আল্লাহকে যিশু ঈশ্বর ভগবান বলে ডাকা যাবে কি

ভগবান, আল্লাহ, যিশু এরা সবাই কি এক? আমরা শুধু ভিন্ন নামে ডাকি মাত্র? ‘রায়হান, রায়হান, ও রায়হান সাব’ বলে ডাকতে ডাকতে লোকটির পেছন পেছন হাঁটছে মেরাজ। লোকটি ডাক শুনেও কোন ভাবেই সাড়া দিচ্ছে না। কৌতূহলী দৃষ্টিতে একবার পেছন ফিরে তাকিয়েছিলো, কিন্তু কোন সাড়া দেয়নি।

‘ও রায়হান ভাই।’
‘নেভি ব্লু টি শার্ট, কালো জুতা পড়া রায়হান সাব, আপনাকে ডাকতেছি তো।’
এবার হুট করে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল লোকটি। তারপর একটু পেছন হেঁটে মেরাজের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো
‘ভাই, আপনি কি আমাকে ডাকলেন?’
‘হ্যাঁ ভাই। সেই কখন থেকে আপনার নাম ধরে রায়হান সাব, রায়হান করে চিল্লায়ে ডেকে যাচ্ছি। আপনি তো শুনেও সাড়া দিচ্ছেন নাহ।’

‘দুঃখিত! আপনি এর আগেও আমাকে মনে হয় কয়েকদিন এভাবে পেছন থেকে ডেকেছেন কিন্তু আমি সাড়া দিই নি। আসলে আপনি যে নামে ডাকলেন সেটা আমার নাম নয়।’ জবাব দেয় লোকটি।

‘আপনি আমাকে চিনেন না হয়তো। আমার ছোট ভাই আলিফ আপনার কলেজের ছাত্র।’ তাই ভাবলাম একটু পরিচিত হ‌ই, আমার নাম মেরাজ।
‘ও আচ্ছা, আপনি আলিফের ভাই। যাইহোক আমার নাম কিন্তু রায়হান নয়, আমি প্রফেসর আব্দুর রহিম।’
‘আপনি এত বড় ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, অথচ আপনার আসল নামটা বেশি পুরোনো ধাঁচের ব্যাক ডেটেট। আপনার সাথে বরং রায়হান নামটা বেশ স্যুট করে, আমার কাছে ভালো লাগে।’
‘ব্যাক ডেটেট‌-ই হোক আর অন্যটা বেশি স্যুট করুক, আপনি আমাকে আসল নামে ডাকলেই আমি বেশি খুশি হবো।’ বলতে বলতে হাঁটতে শুরু করে প্রফেসর।

‘আরে রাগ করতেছেন কেন? রায়হান, রফিক কিংবা রাজন, যে নামেই আপনাকে ডাকিনা কেন আমি মূলত আপনাকেই বোঝাচ্ছি সুতরাং নাম কি এখানে কোন ফ্যাক্ট!’
‘হ্যাঁ অবশ্যই ফ্যাক্ট। নাম যেমন‌ই হোক সেটা আমার পরিচয় এবং পছন্দের, আপনি আপনার ইচ্ছামত নামে ডাকলেই তো আর আমি সাড়া দেবো না বরং আরো বিরক্ত হবো।’ আমি আসি ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে- ও মাই গড, দশটার বেশি বেজে গিয়েছে।

আচ্ছা ঠিক আছে আর একটা মিনিটের কথাটুকু শুনে যান-
রহিমের জায়গায় রায়হান বলে ডেকেছি এটুকুতেই আপনি সাড়া দিচ্ছেন না, ভিন্ন নামে ডাকবো বলেছি এতে আপনি বিরক্ত‌ও হয়ে গিয়েছেন। রহিম নাম যেমনটিই হোক ওটাই আপনার পরিচয় আপনার পছন্দের। অথচ ক্লাসে ছোট ভাইদের শেখাচ্ছেন যিশু, ভগবান, আল্লাহ সবাই এক, আমরা ভিন্ন নামে ডাকি মাত্র।

নিজের বেলায় তো ঠিকই বুঝলেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তার বেলায় কেন ভিন্ন। একটু নাম পরিবর্তন করলে ডাকলে আপনি নিজেই যেখানে সাড়া দেন না, সেখানে সৃষ্টিকর্তাকে ইচ্ছেমতো কোন একটা নামে ডাকলে তিনি কেন সাড়া দেবেন।
‘আরে ভাই, মানুষ তো আমি একা না, কোটি মানুষ আছে তাদের এক‌ই এবং ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। আপনি ভিন্ন নামে ডাকলে আমি বুঝবো কি করে আপনি কাকে ডাকছেন? কিন্তু গড তো একজনই, তার তো আর এই সমস্যাটি নেই, তাছাড়া গডের তো অনেকগুলো নাম তাই যে নামেই ডাকেন তা সৃষ্টিকর্তাকেই বোঝাবে।’

প্রফেসর একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার নাম খালেকুজ্জামান রহিম, আপনাকে রহিম নামে ডাকলে আপনি সাড়া দেন আবার খালেক বা খালেকুজ্জামান ডাকলেও আপনি সাড়া দেন। কেন দেন? কারন এই নামগুলো আমার দেয়া নয়, এগুলো আপনার‌ই নাম। এগুলো হয়তো আপনার বাবা-মা কিংবা কেউ একজন পূর্বে থেকেই নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এখন আমার ইচ্ছেমত আমি আপনাকে যা খুশি তা চাপিয়ে দিতে পারি না।

আল্লাহ তায়ালা অবিনশ্বর, তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। স্রষ্টা তো কারো মুখাপেক্ষী নয় যে, অন্য কেউ তার নাম রেখে দেয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে। তিনি নিজেই তার নাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন আর সেসব নামে ডাকলে‌ই তিনি সাড়া দেন। আমরা ইচ্ছেকৃত একটা নাম চাপিয়ে
দিলেই সে নামে সাড়া দিতে তিনি বাধ্য না কারন তিনি স্রষ্টা, সৃষ্টি নয়।

সত্যিকারের স্রষ্টা শুধুমাত্র একজনই কিন্তু সৃষ্টিকর্তার দাবীদার অনেক। যেমন নমরুদ, ফিরাউন ছিলো স্রষ্টার দাবীদার। সামনে আরেকজন স্রষ্টা দাবীদার আসবে যার নাম দাজ্জাল।

আপনি নিজের ইচ্ছেমত নামে আসলে কাকে ডাকছেন সত্যিকারের স্রষ্টাকে নাকি ভন্ড কোন দাবিদারকে তা অস্পষ্ট হয়ে যায়। ইচ্ছেকৃত নামে ডেকে আসলে শয়তানকে খুশি করে বেড়াচ্ছেন, কেননা যা খুশি তা করে শয়তান। মুমিন কখনো নিজের ইচ্ছেমত চলে না, মুমিন নিজের ইচ্ছেকে রবের ইচ্ছের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
ভগবান, ঈশ্বর, যিশু, ইলোহিম এগুলো আল্লাহর নাম এ কথা আল্লাহ তো কোথাও বলেনি, তো আপনি কোথায় পেলেন? এই ভ্রান্ত আকিদা আপনার ভেতর ঢুকলো কি করে?

প্রফেসর এবার যথেষ্ট রেগেমেগে দাঁড়িয়ে রাগতস্বরে বলতে শুরু করলেন-

আল্লাহ’ কথাটি ইসলামের একচেটিয়া সম্পত্তি নয় – সকল আরব অ্যাব্রাহামিক উপাসকের ঈশ্বরই ‘আল্লাহ’ হিসেবে উপাসিত হন, তেমনই নিষ্ঠাবান বহু মুসলিম অনেক সময়ই আল্লাহ কথাটি ব্যবহার করেন না। যদি সত্যি তাঁর উপর বিশ্বাস থাকে, যে কোনো নামে ডাকতে পারেন, গোলাপ কে কী নামে ডাকেন তাতে কী এসে যায় ? যদি মহান ঈশ্বর থেকেই থাকেন তিনি অতো সংকীর্ণ নন যে আল্লাহ না বলে ঈশ্বর বললে ক্ষেপে যাবেন। সন্দেহ হলে, কোরআন শরীফ দেখতে পারেন –

(সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:১১০) – আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই।

‘স্যার, আপনি এবার কুরআনকে পুঁজি করে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যাকে হজম করানোর চেষ্টা করছেন। পৃথিবীর যে কোন ভাষাতেই হোক আল্লাহ শব্দের কোন বহুবচন, কোন বিপরীত লিঙ্গ আপনি খুঁজে পাবেন না। আল্লাহ্‌ শব্দটা ছাড়া ও আরো ৯৯ টা এমন unique নাম আছে। তার যে কোন একটা ধরে ই ডাকতে পারেন, সুরা বনী-ঈসরাইলের উক্ত আয়াতে আল্লাহ সেটাই বলেছেন। কিন্তু তিনি গড, ঈশ্বর বা ভগবান বলে ডাকতে বলেননি।

আপনি যদি বাকারার ২নং আয়াতে বিশ্বাস করেন তাহলে আপনি আল্লাহকে ভিন্ন নামে ডেকে তাকে অসম্মান দেখাচ্ছেন। কেননা-

১. আল্লাহ কুরানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আদমের সাথে কথপোকথনে তিনি নিজেকে আল্লাহ বলে উল্লেখ করেছেন অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করেননি।
২. ইব্রাহিম ও নমরুদের সাথে কথপোকথনে ইব্রাহিম আ. আল্লাহ নামটি উল্লেখ করেছেন, কুর‌আনে যেভাবে ঘটনা আছে তাতে তাই বলা যায়। উল্লেখ্য এটি ছিল সুমার সভ্যতার পটভূমিতে।
৩. আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির পুর্বে ফেরেশতাদের সাথে কথপোকথনে নিজেকে আল্লাহ নামেই উল্লেখ করেছেন।

যদি তাই হয় তাহলে প্রশ্ন-
১. আল্লাহ আদম আ. এর সাথে কোন ভাষায় কথা বলেছেন। আরবী?
২. পৃথিবীর প্রথম ভাষা কি ছিল?

বিবর্তনবাদ সমর্থন করে না যে আদি মানুষের ভাষা ছিল। বিজ্ঞান মনে করে তারা ইশারায় কথা বলত। তাহলে কুরানে স্পষ্ট আছে যে আল্লাহ কথপোকথন করছিলেন। এখানে ভাষাতত্ত্বের যুক্তি খাটেনা। অতএব ভাষাবিদরা আল্লাহ শব্দের যে ব্যাখাটি দেখান তা একেবারেই মিথ্যা। কারন আল্লাহ তার বান্দাদের বিভ্রান্ত করেননা, করে শয়তান
আর এইযে আপনি কথায় কথায় গড, ও মাই গড শব্দগুলো ব্যবহার করছেন, এই গড শব্দের পেছনে কি আছে তা কি আপনি জানেন?
God…… god……..gods

বলতে পারবেন এই তিনটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য কি। ছোট হাতের জি দ্বারা যে গড লেখা হয় তা নিম্ন পর্যায়ের দেবতাদের উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ আমি যদি সেমিটিক প্যাগানদের প্রধান দেবতা এনকে সম্বোধন করতে চাই তবে আমাকে বলতে হবে God An. কিন্ত যদি আমি তার অধিভুক্ত দেবতা নানককে সম্বোধন করতে চাই তাহলে বলব god Nanok। মজার ব্যাপার হচ্ছে ছোট হাতের ও বড় হাতের উভয় গডের স্ত্রী লিংগ আছে। গ্রীক পুরানের দেবতা জিউসের স্ত্রি হেরাকে বলা হবে Goddess Hera কিন্তু প্রেমের দেবী আফ্রিদিতেকে সম্বোধন করতে আপনি বলবেন goddess Afriditte. আর যদি আমি দেবতাদের ছেলেদের সম্বোধন করতে চাই তাহলে বলব গডস কারন তাদের অনেকগুলো ছেলেকে একত্রে সম্বোধন করতে বলা হয়েছে।

শেষ কথা যদি আপনি যদি গড ব্যবহার করেন তাহলে আপনি আল্লাহকে ছোট করছেন টাইটানদের সামনে, এমন এক শব্দ যার স্ত্রীবাচক ফর্ম আছে। আল্লাহ কোন সাধারন শব্দ না যে একে ঈশ্বর বা এলোহিম বা গড দ্বারা রিপ্লেস করা যায়।

একজন জ্ঞানী মানুষ হিসেবে প্রফেসর সাহেবের এতটুকু অবশ্যই জানা থাকা উচিত —
Allah, this word is from Allah himself, God or gods or Elohim are manmade.

আল্লাহ শব্দটির বিশ্লেষণ আপনারা ইন্টারনেটে দেখলে পাবেন তবে কেউ কুর‌আনে বিশ্বাস করলে ওই যুক্তি খাটবে না। মনে রাখবেন মানুষের বড় দূর্বলতা লজিকে নির্ভর করা, কিন্তু আল্লাহ লজিক ছাড়াই চলতে পারেন।
Logics can be defeated. But not Allah.
Allah is not God, he is more than God or anything else you can imagine. Allah is Allah.

প্রফেসর সাহেব এবার ইউনিভার্সিটির বিপরীতে দিকে হাঁটা ধরলেন দেখে মেরাজ প্রশ্ন করলো-
‘কি ব্যাপার স্যার, হঠাৎ উল্টো দিকে যাচ্ছেন?’
‘আজ আর ক্লাস করাবো না।’ বলে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন প্রফেসর।

লিখেছেন

গল্প, উপন্যাসের ভীড়ে হারিয়ে প্রশ্নের বেড়াজালে ঈমান খোয়ানোর আগ মুহুর্তে সত্যের সন্ধান পাওয়া জ্ঞান পিপাসু যুবক।
মেডিকেল সায়েন্সের পড়া ক, খ, গ টুকুই আগলে রেখে বাকিটা জীবন তুলে ধরতে চান ইসলামের সৌন্দর্য্য।

Exit mobile version