরের দিকে প্রত্যাবর্তন করি এবং ভালো কাজের মাধ্যমে খারাপ কাজকে প্রতিস্থাপন করি।

আল-গফুরের ক্ষমার কথা চিন্তা করুন এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে ক্ষমাশীলতার এই গুনটিকে নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করুন। সর্বদা ক্ষোভমুক্ত হৃদয় নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। হামদুন আল-কাসার, একজন মহান প্রারম্ভিক মুসলিম, বলেছেন, ‘যদি আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ ভুল করে, তবে তাদের জন্য সত্তরটি অজুহাত তৈরি করুন। যদি আপনার অন্তর এতে অক্ষম হয়, তবে জেনে রাখুন, ঘাটতিটা আপনার নিজেরই। [বায়হাকী] সর্বদা অন্যদের অবকাশ দিন, তাদের জন্য অজুহাত তৈরি করুন এবং অন্যের ভুল সন্ধান করবেন না।

অন্যের দোষ গোপন করুন। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন। ‘[মুসলিম]। এই পৃথিবীতে অন্যের দোষ-ত্রুটি এবং দুর্বলতা ঢেকে রাখার বিনিময়ে আল্লাহ আল-গফুর আপনাকে কি দেবেন জানেন? তিনি এই গুণটিকে এতটাই ভালবাসেন যে তিনি আপনার পাপ ক্ষমা করবেন এবং শেষ বিচারের দিনে আপনার পাপের হিসাব নেওয়ার জন্য আপনাকে ডাকবেন না। যদিও বা তিনি তা করেন তবে তিনি প্রকাশ্যে তা করবেন না, আপনাকে তিনি অন্যদের সামনে বিব্রত করবেন না সেদিন।

নিজের পাপ প্রকাশ্যে বলে বেড়াবেন না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতদের প্রত্যেককে ক্ষমা করা হবে, তাদের ব্যতীত যারা তাদের অন্যায় প্রকাশ্যে বলে বেড়ায়। এর উদাহরণ হল, যে ব্যক্তি রাত্রে এমন একটি গুনাহ করে যা আল্লাহ ঢেকে রেখেছেন এবং সকালে সে মানুষকে বেড়ায় আমি গত রাতে অমুক অমুক গুনাহ করেছি। রাতের বেলায় আল্লাহ তা ঢেকে রাখেন, কিন্তু সকালে ঐ ব্যক্তি স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত আবরণটি ছিঁড়ে ফেলে। [আল-বুখারী ও মুসলিম] এছাড়া আপনি যখন গর্ব করে নিজের পাপের কথা অন্যদের বলবেন, অন্যরাও তা করতে উৎসাহিত হবে।

হে আল্লাহ, আল-গফুর, আমরা জানি যে আপনি পরম ক্ষমাশীল। আমাদের পাপের আকার এবং পরিমাণ যাই হোক না কেন, আমরা আপনাকে আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য, অন্যদের থেকে আমাদের দোষগুলি লুকিয়ে রাখার জন্য এবং এই দুনিয়া এবং আখিরাতের জীবনে আমাদের খারাপ কাজের প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য আপনার কাছে সাহায্য চাই। আপনার করুণা এবং ক্ষমা থেকে আমরা যেন কখনো নিরাশ না হই, আমরা যেন অন্যদের ক্ষমা করতে পারি আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন!

আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

আল-গাফুর

Source: understandQuran

লিখেছেন

Picture of ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture