হযরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম

ইদ্রিস আলাইহিস সালাম, উচ্চ মর্যাদার অধিকারী এক নবী। সত্যবাদী, বিনয়ী, কোমল ও উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন হযরত ইদ্রিস আ.। তার সম্পর্কে পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“তুমি এই কিতাবে ইদরীসের কথা আলোচনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী। আমরা তাকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম।’’
(মারিয়াম ১৯/৫৬-৫৭)

সূরা মারিয়ামের এক আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ইদ্রিস আ. হযরত নূহ আ. এর পরবর্তী নবী ছিলেন। যদিও কেউ কেউ বলেছেন তিনি নূহ আ. এর আগের নবী। তবে নূহ আ. এবং ইদ্রিস আ. উভয়ই হযরত আদম আ. এর নিকটবর্তী নবী ছিলেন।

পবিত্র কুর’আনে সূরা আম্বিয়ার ৮৫-৮৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী। আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।”

এই আয়াতে হযরত ইদ্রিস আ. এর আরেকটি গুণের কথা জানতে পারা যায় আর তা হলো তিনি ছিলেন সবরকারী। যার কারণে ইসমাঈল ও যুলকিফল আ. এর সাথে তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে উক্ত আয়াতে।

হযরত ইদ্রিস আ. এর জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে একটা ইস্রায়েলি বর্ণনা আছে খুব পরিচিত। অনেক তাফসিরে এই বয়ানটা এসেছে। জানার জন্য আমরা এই বর্ণনাটা পড়তে পারি।

একদিন হযরত ইদ্রিস আ. কে আল্লাহ তাআলা ওয়াহী করেন, “সমস্ত বাণী আদমের আমলের সমান তোমার একার আমল আমি দৈনিক উঠিয়ে থাকি। সুতরাং আমি পছন্দ করি যে, তোমার আমল বেড়ে যাক।” অথবা, “সবাই যত আমল করবে তার ডাভল আমল আমি তোমার নামে লিখে দেই।”

ইদ্রিস আ. এর এক ফেরেশতার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো। এই ওয়াহী আসার পর তাঁর কাছে বন্ধু ফেরেশতা আগমন করলে তিনি তার কাছে বর্ণনা করেন, “আমার কাছে এরূপ ওয়াহী এসেছে। সুতরাং আপনি মালাকুল মাউতকে বলে দিন যে, তিনি যেন আমার জান কবয বিলম্বে করেন, যাতে আমার নেক আমল বৃদ্ধি পায়।”

ফেরেশতা তখন তাকে বললেন যে, এটা তো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। কিন্তু আপনি যেহেতু বলছেন সেহেতু চেষ্টা করে দেখতেই পারেন। এরপর ঐ ফেরেশতা ইদ্রিস আ. কে নিজের পালকের উপর বসিয়ে নিয়ে আকাশে উঠে যান।

চতুর্থ আকাশে পৌঁছে মালাকুল মাউতের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। ঐ ফেরেশতা মালাকুল মাউতকে হযরত ইদ্রিস আ. এর ব্যাপারে সুপারিশ করেন। মৃত্যুর ফেরেশতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “উনি কোথায় আছেন?” উত্তরে তিনি বলেন, “এই যে, আমার পালকের উপর বসে রয়েছেন।
মালাকুল মাউত বা মৃত্যুর ফেরেশতা তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “সুবহানাল্লাহ! আমাকে এখনই হুকুম করা হলো যে, আমি যেন হযরত ইদ্রিসের আ. রূহ চতুর্থ আকাশে কবয করি। আমি চিন্তা করছিলাম যে, যিনি যমীনে রয়েছেন তাঁর রূহ আমি চতুর্থ আকাশে কি করে কবয করতে পারি?” সুতরাং তৎক্ষণাৎ তিনি হযরত ইদ্রিসের আ. জান কবয করে নেন।

এই বর্ণনাটি কেবলই ইস্রায়েলি রেওয়ায়ত। এটা শতভাগ সঠিক কিছু নয়। এটা সত্য হতে পারে আবার মিথ্যাও। তবে মিরাজের একটি অথেনটিক হাদিসে দেখা যায় যে, নবীজি সা. যখন মিরাজের রাত্রে আকাশে গমন করেন তখন চতুর্থ আকাশে হযরত ইদ্রিস আ. এর সাথে তার সাক্ষাত হয়।

লিখেছেন

সিলেটে থাকি, পড়ালেখা সিলেটেই। পড়ছি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। আর ভালোবাসি লিখালিখি করতে।
Writer and selector at জাগরণ – Jagoron
সসীমের পথ ছেড়ে ছুটি অসীমের পানে

Exit mobile version