Writing

যে ঢেউ আসে বারবার

মেরিন ড্রাইভের পথ ধরে এগিয়ে চলেছি কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে। একদিকে সবুজের সমারোহে পরিপূর্ণ পাহাড়ের সারি আর অপরদিকে বিশাল সমুদ্র। একটু পর দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে আর উপকূলকে ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এবং সেই ঢেউ চলে যাওয়ার ক্ষাণিক বাদেই দৃশ্যমান হচ্ছে সাগরের ফেনারাশি যা পরবর্তী ঢেউ আবার সাথে করে নিয়ে যায়।এভাবে এই প্রক্রিয়া চলমান, যতোবার‌ই ঢেউ যাওয়ার পর ফেনারাশি তৈরি হয় ততোবার‌ই তা পরবর্তী ঢেউ এর আঘাতে ভেঙেচুরে সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যায়।

সমুদ্রের এই উপকূল যেন আমাদের জীবনের মতো,যেখানে বারবার পাপের জগতে হারিয়ে আমাদের অন্তর কালো হয়ে যায় যেমনটা তীরের জলরাশি ফেনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু ফেনাগুলো যেমন ক্ষাণিক বাদেই ঢেউয়ের সাথে চলে যায় তেমনি আমাদের ছোটোখাটো গুণাহের বোঝা,কালো হয়ে যাওয়া অন্তরের অন্ধকার আমাদের একটি আমলের মধ্য দিয়ে নিয়মিত হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজে আর তা হচ্ছে গুণাহ মাফের আমল

মজার ব্যাপার সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও কমপক্ষে পাঁচবার গুণাহ মাফের ঢেউ আসে আমাদের পবিত্র করতে,পরিচ্ছন্ন করতে। আপনি হয়তো ভাবছেন আমার মাথায় সালাতের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে,হ্যা সালাতের সাথে অবশ্যই গুণাহ থেকে বেঁচে থাকার বিষয়টি জড়িত কেননা আল্লাহ পাক বলেন,

“নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে।”
[সূরা আনকাবুত:আয়াত নং ৪৫]

সালাত তো এর আদায়কারীকে গুণাহ থেকে বিরত রাখছে কিন্তু আমি ভাবছিলাম সালাতের পরবর্তী একটি ছোট্ট আমলের কথা,যা ফরজ নামাজের হিসাবে কমপক্ষে পাঁচবার আমাদের জীবনে ঢেউয়ের মতো আসছে।এখন আমাদের দায়িত্ব সেই ঢেউয়ে আমাদের দৈনন্দিন ছোটোখাটো গুণাহ ভরা ক্বলবটাকে পরিস্কার করে নেওয়া।তবে কি সেই ঢেউ?

নবীজী ﷺ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার করে বলবে,
سبحان الله
‘আল্লাহ কতই-না পবিত্ৰ-মহান।’
الحمد لله
‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’
الله أكبر
‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়।’
এভাবে মোট ৯৯ বার। এরপর ১০০ বার করার জন্য নিচের দু’আ বলবে,
لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد و هو على كل شى ء قديم
‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।”
তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার পরিমাণ।”
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭]

আমরা প্রতি পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজে এই সুযোগ পাচ্ছিই,আর সুন্নাত নামাজ গুলোর কথা বললে এই সুযোগ তো আরো বেশি।তবে সুন্নাত নামাযে এই ছোট্ট আমলটুকু না করলেও নূন্যতম ফরজ সালাতের পর আমরা আমাদের গুণাহ মাফের ঢেউ দিয়ে নিজেদের পবিত্র করতে পারছি।

উল্লেখযোগ্য,এই গুণাহ অবশ্যই ছোটোখাটো গুণাহ অর্থাৎ সগীরাহ গুণাহ আর আমরা দুই ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে সগীরাহ গুণাহ দ্বারাই হরহামেশা আক্রান্ত হ‌ই। অত‌এব এটি আমাদের জন্য দারুন এক সুযোগ।

পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বলা হয়েছে,”গুণাহ যদি সাগরের ফেনার পরিমাণ হয়”, অর্থাৎ এই গুণাহ মাফের লিমিটেশন নেই,যতো গুণাহ‌ই করি না কেন মাফ হয়ে যাবে সেই সাগরের ঢেউ এর মতো।
আর প্রতি সালাতের ওয়াক্তে যদি আমরা নিজেদের গুণাহ থেকে পবিত্র করতে পারি এবং এর পর‌ই যদি আমাদের মৃত্যু চলে আসে তবে তা হবে পবিত্র অবস্থায় মৃত্যু, আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকা এক রূহের তার মালিকের নিকট প্রত্যাবর্তন আর সেই প্রত্যাবর্তন কতোই না উত্তম!

লিখেছেন

জেনারেল লাইনে পড়াশোনার ব্যস্ততায় দ্বীনি জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম পেয়েছি তারপরও অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ এবং ইসলামী ব‌ইয়ের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামের সৌন্দর্যকে উম্মাহর সামনে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমার এই টুকটাক লেখালেখি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture