Writing

হারাম রিলেশনের কিছু আজগুবি কথাবার্তা

হারাম রিলেশনের কিছু আজগুবি কথাবার্তাঃ
১. আরে আমরা তো যাস্ট ফ্রেন্ড!
২. শুন, আমাদের মন একদম ফ্রেশ, তোর মতো জিলাপির প্যাঁচ না!
৩. ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, এক্কেবারে কলিজার বন্ধু! ওকে নিয়ে বাজে কথা বলতে আসবি না।
৪. বন্ধু মানে বন্ধু এতে আবার খারাপের কি?

আজ হাজার হাজার যুবক যুবতী এই যাস্ট ফ্রেন্ড নামক রোগে আক্রান্ত। তারা এটাকে ডাল ভাত মনে করে। অথচ আগুন যখন লেগে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না।

ছেলে এবং মেয়ে হলো পেট্রোল এবং আগুনের মতো। পেট্রোলকে যতই পানির মতো মনে করুন না কেনো, ঠান্ডা বরফের মতো মনে করুন না কেনো, পেট্রোল আগুনের সংস্পর্শে আসলেই জ্বলে উঠবে।

ফিজিকালি ভাবেই তো একজন ছেলে একজন মেয়েকে এবং একজন মেয়ে একজন ছেলেকে আকর্ষণ করে। এটা বলতে হয় না, এটা চিরন্তন সত্য। এর কারণেই বংশগতি প্রকৃয়া চালু আছে, মানুষ বিয়ে করে বাচ্চা দেয়। এখন কথা হলো যার সাথে বিয়ে করা জায়েজ আছে তার সাথে বন্ধুত্ব করার ব্যাপারটা!

যেহেতু বিয়ে জায়েজ তাই, নন মাহারম ছেলে এবং নন মাহারম মেয়ের সাথে কথা বলা, চ্যাটিং করা, দেখা করা, ফ্রেন্ড বানানো, বেষ্টু বানানো এসব পুরোপুরি হারাম

পেট্রোল + আগুন = জ্বলবেই।
মেয়ে বেষ্টু + ছেলে বেষ্টু = জ্বলবেই।
মেয়ে যাস্ট ফ্রেন্ড + ছেলে যাস্ট ফ্রেন্ড = জ্বলবেই।
নন মাহারম ছেলে + নন মাহারম মেয়ে= জ্বলবেই।

জ্বলতে জ্বলতে প্রেম হবে, রিলেশন হবে, পার্কে বসে নষ্টামি হবে, রুমডেট হবে, ধর্ষন হবে, বিয়েও হবে। সমাজে অহরহ উদাহরণ আছে এসবের।

যাস্ট ফ্রেন্ডের রোগকে ৩ স্তরে ভাগ করা যায়। আসুন দেখে নেই, কে কোন ভাগে পরে।

প্রথম স্তরঃ

এরা ভীষণ ফ্রী হয়, একে অপরের সাথে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায়। যাস্ট ফ্রেন্ডের নাম একে অপরের হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়, রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে খাবার খায়। কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়। এখানে ওখানে হৈ-হুল্লোড় করে বেড়ায়। আর বলে বেড়ায় আমরা তো রিলেশন করছি না বাবা, তোমারা কেনো আমাদেরকে এভাবে বাঁকা চোখে দেখো? ও আমার কলিজার বন্ধু। ওর জন্য আমি সব করতে পারি। অথচ সে জানেও না, তার কলিজার বন্ধু আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বারবার মুগ্ধ হয়, আকর্ষিত হয়, তার বাম গালের তিলটাও বাদ যায় না ভালোলাগা থেকে। ধীরে ধীরে শুরু হয় বিভিন্ন অপকর্ম। মানে আগুন কিন্তু জ্বলছে।

দ্বিতীয় স্তরঃ

এদের বৈশিষ্ট্য হলো এরা খুব নিরীহ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে, যেনো কিছুই বুঝে না। এরা হাল্কা একটু ইসলামিক কায়দায় যাস্ট ফ্রেন্ড। মানে একে অপরকে নামাজের কথা বলে, ফজরে কল দিয়ে ডেকে দেয়, মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা দেয়, ইসলামিক বই গিফট করে, বোরকা পড়া পিক দেয়, ছেলে দেয় দাঁড়ি টুপি ওয়ালা পিক, মাঝেমাঝে দেখা করে, ছেলে ইসলামি পোশাকে আর মেয়ে বোরকা পড়ে কি চমৎকার ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে আর নিজেদের ভালো বন্ধু ভাবে।

তৃতীয় স্তরঃ

এরা না করে দেখা, না করে সাক্ষাৎ, না করে পিক দেওয়া নেওয়া। শুধু চ্যাটিং এ ইসলামিক কথা বলে। এদের শুরু হয় এভাবে –
ছেলেঃ আপু একটা মাসআলা জানার ছিলো খুব ইমপটেন্ট।
মেয়েঃ জ্বি বলুন ভাই।
ছেলেঃ…..
মেয়েঃ….
ছেলেঃ আচ্ছা আমরা কি পরিচিত হতে পারি?
মেয়েঃ জ্বি, আমি ওমুক, আমি তমুক।
ছেলেঃ মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। তবে আপনার লেখা আমার ভীষণ ভালো লাগে!

মেয়েঃ ধুর! কি যে বলো তুমি!, এসব কি লেখা!

ব্যাস শুরু হয়ে গেলো। এরা শুধু চ্যাটিং করে যাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায়। ছেলে কল্পনায় নিয়ে আসে হুজুরানীকে আর মেয়ে কল্পনায় দেখতে থাকে থাকল তার প্রিয় বন্ধু হুজুরকে! অথচ পরিষ্কার হারাম। এগুলো নেক সুরতে শয়তানের সূক্ষ্ম চাল।

এসব ছেলে মেয়েদের বলি, কেনো ভাই আপনার মাসআলা জানার দ্বীন ভাব আদান প্রদানে ছেলে বন্ধু নাই? আর বোন। আপনি! আপনার মেয়ে বন্ধু কি নেই? কেনো একজন নন মাহারম ছেলের সাথে দ্বীনি কথা বলবেন? আর তার কল্পনার রানী হয়ে তার অন্তরকে অন্ধকার করে দেবেন।

আচ্ছা একটু ভেবে দেখুন তো, এটা কি অন্তরের যেনার মধ্যে পরে না? উপরের উদাহরণ গুলোর সবগুলোই তো যেনার মধ্যে পরে। হাতের যেনা, পায়ের যেনা, চোখের যেনা, অন্তরের যেন। যেনাকারী নর-নারী নিয়ে রাসুল সঃ এর সেই হাদিসটি কি শুনেননি?

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম, যার ওপরের অংশ ছিলো চাপা আর নিচের অংশ ছিলো প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভেতরে নারী পুরুষরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখা ওপরে এলে তারা ওপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল।
আমি জিবরাঈল (আঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম,” এরা কারা”? জিবরাঈল (আঃ) বললেন, “এরা হলো যিনাকারী নারী ও পুরুষ। ”
(সহিহ বুখারী:১৩৮৬)

ভেবে দেখুন, যাস্ট ফ্রেন্ডের নামে যে যেনা গুলো হচ্ছে। পারবেন কি এক সেকেন্ড জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে? এই আগুন এতোটাই ভয়াবহ যে, এক সেকেন্ড না, এক মাইক্রো সেকেন্ড বা তার কম সময়ও পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তিটি যদি থেকে আসে তবে সে দুনিয়ায় সব সুখ শান্তি নিমিষেই ভুলে যাবে। সে বলবে- “আল্লাহর কসম সুখ শান্তি কি জিনিস আমি জানি না।” অথচ দুনিয়ায় আগুনই সহ্য হয়না আমাদের!

তাই আসুন নন মাহারমকে যাস্ট ফ্রেন্ড না বানিয়ে ছেলে দ্বীনদার বন্ধু তালাস করুন। মেয়ে দ্বীনদার মেয়ে বন্ধু তালাশ করুন। বন্ধু না পেলেও আল্লাহ পাক সর্বোত্তম বন্ধু নন কি?

লিখেছেন

Picture of আরিফ আব্দুল্লাহ

আরিফ আব্দুল্লাহ

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্ট অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
আমার জীবন মরন সবকিছু স্রষ্টার জন্য

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture