Writing

গুরাবা কারা?

গুরাবা কারা?
দ্বীনের রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরার দরুন নিজের পরিবার-পরিজন, সমাজ-রাষ্ট্রসহ সবার কাছে অপাংক্তেয় হয় যারা, ইসলামের পরিভাষায় তাদেরকেই বলা হয় গুরাবা। (শায়খ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ)
গুরাবা হচ্ছে অপরিচিত,দ্বীন পালনের কারনে যারা অপরিচিত হয়ে গেছে। আর বাংলাতে বললে বুঝি গরিব, মিসকিন,অসহায়। গুরাবা হচ্ছে আমাদের সমাজেরই মানুষ, সমাজে থেকেও যেন তারা আজ সমাজের কেউ নয়।

সমাজের সর্বত্রে যেখানে ফিতনার ছড়াছড়ি। দ্বীন বিমুখতা, গুনাহর সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া, আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করা, নফসের অনুসরণ করা, ক্ষমতার বাহাদুরি করা লোকের অভাব নেই সেখানে একদল লোক যারা কুরআন-সুন্নাহকে আকড়ে ধরেছে,দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে,আল্লাহ ও তার রাসূলকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছে। সমাজের এত এত মানুষের ভিড়ে এরাই মূলত গুরাবা।

এরাই হল সেই সব গুরাবা যাদের কথা হাদীসে এসেছে-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় পদযাত্রা শুরু করেছে আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সুসংবাদ অপরিচিত ব্যক্তিদের জন্য। সুসংবাদ গুরাবাদের জন্য। সাহাবায়েকেরাম রাঃ জিজ্ঞাস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্!(ﷺ) গুরাবা কারা?
রাসূল(ﷺ) বললেন, গুরাবা হলেন ঐ সমস্ত লোক, মানুষেরা গোমরাহ হলে যারা তাদের সংশোধন করবে।
(মুসনাদে আহমাদ ইবনু হাম্বল:৩৭৭৫,৮৮১২)।

অন্য আরেকটি হাদিসে গুরাবা সমন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন,
যারা আমার সুন্নাহকে জীবিত করে এবং তা মানুষের কাছে শিক্ষা দেয়।
(মুসনাদুস শিহাব:১০৫২)

ইসলাম এর যাত্রা শুরু হয়েছিল একদল গুরাবা দ্বারা যখন তারা দ্বীন গ্রহণ করেছিল তাদের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। দ্বীন কবুলকারী মানুষকে যেন সমাজের চোখে কেমন জানি আলাদা কোন মানুষ হিসেবে বিবেচিত করা হতো এমনকি সমাজ হতেও বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছিল। আর তাদের হাত ধরেই ইসলামের গণজাগরণ ঘটে।
রাসূল(ﷺ) এর ভবিষ্যৎবাণী করেছেন ইসলাম পরবর্তীতে আবারো সেদিকেই ফিরে যাবে। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে অনেকটা তেমনটাই আঁচ করা যায়-

স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি-অফিস সব ক্ষেত্রে বহু মানুষের ভিড়ে মাত্র গুটি কয়েকজন দাড়ি রেখেছে তাহলে এত মানুষের ভিড়ে তারাই হলেন গুরাবা।
অশ্লীলতার এই যুগে নারীরা যখন নিজেকে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন রূপে প্রকাশ করতে ব্যস্ত সেখানে অনেকেই ব্যস্ত নিজেকে পর্দার মধ্যে আবৃত রাখতে এরাই হলেন গুরাবা।
যেখানে আজকাল দুই তিনটা গফ/বফ ছাড়া চলেই না সেখানে কেউ কেউ নজরের হেফাজত করছেন। এর জন্য অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে তাহলে আপনিই হলেন গুরাবা।

সবাই যখন সুদ-ঘুষে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে নিজেকে বিলাসীতায় নিমজ্জিত রেখেছে সেখানে কেউ কেউ সৎ ভাবে সাদা-সিদে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে তাহলে তিনিই হচ্ছেন গুরাবা।

এরকম অনেক অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। আমাদের সমাজে কোন মুসলিম তরুন যদি ইসলাম পালন করে, দ্বীনের উপর চলার চেষ্টা করে তাহলে তাকে নিয়ে উপহাস করা হয়, তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়। সে তিরস্কার ও ভৎসনার পাত্রে পরিনত হয়। পরিস্থিতি আজ এমন হয়েছে, দ্বীন পালনকারী ব্যক্তি তার সাথীদের মাঝে গুরাবা, দ্বীন পালনকারী ব্যক্তি তার আত্মীয়দের কাছে গুরাবা, দ্বীন পালনকারী ব্যক্তি তার পরিবারের মাঝে গুরাবা।

এজন্যই রাসূল সাঃ ভবিষ্যতবাণী করছেন,
এমন এক সময় আসবে যখন দ্বীনের উপর অটল থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার ধারন করার মত কষ্টকর হবে।

তাই আসুন নিজেকে গুছিয়ে ফেলি। সমাজের দৃষ্টিকোনে আবদ্ধ না থেকে ইসলামের বিশালতা ধারণ করি। দ্বীন পালন করতে গিয়ে আপনি ভিনগ্রহের প্রাণীর মতো হয়ে যাবেন,অপরিচিত হয়ে যাবেন, অনেকে অনেক কটু কথা বলবে কিন্তু কখনো ঝড়ে পড়া যাবে না। যদি আপনি এমনটি করতে পারেন তাহলে রাসূল(ﷺ) এর সুসংবাদের অপেক্ষায় থাকুন। হয়তো সেই সুসংবাদ জান্নাতের যেখানে কখনো মন খারাপ হবে না।

লিখেছেন

দুনিয়া খেলতামাশার জায়গা না,
জান্নাত অর্জনের জায়গা হলো দুনিয়া💙
কুরআন ও সুন্নাহ ই একমাত্র পথ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture