Q/AAbdullahil Hadi

কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি যিয়ারতের দুআ

কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি, যিয়ারতের দুআ এবং এ ক্ষেত্রে বিদআত। কবর যিয়ারতের সুন্নত সম্মত নিয়ম হল:

১) মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্বরণ করার নিয়তে করব যিয়ারত করতে যাওয়া: আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে,

زَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ ، ثُمَّ قَالَ : “ اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِي ، وَاسْتَأْذَنْتُهُ أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথে যে সাহাবীগণ ছিলেন তারাও কাঁদলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “আমি আমার মায়ের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে সে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। তবে আমি মায়ের কবর যিয়ারতের জন্যে আবেদন জানালে তিনি তা মঞ্জুর করেন। অতএব, তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। ”
[সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬, মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, অধ্যায়: কিতাবুল জানায়েয, অনুচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করা। হা/১৪৩০]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, أَلا فَزُورُوهَا ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ
“সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা এতে আখিরাতের কথা স্বরণ হয়।”

২) কবর যিয়ারতের দুয়া পাঠ করা: বুরাইদা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ কবর যিয়ারত করতে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এই দুয়াটি পড়তে বলতেন:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ
“কবর গৃহের হে মুমিন-মুসলিম অধিবাসীগণ,আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ চাইলে আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব। আমি আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা কামনা করছি। ”
[সহীহ মুসলিম,অধ্যায়ঃ গোরস্থানে প্রবেশকালে কী বলতে হয়? হাদীস নং ১৬২০]

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কবর যিয়ারতের দুয়া হিসেবে আমাদের সমাজে একটি দুয়া ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। সেটি হল,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
“হে কবরবাসীগণ,তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদেরকে এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে চলে গেছ। আমরা তোমাদের অনুগামী।” (তিরমিযী) কিন্তু এ হাদীসটি সনদগতভাবে দূর্বল-যেমনটি ইমাম আলবানী রাহ. যঈফ তিরমিযীতে উল্লেখ করেছেন। তাই সেটি না পড়ে পূর্বোল্লিখিত সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে সহীহ সনদে যে দুয়াগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়ার চেষ্টা করা উচিৎ।

৩. মৃতদের গুনাহ-খাতা ও ভুলত্রুটি মোচনের জন্য আল্লাহর নিকট দুয়া করা: কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মৃতদের জন্য দুয়া শিখিয়েছেন। তিনি বলেন:

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
“হে আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে এবং আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করে দাও যারা ঈমানের সাথে আমাদের আগে (দুনিয়া) থেকে চলে গেছে। ”
[সূরা হাশর: ৫৯]

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
“ক্ষমা প্রার্থনা কর নিজের জন্য এবং মুমিনদের জন্য। ”
[সূরা মুহাম্মাদ: ৪৭]

সুনানে আবূ দাঊদে বর্ণিত হয়েছে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাফন ক্রিয়া শেষ করে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলতেন,
اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ التَّثْبِيتَ فَإِنَّهُ الآنَ يُسْأَلُ
“তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও। দুয়া কর যেন সে স্থির থাকতে পারে। কারণ, তাকে এখনই প্রশ্ন করা হবে।”
[সুনান আবূ দাঊদ,অধ্যায়ঃ কবরের নিকট মাইয়্যেতের জন্য দুয়া-এস্তিগফার করা। হাদীস নং ২৮০৪ ৯ম খণ্ড ২৪ পৃষ্ঠা,সহীহ আবু দাঊদ, আলবানী।]

মোটকথা, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুয়া সমূহ পাঠ করার পাশাপাশি নিজের ভাষায় যতখুশি দুআ করতে হবে। পিতামতার জন্য সন্তানের দুয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর ইনশাআল্লাহ।

মৃতদের জন্য হাত তুলে দুয়া করা

দুয়া করার ক্ষেত্রে হাত তুলে দুয়া করা জায়েয রয়েছে। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَارَ القُبُوْرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا لِأَهْلِهَا
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকী গোরস্থান যিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দুহাত তুলে দুয়া করলেন।”
[সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায় হা/৯৭৪]

মৃতদের জন্য সম্মিলিতভাবে দুয়া করার বিধান

তবে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার ব্যাপারে দলীল নাই। তাই অনেক আলেম কবর যিয়ারত করার সময় একজন দুয়া করবে আর বাকি সবাই ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবে এভাবে সম্মিলিত দুয়াকে বিদয়াত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির [সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি] ফতোয়া হল,
“দুয়া একটি ইবাদত। আর ইবাদত দলীলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং আল্লাহর বিধানের বাইরে কারও জন্য ইবাদত করা জায়েজ নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এটি প্রমাণিত নয় যে, তিনি জানাযা শেষ করে সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুয়া করেছেন। এ ক্ষেত্রে যে জিনিসটি প্রমাণিত তা হল, মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া সম্পন্ন হলে তিনি সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলতেন, “তোমাদের ভাইকে এখনই প্রশ্ন করা হবে। অত:এব দুয়া কর যেন সে (প্রশ্নোত্তরের সময়) দৃঢ় থাকতে পারে।”

তাহলে এ থেকে প্রমাণিত হল যে, জানাযার সালাত শেষ করে সম্মিলিতভাবে দুয়া করা জায়েয নয় এবং এটি একটি বিদআত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture