Writing

ফেরেশতাদের বিচরণ – পর্ব – ০১

আপনারা হয়তো অনেকেই অনলাইনে এমন কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখে থাকবেন যেখানে, একজন ব্যক্তি হয়তো বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলো আর সে লক্ষ্যও করেনি একটি গাড়ি তার দিকেই ছুটে আসছিলো। গাড়িটির সাথে তার হয়তো সংঘর্ষ হয়েই যাবে ঠিক এমন মুহূর্তে কেউ একজন তাকে যেনো বিদ্যুৎ গতিতে সরিয়ে নিলো!
আবার অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ একজন হয়তো সমুদ্র তীরে জগিং করছিলো এবং আচমকা একটি প্লেন কিংবা অন্য কিছু তাকে প্রায় আঘাত করেই ফেলতে ধরে আর অবিশ্বাস্যভাবে সে বেঁচে যায়!

এই যে এমন অহরহ ঘটনাগুলো নিত্যদিন ঘটে যাচ্ছে যা আপনি আমি প্রায়শই দেখছি তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার কুদরত, রহমত। আচ্ছা, কখনো এ বিষয়গুলো নিজের সাথে মিলিয়ে দেখেছেন কি?

মনে করুন, আপনি হয়তো হাইওয়েতে গাড়ি চালাচ্ছেন এবং কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে আপনার হয়তো দূর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কথা ঠিক এমন সময় আপনি চারপাশ লক্ষ্য করে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমায় রক্ষা করলেন!”

আবার আমাদের অনেকের ঘরে যাদের ছোট ভাইবোন কিংবা সন্তান রয়েছে; প্রায়ই দেখা যায় তারা খেলতে গিয়ে পরে যায়। হয়তো তাদের পরে যাওয়ার সময় একটু কমবেশি হলেই কিংবা তার মাথার পেছনে আঘাত লাগলেই ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতো। অথচ সুবহানাল্লাহ! এমন কিছুই হয় না আর সে কোনো রকম আঘাত ছাড়াই বেঁচে যায়।

নিত্যদিন আমরা এই যে ঘটনাগুলোর সম্মুখীন হই তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার অশেষ ক্ষমতার একটি অংশমাত্র তবে এক্ষেত্রেও ফেরেশতাদের কিছু সংযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

لَہٗ مُعَقِّبٰتٌ مِّنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡہِ وَ مِنۡ خَلۡفِہٖ یَحۡفَظُوۡنَہٗ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰہِ ؕ
মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে।
[সূরা রাদ-১১]

আপনি যদি এ আয়াতের দিকে লক্ষ্য করেন তাহলেই কিছু প্রতিফলন দেখতে পারবেন যা আমাদেরকে রাব্বুল আলামিন সম্পর্কে ধারণা দেয় যার মধ্যে প্রথমত রয়েছে;
-আল্লাহর দয়া!

আমরা সবসময় শয়তান এবং জিন নিয়ে চিন্তিত থাকি যে তারা তো এখানে আছে ওখানে আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি ব্যক্তির সাথেই শুধুমাত্র একজন শয়তান এবং চারজন ফেরেশতা থাকেন। তন্মধ্যে দুজন ফেরেশতা যারা আপনাকে রক্ষা করেন এবং দুজন যারা আপনার দুই কাঁধে থেকে আপনার কর্মের রেকর্ড তৈরী করেন। আর শুধুমাত্র একজন শয়তান থাকে যে আপনাকে প্রলোভন দেখায়, ওয়াসওয়াসা প্রদান করে।

এছাড়া পরবর্তীতে আপনার ভালো বা মন্দ কর্মের মাধ্যমে,পরিবেশের উপর নির্ভর করে শয়তান/ ফেরেশতা নিযুক্ত হয়। কিন্তু মূলত প্রতিটি মানুষের সাথে আনুপাতিক হারে চারজন ফেরেশতা থাকেন।

এখন যদি আমরা ভাবি প্রহরী ফেরেশতা,তাদের কাজ কী?
আমাদের জীবনে তাদের ভূমিকা আসলে কতটুকু?

প্রথমত, তারা আল্লাহ্‌র নির্দেশের কারণে আপনাকে হেফাযত করে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কথা গোপন করতে কিংবা প্রকাশ করতে চায় এবং যে ব্যক্তি চলাফেরাকে রাতের অন্ধকারে ঢেকে রাখতে চায় অথবা প্রকাশ্য সড়কে ঘুরাফেরা করে- এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের দল নিযুক্ত রয়েছে। তার সম্মুখে ও পশ্চাদ্দিক থেকে তাকে ঘিরে রাখে। তাদের কাজ ও দায়িত্ব পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তারা একের পর এক আগমন করে।

রাতে তাদের জন্য কিছু পাহারাদার রয়েছে, যেমন রয়েছে দিনে। তারা তাকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে হেফাযত করে মুজাহিদ(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“ঐ ফেরেশতারা আপনাকে রক্ষা করে হিংস্র পশু , জন্তু জানোয়ার কিংবা এমন ব্যক্তি হতে যে আপনার ক্ষতি করতে চায় তার থেকে। এমনকি আপনার কানে প্রবেশ করতে থাকা ছোট্ট পিঁপড়া থেকেও যাকে আপনার ক্ষতি করতে হুকুম করা হয়নি।”

আপনার জন্য নিযুক্ত থাকা এই দু’জন ফেরেশতা আপনাকে রক্ষা করতে সেসব ক্ষতিকর যে কোনো কিছুকে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) যখন জানতে পারলেন মুরাদ সম্প্রদায় তার ক্ষতি করার পরিকল্পনা করছে তখন তিনি বলেন,

“তারা আমার ক্ষতি ততক্ষণ পর্যন্ত করতে পারবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা হুকুম করেন। কারণ আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য দুজন প্রহরী নিযুক্ত করে রেখেছেন। আর কেবলমাত্র তখনি একজন আঘাতপ্রাপ্ত হবে যখন আল্লাহ প্রহরী ফেরেশতাদ্বয়কে তাদের কাজ করতে নিষেধ করবেন।”
[সূরা আল আনাম-৬১]

এছাড়াও ইবনে আব্বাস(রা:) এসব ফেরেশতা সম্পর্কে বলেন,
“তবে কোন মানুষের তাকদীর লিখিত কোনো বিপদাপদে জড়িত হওয়ার সময় ফেরেশতারা সেখান থেকে সরে যায়।”
[ হাজারঃফাতহুল বারী ৮/৩৭২]

এখন আপনি যদি চিন্তার সাগরে একটুখানি ডুব দেন তাহলেই দেখবেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামকে সময়ে সময়ে নিরাপত্তা দান করার জন্য জিবরাইল (আ:) দুনিয়াতে এসেছেন কিংবা বদরের যুদ্ধের কথাই ভেবে দেখুন!

মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য শত শত ফেরেশতাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। এমনকি সে মুহূর্তে মুসলিমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছিলেন কিভাবে তাদের শত্রুদের ঘোড়া থেকে ফেলে দেয়া হচ্ছে, অনেকের শরীরে চাবুকাঘাতের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। মুসলিমরা শুধু দেখছিলেন অদৃশ্য কিছু তাদেরকে রক্ষা করছে। এছাড়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“শেষ যামানায় যখন দাজ্জাল মদিনার গেট দিয়ে প্রবেশ করতে চাবে সে মুহূর্তেও ফেরেশতারা মদিনার গেট চারদিক থেকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং তাকে বাঁধা দিবে।”
[সহীহ বুখারি-১৮৮১]

আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকাই এবং চিন্তা করি যেমনটা ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন যে, দুজন ফেরেশতা আছেন যারা আমাদের সামনে এবং পেছনে থেকে আমাদের রক্ষা করছেন। মানুষ ভ্রূণ আকারে মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থা থেকে আরম্ভ করে মানব অস্তিত্বের সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফেরেশতারা তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।

মাতৃগর্ভে মানুষের উন্মেষক্রিয়া, এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় উন্নীত করা, আকৃতি দান, তিন তবক আঁধারের অভ্যন্তরে তাদের সুরক্ষা দেয়া, তার রিযিক লিপিবদ্ধ করা, বয়স লিপিবদ্ধ করা, তার সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা, সকল অবস্থায় তার সঙ্গদান, তার কথা ও কাজ হিসেব করা, তার জীবনকে হিফাযত করা, মৃত্যুর সময় তার রূহ কব্জা করা এবং তা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর তাআলার সামনে পেশ করা, তাকে বারযাখি জীবনপর্ব ও পরবর্তী জীবনে শাস্তি প্রদান ও নিয়ামত ভোগ করানো, নিয়ামত ও আযাবের মাধ্যমসমূহ তৈরি করা- আল্লাহর তাআলার নির্দেশে এসব কাজের দায়িত্বে ফেরেশতারাই নিয়োজিত।

সময়ের সাথে সাথে যখন আপনি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকেন সেসময় ফেরেশতারা কেবলমাত্র আপনার রূহকে আরেক দল ফেরেশতার কাছে হস্তান্তর করেন।
যারা আপনাকে নিয়ে যায় হয়তো জান্নাতের দিকে কিংবা জাহান্নামের দিকে।

মূলঃ ওমর সুলাইমান

লিখেছেন

Picture of কারিশমা আনান

কারিশমা আনান

নারী আড়ালেই সুন্দর। যদি সে বইও প্রকাশ করে ফেলে তবুও আড়ালেই থাকুক।

জানানোর মতন, পরিচয় দেবার মতন কোনো পরিচয় নেই। আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি, আমার নবী ﷺ এর উম্মতের একজন। এর বেশি পরিচয় নেই, দিতেও ইচ্ছুক না

লেখকের সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

নারী আড়ালেই সুন্দর। যদি সে বইও প্রকাশ করে ফেলে তবুও আড়ালেই থাকুক। জানানোর মতন, পরিচয় দেবার মতন কোনো পরিচয় নেই। আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি, আমার নবী ﷺ এর উম্মতের একজন। এর বেশি পরিচয় নেই, দিতেও ইচ্ছুক না

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture